যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা ‘সম্পূর্ণ সফল’। তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই দাবির সঙ্গে সবাই একমত নয়। স্যাটেলাইট ছবি দেখে কেউ কেউ বলছেন, স্থাপনা তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বটে, তবে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়নি। খোদ মার্কিন যৌথ বাহিনী প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন বলেছেন, সব বুঝতে আরও সময় প্রয়োজন। জাতিসংঘের সাবেক আণবিক অস্ত্র পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন, ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ধ্বংস হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন, মার্কিন বোমা বর্ষণের আগেই ইরান তার পরিশোধিত ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

ব্রিটিশ নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ বুরসু অজসেলিক মনে করেন, এ হামলার ফলে ইরান তার পারমাণবিক পরিকল্পনা ত্যাগ তো করবেই না, বরং তারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে, যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে মনোনিবেশ করবে। একই কথা বলেছেন মার্কিন থিঙ্কট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ রেই তাকেইস। তাঁর ধারণা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার বদলে এ হামলায় বিপদ আরও বাড়ল। ইরানের চলতি নেতৃত্ব নিজেদের ‘মুখ রক্ষার্থে’ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, এ হামলার পর কূটনীতির আর কোনো পথ খোলা নেই। এখন তারা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিতে পারে।

কিন্তু কী সেই পদক্ষেপ?

আপাতভাবে ইরানের সামনে দুটি পথ খোলা। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, প্রায় ৫০ হাজার সেনা রয়েছে। ইরান নিজে, অথবা তার কোনো স্থানীয় মিত্রদের (বা ‘প্রক্সি’র) মাধ্যমে এসব স্থাপনার ওপর হামলা করতে পারে। কিন্তু সেই হামলার অর্থ হবে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে পুরোপুরি টেনে আনা। মনে রাখা ভালো, এই যুদ্ধে ইরান একা, তার পাশে অন্য কোনো দেশ বা শক্তি নেই। রাশিয়া বা চীন মুখে যত হম্বিতম্বি করুক, অস্ত্র বা সৈন্য দিয়ে সে ইরানের পাশে দাঁড়াবে, তা একদমই অবাস্তব অলস কল্পনা। অতএব যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোমাত্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা মোটেই সুবুদ্ধির পরিচায়ক হবে না।

অবশ্য গতকাল সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে মার্কিন স্থাপনায় ইরান হামলা চালিয়েছে। যদিও কাতার বলেছে, এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এখন যুক্তরাষ্ট্র কী করে, সেটি দেখার বিষয়। সিএনএন জানিয়েছে, হামলার বিষয়ে কাতারকে আগেই সতর্ক করেছিল ইরান। আর কাতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল। অর্থাৎ পুরো বিষয়টিই ঘটেছে সকল পক্ষের জ্ঞাতসারেই।

ইরানের পক্ষে অন্য পদক্ষেপ হতে পারে তার নিয়ন্ত্রণাধীন হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এতে তেল সরবরাহে বাধা পড়বে, জ্বালানির দাম বাড়বে, বাংলাদেশের মতো বিদেশি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল দেশের জন্য বিপর্যয় নেমে আসবে। সমস্যা হলো, এর ফলে ইরান নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার জ্বালানি পণ্যের প্রধান ক্রেতা চীন ও ভারত, এই প্রণালি ব্যবহার করেই সে তেল সরবরাহ করা হয়। তার অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক, এর ফলে সংকট আরও বাড়বে।

বিকল্প অন্য আরও যে পথটি তার জন্য খোলা আছে, তা হলো ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই বলছেন, ইরানের হাতে দূরপাল্লার কৌশলগত মিসাইল তেমন মজুত নেই। স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্রুজ মিসাইল ও ধীরগতির ড্রোন তার রয়েছে বটে, কিন্তু দুই হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইসরায়েলে আঘাত হানার শক্তি তাদের নেই। অথবা সে হামলার কার্যকর ফল খুব সীমিত হবে। তবে নাশকতামূলক কাজ, তা হামাস বা হিজবুল্লাহ যাকে দিয়েই হোক, সে হয়তো করতে পারে, কিন্তু সেসব কার্যকলাপের ফল কী, তা তো আমরা হামাসের চলতি অবস্থা থেকেই বুঝতে পারি।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল তার সামরিক হামলার একটি লক্ষ্য ইরানে সরকার পরিবর্তনের (রেজিম চেঞ্জ) কথা বলা শুরু করেছে। ট্রাম্প নিজে প্রথমে সে কথায় জোর দেননি, কিন্তু গত রোববার তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে কিছুটা পরিহাস করেই বলেছেন, ইরান যদি না বদলায় তাহলে ‘রেজিম চেঞ্জ’ খারাপ হবে না। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভালি নাসের, যিনি নিজে ইরানি, মনে করেন, মার্কিন বোমার আঘাতে ইরান কাবু হয়েছে ঠিক, কিন্তু সে মুখ থুবড়ে পড়েছে, এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর ধারণা, এই আক্রমণ ইরানের কট্টরপন্থীদের—তাঁর ভাষায় হার্ডলাইনার্সের হাত শক্ত করবে। সরকার পরিবর্তন পরিকল্পনার বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, সিআইএ ১৯৫৩ সালে সেখানে একবার সরকার পরিবর্তনে পেছন থেকে ঘুঁটি চেলেছিল, কিন্তু তার ফলে সে দেশের জাতীয়তাবাদীদের হাতকেই শক্ত করা হয়েছিল। সে ঘটনার দুই দশক পরে উত্থান ঘটে ইসলামি বিপ্লবের। রেজিম চেঞ্জের কথা বলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ইতিহাস থেকে সে শিক্ষা নেওয়া।

ভালি নাসের আরও একটি কথা বলেছেন। পারমাণবিক অস্ত্রকে এত দিন ‘ডেটারেন্স’ বা প্রতিরোধমূলক একটি ব্যবস্থা বলে ভাবা হয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রে তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। তার একটা কারণ, অস্ত্র নির্মাণে খুব লম্বা সময় নিয়ে ফেলেছে সে। তা ছাড়া আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন, মারণাস্ত্র হিসেবে পারমাণবিক শক্তি অর্জন ইসলামে নিষিদ্ধ। ভালি নাসেরের ভয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হাতে ইরানকে নাজেহাল হতে দেখে আরব ও উপসাগরিক দেশগুলো যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহে উঠেপড়ে লাগতে পারে। ফলে পৃথিবী আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে।

মার্কিন হামলার জবাবে ইরান কী করবে, সে প্রশ্ন যেমন জরুরি, তেমনি ট্রাম্প কী করবেন, সেটাও সমান জরুরি। তাঁর কাছ থেকে আমরা বিপরীতমুখী বক্তব্য পেয়েছি। একদিকে তিনি বলছেন, আর হামলা নয়। অন্যদিকে ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’–এর ইঙ্গিত করেও বক্তব্য দিয়েছেন। ট্রাম্প বরাবর নিজেকে যুদ্ধবিরোধী বলে হাজির করেছেন, মধ্যপ্রাচ্য অথবা অন্যত্র ‘অনিঃশেষ’ যুদ্ধের বিরুদ্ধে বুশ-ওবামা-বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সেই তিনি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর রক্ষণশীল ‘মাগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সমর্থকগোষ্ঠী অসন্তুষ্ট। টাকার কার্লসনের মতো প্রভাবশালী পডকাস্টার রাখঢাক ছাড়াই নিজের আপত্তির কথা বলেছেন। অন্ততপক্ষে একজন রিপাবলিকান সিনেটর কঠোর ভাষায় এই হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছেন। তাঁদের কথা উপেক্ষা করা ট্রাম্পের জন্য সহজ হবে না। কোনো কোনো আশাবাদীর মতে, ইরান যদি প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো চলতি লড়াই—অন্ততপক্ষে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ—স্তিমিত হয়ে আসবে।

এ মুহূর্তে খুব জরুরি হচ্ছে হামলা ও পাল্টা হামলার ব্যাপারে সব পক্ষের বক্তব্যে রাশ টেনে ধরা। ট্রাম্প নিজে কূটনীতিকে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স প্রকাশ্যেই ইরানকে ‘আলোচনার টেবিলে’ ফিরতে উৎসাহ দিয়েছেন। এসব কথা কতটা আন্তরিক, কতটা লোকদেখানো বলা মুশকিল। আশার কথা একটাই, আর তা হলো ইরান এখন পর্যন্ত নাটকীয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যা সে বলছে বা করছে, বিশেষজ্ঞেরা তাকে ‘ক্যালিব্রেটেড’ বা পরিমিত বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সে আলোচনায় ফিরতে পারে, এমন ইঙ্গিতও তেহরান দিয়েছে।

বলা যায়, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি একজোট হয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে ও আরব দেশগুলো তাতে জোর সমর্থন দেয়, তাহলে একটা সমাধানের পথ হয়তো মিলে যাবে। আমরা জানি, সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো, যারা এই যুদ্ধ সম্প্রসারিত হলে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে, তারা বিকল্প পথে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। সম্মানজনক কোনো ‘এক্সিট রুট’ বা বিকল্প নিষ্ক্রমণ পথ পাওয়া গেলে ইরানও তাতে হয়তো সায় দেবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল পদক ষ প কর ছ ন বল ছ ন ক টন ত র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক থেকে কত রাজস্ব পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কী হবে সেই অর্থ দিয়ে

এমন কোনো দিন নেই, যেদিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্ব করে বলেন না—তিনি প্রায় সব ধরনের আমদানি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করছে।

প্রচুর অর্থ আসছে—দেশের ইতিহাসে এত অর্থ আগে কখনো আসেনি, শুক্রবার শুল্ক রাজস্বের প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ভুল বলছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই মাসে মার্কিন সরকার প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে; গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় যা ২৪২ শতাংশ বেশি।

এপ্রিল মাসে প্রায় সব ধরনের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি পরবর্তী মাসগুলোতে আরও কিছু উচ্চ শুল্ক কার্যকর হয়। বাস্তবতা হলো, তখন থেকে জুলাই পর্যন্ত সরকার মোট ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে—গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। প্রশ্ন হলো—এই বিপুল অর্থ সরকার কোথায় ব্যয় করছে?

