রাজশাহীতে বাকপ্রতিবন্ধী পথশিশুকে ধর্ষণ, হাসপাতালে ভর্তি
Published: 24th, June 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে বাকপ্রতিবন্ধী এক পথশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সোমবার রাত ১১টার দিকে তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজের পাশ থেকে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজন কে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা বলছেন, রাতের অন্ধকারে শিশুর কান্নার শব্দ শুনে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। পরে পুলিশ এলে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিশুটির চাচা জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ গেট এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ৩টার দিকে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে শিশুটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছে।
এই বিষয়ে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা.
ঘটনার পর থেকেই এলাকাজুড়ে চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ জানায়, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম।
ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তারা এই ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অভিযুক্তের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিকেলে এ ঘটনার প্রতিবাদে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেছে তারা।
তাহেরপুর পৌরসভা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, একজন প্রতিবন্ধী শিশুর ওপর এমন পাশবিকতা- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বিচার চাই, অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান সমকালকে বলেন, আমি সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছি। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা না গেলেও আমরা চেষ্টা করছি যেন খুব দ্রুত অভিযুক্তকে শনাক্ত করা যায়। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। শিশুটির বাবা-মা আলাদা থাকেন। বাকপ্রতিবন্ধী শিশুটি বাজারেই ঘুমাতো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পশতু কাফেলায় বাংলাদেশি: টিটিপি কি নতুন আঞ্চলিক টানাপোড়েন তৈরি করছে
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে বলা হয় টিটিপি। ‘তেহরিক’ মানে সক্রিয়তা বা আন্দোলন। তালেবান অর্থ শিক্ষার্থীরা। বাংলায় টিটিপির অর্থ দাঁড়ায় পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।
আফগানিস্তানে বহু সংগ্রাম শেষে পশতু তালেবান এখন ক্ষমতায়। পাকিস্তানের পশতু এলাকার টিটিপি তাদেরই উপশাখা। তবে আফগান বা পাকিস্তান কোনো দেশের তেহরিক-ই-তালেবান আগের মতো ‘ছাত্রদের আন্দোলনে’ নেই; একটা বিশেষ আদর্শের সব বয়সীর উদ্যোগে পরিণত হয়েছে এবং এটা কেবল পশতু এলাকাতেও সীমিত নেই।
পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে একাধিক বাংলাদেশির নিহত হওয়ার খবর বের হওয়ার পর এত দিনকার অনিচ্ছুক অনেকে মানছেন, তালেবদের এ আন্দোলন ইতিমধ্যে আঞ্চলিক চেহারা নিচ্ছে। শত্রু-মিত্রের ধরনও পাল্টাচ্ছে তাদের।
টিটিপি ‘পশতুনিস্তান’কে নতুন অবয়ব দিয়েছেপশতুভাষীরা আফগানিস্তানের প্রধান জাতি। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ সেখানে তারা। পাকিস্তানে পশতুনরা সংখ্যায় দ্বিতীয় প্রধান জাতি। খাইবার পাখতুনখাওয়া (সাবেক উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ) এবং বেলুচিস্তানে তাদের বড় বসতি হলেও করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ শহরেও সংখ্যায় অনেক আছে। সব মিলে সংখ্যায় প্রায় সাত কোটির মতো হবে পশতুভাষীরা। এ জাতির পুরোনো সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে। ওই সব অঞ্চলেও অল্পবিস্তর আছে তারা।
বিভিন্ন রাষ্ট্রের সীমান্তে বিভক্ত হয়ে পড়লেও পশতুনদের মধ্যে পশতুনিস্তান বলে এক হারিয়ে ফেলা জনপদের কল্পনা আছে। যে জনপদ ভাগ করে গেছেন স্যার মার্টিমার ডুরান্ট ১৮৯৩ সালে। তাঁর কলমের দাগই আজকের ‘ডুরান্ট লাইন’।
পশতুনরা মনে করে, কৃত্রিম ওই রেখা তাদের জাতিসত্তাকে বিভক্ত করেছে। সেই ক্ষোভের দানা বাঁধা ঠেকাতে আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ সীমান্তে পাকিস্তান এখন কাঁটাতার বসাচ্ছে। কিন্তু কৃত্রিম সীমান্তের মতোই কাঁটাতার পশতুনদের যে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত রাখতে পারছে না, তার এখনকার প্রমাণ কল্পনার পশতুনিস্তানজুড়ে তালেবান আদর্শবাদের উত্থান।
