ইরানের সঙ্গে সংঘাত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে
Published: 24th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা ‘সম্পূর্ণ সফল’। তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই দাবির সঙ্গে সবাই একমত নয়। স্যাটেলাইট ছবি দেখে কেউ কেউ বলছেন, স্থাপনা তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বটে, তবে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়নি। খোদ মার্কিন যৌথ বাহিনী প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন বলেছেন, সব বুঝতে আরও সময় প্রয়োজন। জাতিসংঘের সাবেক আণবিক অস্ত্র পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন, ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ধ্বংস হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন, মার্কিন বোমা বর্ষণের আগেই ইরান তার পরিশোধিত ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
ব্রিটিশ নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ বুরসু অজসেলিক মনে করেন, এ হামলার ফলে ইরান তার পারমাণবিক পরিকল্পনা ত্যাগ তো করবেই না, বরং তারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে, যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে মনোনিবেশ করবে। একই কথা বলেছেন মার্কিন থিঙ্কট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ রেই তাকেইস। তাঁর ধারণা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার বদলে এ হামলায় বিপদ আরও বাড়ল। ইরানের চলতি নেতৃত্ব নিজেদের ‘মুখ রক্ষার্থে’ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, এ হামলার পর কূটনীতির আর কোনো পথ খোলা নেই। এখন তারা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিতে পারে।
কিন্তু কী সেই পদক্ষেপ?আপাতভাবে ইরানের সামনে দুটি পথ খোলা। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, প্রায় ৫০ হাজার সেনা রয়েছে। ইরান নিজে, অথবা তার কোনো স্থানীয় মিত্রদের (বা ‘প্রক্সি’র) মাধ্যমে এসব স্থাপনার ওপর হামলা করতে পারে। কিন্তু সেই হামলার অর্থ হবে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে পুরোপুরি টেনে আনা। মনে রাখা ভালো, এই যুদ্ধে ইরান একা, তার পাশে অন্য কোনো দেশ বা শক্তি নেই। রাশিয়া বা চীন মুখে যত হম্বিতম্বি করুক, অস্ত্র বা সৈন্য দিয়ে সে ইরানের পাশে দাঁড়াবে, তা একদমই অবাস্তব অলস কল্পনা। অতএব যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোমাত্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা মোটেই সুবুদ্ধির পরিচায়ক হবে না।
অবশ্য গতকাল সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে মার্কিন স্থাপনায় ইরান হামলা চালিয়েছে। যদিও কাতার বলেছে, এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এখন যুক্তরাষ্ট্র কী করে, সেটি দেখার বিষয়। সিএনএন জানিয়েছে, হামলার বিষয়ে কাতারকে আগেই সতর্ক করেছিল ইরান। আর কাতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল। অর্থাৎ পুরো বিষয়টিই ঘটেছে সকল পক্ষের জ্ঞাতসারেই।
ইরানের পক্ষে অন্য পদক্ষেপ হতে পারে তার নিয়ন্ত্রণাধীন হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এতে তেল সরবরাহে বাধা পড়বে, জ্বালানির দাম বাড়বে, বাংলাদেশের মতো বিদেশি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল দেশের জন্য বিপর্যয় নেমে আসবে। সমস্যা হলো, এর ফলে ইরান নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার জ্বালানি পণ্যের প্রধান ক্রেতা চীন ও ভারত, এই প্রণালি ব্যবহার করেই সে তেল সরবরাহ করা হয়। তার অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক, এর ফলে সংকট আরও বাড়বে।
বিকল্প অন্য আরও যে পথটি তার জন্য খোলা আছে, তা হলো ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই বলছেন, ইরানের হাতে দূরপাল্লার কৌশলগত মিসাইল তেমন মজুত নেই। স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্রুজ মিসাইল ও ধীরগতির ড্রোন তার রয়েছে বটে, কিন্তু দুই হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইসরায়েলে আঘাত হানার শক্তি তাদের নেই। অথবা সে হামলার কার্যকর ফল খুব সীমিত হবে। তবে নাশকতামূলক কাজ, তা হামাস বা হিজবুল্লাহ যাকে দিয়েই হোক, সে হয়তো করতে পারে, কিন্তু সেসব কার্যকলাপের ফল কী, তা তো আমরা হামাসের চলতি অবস্থা থেকেই বুঝতে পারি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল তার সামরিক হামলার একটি লক্ষ্য ইরানে সরকার পরিবর্তনের (রেজিম চেঞ্জ) কথা বলা শুরু করেছে। ট্রাম্প নিজে প্রথমে সে কথায় জোর দেননি, কিন্তু গত রোববার তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে কিছুটা পরিহাস করেই বলেছেন, ইরান যদি না বদলায় তাহলে ‘রেজিম চেঞ্জ’ খারাপ হবে না। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভালি নাসের, যিনি নিজে ইরানি, মনে করেন, মার্কিন বোমার আঘাতে ইরান কাবু হয়েছে ঠিক, কিন্তু সে মুখ থুবড়ে পড়েছে, এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর ধারণা, এই আক্রমণ ইরানের কট্টরপন্থীদের—তাঁর ভাষায় হার্ডলাইনার্সের হাত শক্ত করবে। সরকার পরিবর্তন পরিকল্পনার বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, সিআইএ ১৯৫৩ সালে সেখানে একবার সরকার পরিবর্তনে পেছন থেকে ঘুঁটি চেলেছিল, কিন্তু তার ফলে সে দেশের জাতীয়তাবাদীদের হাতকেই শক্ত করা হয়েছিল। সে ঘটনার দুই দশক পরে উত্থান ঘটে ইসলামি বিপ্লবের। রেজিম চেঞ্জের কথা বলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ইতিহাস থেকে সে শিক্ষা নেওয়া।
ভালি নাসের আরও একটি কথা বলেছেন। পারমাণবিক অস্ত্রকে এত দিন ‘ডেটারেন্স’ বা প্রতিরোধমূলক একটি ব্যবস্থা বলে ভাবা হয়েছে। ইরানের ক্ষেত্রে তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। তার একটা কারণ, অস্ত্র নির্মাণে খুব লম্বা সময় নিয়ে ফেলেছে সে। তা ছাড়া আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন, মারণাস্ত্র হিসেবে পারমাণবিক শক্তি অর্জন ইসলামে নিষিদ্ধ। ভালি নাসেরের ভয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হাতে ইরানকে নাজেহাল হতে দেখে আরব ও উপসাগরিক দেশগুলো যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহে উঠেপড়ে লাগতে পারে। ফলে পৃথিবী আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে।
মার্কিন হামলার জবাবে ইরান কী করবে, সে প্রশ্ন যেমন জরুরি, তেমনি ট্রাম্প কী করবেন, সেটাও সমান জরুরি। তাঁর কাছ থেকে আমরা বিপরীতমুখী বক্তব্য পেয়েছি। একদিকে তিনি বলছেন, আর হামলা নয়। অন্যদিকে ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’–এর ইঙ্গিত করেও বক্তব্য দিয়েছেন। ট্রাম্প বরাবর নিজেকে যুদ্ধবিরোধী বলে হাজির করেছেন, মধ্যপ্রাচ্য অথবা অন্যত্র ‘অনিঃশেষ’ যুদ্ধের বিরুদ্ধে বুশ-ওবামা-বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সেই তিনি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর রক্ষণশীল ‘মাগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সমর্থকগোষ্ঠী অসন্তুষ্ট। টাকার কার্লসনের মতো প্রভাবশালী পডকাস্টার রাখঢাক ছাড়াই নিজের আপত্তির কথা বলেছেন। অন্ততপক্ষে একজন রিপাবলিকান সিনেটর কঠোর ভাষায় এই হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছেন। তাঁদের কথা উপেক্ষা করা ট্রাম্পের জন্য সহজ হবে না। কোনো কোনো আশাবাদীর মতে, ইরান যদি প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো চলতি লড়াই—অন্ততপক্ষে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ—স্তিমিত হয়ে আসবে।
এ মুহূর্তে খুব জরুরি হচ্ছে হামলা ও পাল্টা হামলার ব্যাপারে সব পক্ষের বক্তব্যে রাশ টেনে ধরা। ট্রাম্প নিজে কূটনীতিকে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স প্রকাশ্যেই ইরানকে ‘আলোচনার টেবিলে’ ফিরতে উৎসাহ দিয়েছেন। এসব কথা কতটা আন্তরিক, কতটা লোকদেখানো বলা মুশকিল। আশার কথা একটাই, আর তা হলো ইরান এখন পর্যন্ত নাটকীয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যা সে বলছে বা করছে, বিশেষজ্ঞেরা তাকে ‘ক্যালিব্রেটেড’ বা পরিমিত বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সে আলোচনায় ফিরতে পারে, এমন ইঙ্গিতও তেহরান দিয়েছে।
বলা যায়, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি একজোট হয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে ও আরব দেশগুলো তাতে জোর সমর্থন দেয়, তাহলে একটা সমাধানের পথ হয়তো মিলে যাবে। আমরা জানি, সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো, যারা এই যুদ্ধ সম্প্রসারিত হলে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে, তারা বিকল্প পথে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে। সম্মানজনক কোনো ‘এক্সিট রুট’ বা বিকল্প নিষ্ক্রমণ পথ পাওয়া গেলে ইরানও তাতে হয়তো সায় দেবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল পদক ষ প কর ছ ন বল ছ ন ক টন ত র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।
হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।
নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?
নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’
সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?
আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।
আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।
গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।
আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