ট্রাম্প দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। প্রথমত, সরকারের লাখ লাখ কোটি ডলারের ঋণ শোধ করা ও আমেরিকানদের হাতে ‘ট্যারিফ রিবেট চেক’ বা শুল্কছাড়ের চেক (শুল্ক রাজস্ব সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া) তুলে দেওয়া।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি যা করছেন তার মূল উদ্দেশ্য ঋণ শোধ করা; অঙ্কের দিক থেকে তা বেশ বড়ই হবে। কিন্তু তাঁর মনে হয়, এত বেশি অর্থ আসছে যে মানুষকে হয়তো লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত দুটোর কোনোটি-ই ঘটেনি। অনেক আমেরিকানের মনে হতে পারে, বিদেশি পণ্য আমদানির প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে গিয়ে যে অর্থ মূলত মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেট থেকে বেরোচ্ছে, সেই শত শত কোটি ডলার শুল্ক রাজস্বের গায়ে হয়তো শুধু ধুলো জমছে।

সরকার যে রাজস্ব সংগ্রহ করে—তা হোক সাধারণ কর থেকে কিংবা শুল্ক থেকে—সবই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের নিয়ন্ত্রিত সাধারণ তহবিলে জমা হয়। তারা এই তহবিলকে বলে ‘আমেরিকার চেকবই’, কারণ, সেখান থেকেই সরকারের খরচ মেটানো হয়, যেমন কর ফেরত দেওয়া।

যখন রাজস্বের পরিমাণ সরকারের খরচের চেয়ে কম হয়, অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি দেখা দেয়, তখন সরকার ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করে। বর্তমান সরকারের ওপর মোট ঋণের পরিমাণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। এই ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলছেন, এই ঋণের বোঝা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিচ্ছে।

যেভাবে একজন সাধারণ আমেরিকান ঋণ নিলে সুদ দেন, সেভাবে সরকারকেও ঋণের ওপর সুদ দিতে হয়। যত বেশি ঋণ, তত বেশি সুদ। ফলে মহাসড়ক উন্নয়ন বা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার মতেো অর্থে টান পড়ে।

বর্তমান অর্থবছরে মার্কিন সরকারের ১ দশশিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এই শুল্ক রাজস্ব যথেষ্ট নয়। তবে এটাও সত্য, শুল্ক বাবদ প্রাপ্ত অর্থের কারণে ঘাটতির অঙ্ক কিছুটা কমেছে। অর্থাৎ শুল্ক রাজস্ব না থাকলে যতটা ঋণ নিতে হতো, এখন সরকারকে ততটা নিতে হচ্ছে না।

ডয়েচে ব্যাংকের সিনিয়র মার্কিন অর্থনীতিবিদ ব্রেট রায়ান বলেন, এই অর্থের আরও ভালো ব্যবহারের সুযোগ আছে, বিষয়টি এমন নয়। বাজেট ল্যাব অ্যাট ইয়েলের পরিচালক ও বাইডেনের হোয়াইট হাউসের সাবেক অর্থনীতিবিদ আর্নি টেডেস্কির মতে, যদি কংগ্রেস ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে শুল্ক রাজস্ব ‘রিবেট চেক’ আকারে জনগণকে ফেরত দেয়, তাহলে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাওলি বিল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, এটা এখন অনুসরণ করার মতো নীতি নয়, বরং এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে সিএনএনের প্রশ্নের জবাব দেয়নি হোয়াইট হাউস।

বুমেরাং হতে পারে

কাগজে-কলমে শুল্ক রাজস্বের কল্যাণে সরকারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলেও এর প্রভাব সব সময় ভালো হয় না। বেশির ভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখনো বাড়তি খরচ নিজেরা বহন করছে, দাম বাড়াচ্ছে না। সব ব্যবসার ক্ষেত্রে তা আবার প্রযোজ্য নয়। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, খেলনা, ভোক্তা ইলেকট্রনিকসের দাম বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিবিষয়ক মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তা দেখা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান, যেমন ওয়ালমার্ট ও প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, আরও দাম বৃদ্ধির সতর্কতা দিয়েছে।

শুল্কসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে। ফলে চাকরির সুযোগ কমছে—এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে বেশ কিছু অর্থনৈতিক জরিপ।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ‘শুল্ক মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ ইয়েল বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে এ বছর ও আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আধা শতাংশ কমে যাবে।

এতে শুল্ক রাজস্বের একটি অংশ হারিয়ে যাবে; কেননা, যদি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম গতিতে হয়, তাহলে শুল্ক রাজস্ব থাকলেও আয়কর ও বেতন কর থেকে পাওয়া অর্থ কমে যাবে।

ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে। তাঁদের যুক্তি, সদ্য কার্যকর হওয়া বিশাল কর ছাড় ও ব্যয় বিলের সঙ্গে শুল্ক রাজস্ব মিলিয়ে মার্কিন অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সময়ের পরিক্রমায় তা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