‘সীমান্ত গান্ধী’ নামে পরিচিত গাফফার খানের (১৮৯০-১৯৮৮) নেতৃত্বের আমলে এবং তার পরে বহুকাল পশতুনদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ধারাই ছিল প্রবল। এখন ডুরান্ট লাইনের দুই দিকে প্রাধান্য চলছে ইসলামপন্থী দাবিদার ‘তালেব’দের। আফগানিস্তানে তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। পাকিস্তান সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী সেই রাজনৈতিক সুনামি থেকে পাঞ্জাব ও সিন্ধুকে বাঁচাতে চাইছে। এর মধ্যে কল্পনার পুরোনো পশতুনিস্তান অনেকটাই ধর্মতান্ত্রিক সামাজিক চেহারা নিয়ে ফেলেছে।
যেভাবে তালেবান আন্দোলনের বিস্তারতালেবান আন্দোলনের জন্ম প্রায় ৩০ বছর আগে ডুরান্ট লাইনের উভয় দিক মিলে। সীমান্তের দুই দিকের মাদ্রাসগুলোয় পশতুভাষী শিক্ষার্থীদের যোদ্ধা-জনবল বানাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংস্থা অনেক পরিশ্রম করেছে। ১৯৯৬ সালে এসে তারা প্রথম কাবুলে ক্ষমতা দখলে সক্ষম হয়। চার-পাঁচ বছর পর ক্ষমতা থেকে তারা উৎখাত হয় এবং পাকিস্তানের পশতু এলাকায় আশ্রয় নেয়।
নতুন করে সংগঠিত হয়ে প্রায় দুই দশক পর ন্যাটো বাহিনীকে তাড়িয়ে আবার কাবুলে ক্ষমতায় আসে ২০২১ সালের আগস্টে। এরপর ডুরান্ট লাইনের পাকিস্তান অংশে শুরু তালেবান সশস্ত্রতার তৃতীয় তরঙ্গ। তেহরিক–ই–তালেবান এখানে ২০০৭ থেকেই ছিল। কাবুল জয় শেষে তারা ‘পাকিস্তান জয়’ করতে নেমেছে কেবল।
আফগান টিটিএর মতো পাকিস্তানের টিটিপিও দেশটির অনেকগুলো সশস্ত্র সংগঠনের একটি জোট বা নেটওয়ার্ক। অন্তত ১৫টি গ্রুপ আছে এই নেটওয়ার্কে। দুটি গ্রুপ চীনের উইঘুর এলাকা ও উজবেকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছে। সর্বশেষ বাংলাদেশিদের যুক্ত থাকারও খবর এল। সমগ্র জোটের সমন্বয় কীভাবে হচ্ছে, সেটা বলা মুশকিল। তবে আফগান পাখতিয়ারে আত্মগোপনে থাকা নুর ওয়ালি মেহসুদকে টিটিপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করে খুঁজছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুনভারত কি পাকিস্তান–তালেবান দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে১৫ জানুয়ারি ২০২৫পাকিস্তানে টিটিপির পরিসরপাকিস্তানের টিটিপিবিরোধী যুদ্ধের ভরকেন্দ্র খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি)। বলা বাহুল্য, এখানকার সবাই টিটিপির সমর্থক বা সদস্য নয়। তবে সংখ্যায় তারা অনেক, সর্বত্র আছে অল্পবিস্তর এবং বাড়ছেও।
পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এখানকার যুদ্ধক্ষেত্রটা বিশাল ও জটিল। তাদের এখানে লড়তে হচ্ছে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর অন্তত ১৫ শতাংশ সদস্য পশতুভাষী। ফলে পশতুভাষী সেনা ও গেরিলারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে পড়ছেন।
টিটিপি দমন করতে যখনই হঠাৎ কোনো অভিযান চালানো হয়, তখন বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তারা সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে খেপে ওঠে। আবার সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পূর্বে অবহিত করে অভিযান চালালে সেটা সফল হয় না। এ মুহূর্তে কেপিতে চলছে ‘অপারেশন সর্বাকফ’। সর্বাকফ ফারসি শব্দ। যার অর্থ, জান দিতে প্রস্তুত যারা।
নাম থেকেই স্পষ্ট রাষ্ট্রীয় সৈনিকেরা মৃত্যুপণ করে টিটিপি দমনে নেমেছেন। গত বছর জুনে ‘আজম-ই-ইসতেখাম’ (স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সমাধান) নামে আরেকটা অভিযান চালিয়েছিলেন তাঁরা। তবে এসব অভিযানে টিটিপি দুর্বল হয়েছে বলে সাক্ষ্য মেলে না।
পাকিস্তানের তালেবান কেবল নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে না, পশতু এলাকার পুরোনো রাজনেতিক দল আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির কর্মীদেরও আক্রমণ করছে। ইসলামাবাদের নির্বাহী শক্তির বিপরীতে এ এলাকায় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তারা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চায় না। এএনপি পশতু এলাকায় বামপন্থী আদর্শের পরম্পরা লালন করছে, যা তালেবান দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত।
টিটিপির সব উপদল একই আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে লড়ছে এমন নয়। কেউ কেউ কেপি এলাকায় শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করতে পারলেই খুশি। অনেকে পাকিস্তান সরকারকে ‘তাগুদ’ হিসেবে অভিহিত করে উৎখাত করতে চায়। কেউ কেউ চায় পশতুনিস্তানকে এক করতে। আবার বিদেশি যোদ্ধারা ‘হিজরত’ করছে সুন্নি হানাফি মাজহাবের ধর্মীয় একটা মুক্তাঞ্চলের স্বপ্ন নিয়ে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার মামুজাই এলাকায় তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সাবেক প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদের ঘনিষ্ঠজন টিটিপির সাবেক কমান্ডার লতিফ মেহসুদকে (মাঝে) একটি সাজোয়া যানের ওপর দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি।