চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন (২০) নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পর অজ্ঞাত স্থান থেকে স্বজনদের ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কারণে আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলবে। আমার ওপর তোমরা কোনো দাবি দাওয়া রেখো না।’ 

৩৪৩ দিন ধরে নিখোঁজ বেলালের সন্ধানের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বজনেরা এ তথ্য জানান। স্বজনদের অভিযোগ, বেলালকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে। জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে মামলাও করেছেন তারা।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বেলালের স্বজনরা। সেখানে তার বাবা আমির হোসেন, মা ফাতেমা বেগম, দুই ভাই সুমন মিয়া ও ইসমাঈল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বেলালের সন্ধান দাবি করে কান্নায় ভেঙে পরেন তারা। 

কাঁদতে কাঁদতে মা ফাতেমা বেগম বলেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছেলেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। মাদ্রাসা থেকে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিক। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ছেলেকে ফেরত চাই। ‌

লিখিত বক্তব্যে বেলালের বড় ভাই সুমন মিয়া জানান, তাদের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের উত্তর গুদিঘাটা গ্রামে। বেলাল চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ২০১৮-১৯ সেশনের মুতাফাররেকা শ্রেণির একজন ছাত্র। আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের দেড় মাস পর সুমনের মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ আসে। তাতে বেলাল লিখেছিল 'আমার শরীর বেশি ভালো না, মরে যাব।' তখন স্বজনরা নিশ্চিত হয় বেলাল অপহরণ হয়েছে। আগস্টে মাদ্রাসার শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও কারী কাসেম এবং শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহ ছাত্র বেলাল হোসেনকে অপহরণের পর গুম করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তাদের বিরুদ্ধে গত বছরে আগস্টে হাটহাজারী মডেল থানায় মামলাও করা হয়েছে।

সুমন মিয়া বলেন, মামলা করার পর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আবারও সেই অজ্ঞাত নাম্বর থেকে কল দিয়ে আমার ভাই বলে, 'তোমরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কারণে আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে, আমাকে মেরে ফেলবে, আমার ওপর তোমরা কোনো দাবি দাওয়া রেখো না।' মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়া সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগে সুমনের। বেলালের সন্ধানে র‍্যাব, পুলিশের কাছ থেকেও আশানুরূপ সহযোগিতা মেলেনি বলে জানান তিনি। দুজন শিক্ষক এবং একজন ছাত্রকে কেনো অভিযুক্ত করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নে সুমন মিয়া বলেন, একজন শিক্ষকের খাদেম নিয়োগ নিয়ে বেলালের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছিল। 

অভিযুক্ত শিক্ষক তরিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে মঙ্গলবার বিকেলে সমকালকে বলেন, 'আমি মাদ্রাসার মাদানী মঞ্জিল নামের আবাসিক ভবনের দায়িত্বে রয়েছি। ওই ভবনের ৬২৭ নম্বর কক্ষে বেলালসহ ১২ জন ছাত্র থাকত। সে না জানিয়ে অনেক সময় মাদ্রাসা থেকে চলে যেত, এক-দুই সপ্তাহ পর আসত। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় তার সিট বাতিল করে দিই এবং তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। সে কোথায় গেছে, সেটা আমার জানার কথা না। আমার বিরুদ্ধে কেনো অভিযোগ জানি না।' 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মন ম য় ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বেগম রোকেয়াকে নিয়ে রাবি শিক্ষকের মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার লঙ্ঘন: আসক

বাঙালি মুসলমান নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের ফেসবুক পোস্টের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।

আজ বৃহস্পতিবার আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজসংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দিয়েছেন। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলা ও বাঙালি নারীজাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি; তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, বেগম রোকেয়ার শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলন ধর্ম, বর্ণ, জাতিনির্বিশেষে বাঙালি নারীদের পরাধীনতা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে।

বিবৃতিতে আসক বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা ও প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়, যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে বলতে চায়, বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে আমাদের সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।

আরও পড়ুনবেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্যানসার, ৩৬ অস্ত্রোপচার—গানে ফেরার গল্প শোনাবেন ‘বেজবাবা’
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ১১০ বোতল ফেন্সিডিলসহ কারবারি গ্রেপ্তার
  • পাবনায় বিষাক্ত মদপানে ২ যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
  • রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যা মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাহীনতা: উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা
  • বেগম রোকেয়াকে নিয়ে রাবি শিক্ষকের মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার লঙ্ঘন: আসক
  • স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
  • লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
  • মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: গৃহকর্মীকে ধরিয়ে দেন শাশুড়ি 
  • ৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি