সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সংবিধান সংস্কার করা যায়?
Published: 24th, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা সকল রাজনৈতিক দল এবং আপনাদের এলাকার প্রার্থীদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আদায় করে নেবেন, যেন আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যেসব সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে, তা কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই তারা অনুমোদন করেন।’
ধরলাম, তিন জোটের রূপরেখার মতো বেইমানি জুলাই ঘোষণায় হবে না। এটি প্রথম অধিবেশনে পাস হলো। কিন্তু সেটি অনুমোদন করার সামর্থ্য সংসদের আছে কি? সংসদ সদস্যরা যে শপথবাক্য পাঠ করেন, সেখানে তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নেন। সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সেই সংবিধানের আগাগোড়া সংস্কার করা শপথ ভঙ্গ নয় কি?
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী পার্টি এনসিপি যদি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে তারাও কি সংবিধানের মৌল চেতনার বাইরে গিয়ে সংস্কার বা সংশোধনী করতে পারবে? পারবে না। কারণ সেই এখতিয়ারই তাদের নেই।
দুই.
সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তাদের মতো অনেকেই বলছেন, সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংবিধান সংস্কারের জন্য বিল উত্থাপনের অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আদায়ের যে পরামর্শ জনগণকে তিনি দিয়েছেন, একদিকে তা বিভ্রান্তিকর, অন্যদিকে তা জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের
আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি।
সংবিধান সংশোধনের যে ক্ষমতা বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদের কাছে দেওয়া আছে, সেই পদ্ধতির অপব্যবহারের সঙ্গে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের বিস্তারের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এ দেশের মানুষ সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের জন্য অভ্যুত্থান করেছে পুনরায় সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা সংবিধান সংশোধন এবং সংবিধান সংস্কারের পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলেছেন। তিনি ভুলে গেছেন, সংসদ আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষমতা বা এখতিয়ার সংসদের নেই। সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন বা সংস্কারের ক্ষমতা কেবল জনগণের বা জনগণের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ‘সংবিধান সংস্কার সংসদ’-এর।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছে, জনগণের মুক্তির জন্য প্রথমে সংবিধানের সংস্কার এবং পরে সেই পরিবর্তিত সংবিধানের আলোকে সরকার পরিচালনার জন্য জাতীয় সংসদ গঠনের নির্বাচন আয়োজন করা এই অন্তর্বর্তী সময় থেকে উত্তরণের একমাত্র ন্যায্য উপায়।
তিন.
একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিতরা প্রথমে সংবিধান সংস্কার সভা বা গণপরিষদ সদস্য হিসেবে জুলাই ঘোষণাপত্র অনুসারে সংবিধান সংস্কার বা পাস করবে। তারপর অনুমোদিত সংস্কারকৃত সংবিধানের অধীনে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তারা শপথ নেবেন। তারপর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ভার তুলে দেবেন তাদের হাতে।
বর্তমান সংবিধানের ৭ক। (১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়– (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে– তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।
(২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে– তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।
(৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
নইলে বর্তমান সংবিধানের ৭(ক) ধারা অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখে পড়বেন গণঅভ্যুত্থানকারী নেতারা। সংসদ সদস্যরা এই উছিলায় বর্তমান সংবিধান বহাল রাখবেন। আর যদি পরিবর্তন করেন বা না করেন, তাহলেও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র নেতৃত্ব, শিক্ষক, অন্তর্বর্তী সরকারের সব সদস্য, অভ্যুত্থানে যোগদানকারী সব রাজনৈতিক দলের নেতারা সর্বোচ্চ শাস্তির মুখে পড়বেন।
ধরা যাক, বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নতুন সংসদে ১৫তম সংশোধনী বাতিল করা হলো আদালতের রায়ে। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্র জাতীয় সংসদ সদস্যরা কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন? তাদের তো সেই অধিকারই নেই।
ধরা যাক, শাস্তির মুখে পড়ল না গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীরা। কিন্তু সংবিধানের মৌল চেতনার নামে, ১০-১৫ বছর পর আরেকজন শেখ হাসিনা এসে জুলাই ঘোষণা বাতিল করতে পারেন কিনা?
জিতবে তো বিএনপি। বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জাতীয় সংসদে গিয়ে সংশোধনী আকারে সংস্কারকৃত সংবিধান পাস করাতে পারলে, গণপরিষদ সদস্য হয়ে পাস করাতে
আপত্তি কোথায়?
নাহিদ হাসান: লেখক ও সংগঠক
[email protected]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন র জন য অন ম দ অপর ধ ক ষমত শপথ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে মহানগর ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের আলোচনা সভা
৫ আগষ্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর উদ্যোগে বুধবার সন্ধ্যা ৭ টায় নগর কার্যালয়ে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জমহানগর এর সভাপতি এইচ এম শাহীন আদনান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লাহ।
প্রধান অতিথি মুফতী মাসুম বিল্লাহ বলেন,গতবছর ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ থেকে পালিয়েছে,এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সমাজের চিত্র পরিবর্তন হয়নি,চাদাবাজী বন্ধ হয়নি,ধর্ষণ বন্ধ হয়নি, তাই সমাজ কে পরিবর্তন করতে হলে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সমাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য শরিয়া ভিত্তিক কল্যান রাষ্ট্র গঠন করা তাহলেই জুলাই আন্দোলনের প্রত্যাশা সার্থক হবে।
সাধারণ সম্পাদক মুহা আবুল হাশিম এর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর সভাপতি হাফেজ মুহা. ইসমাঈল হোসেন,
সভাপতি এইচ এম শাহীন আদনান বলেন, আজকের আলোচনা সভায় যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই,এবং সামাজিক ভাবে ছাত্রদের কে ইসলামী আদর্শের জীবন গঠনের মাধ্যমে ক্লিন ইমেজ তৈরি করে সর্ব সেক্টরে বৈষম্য হীন কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে।
আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর সহ-সভাপতি মুহা নোমান আহমেদ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মোল্লা, দাওয়াহ সম্পাদক মুহা মাহবুবুর রহমান, তথ্য গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক মুহা খালেদ সাইফুল্লাহ সানভীর, প্রকাশনা ও দফতর সম্পাদক মুহা আমির হামজা, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক মুহা সাঈদ আহমেদ সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।