পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা সকল রাজনৈতিক দল এবং আপনাদের এলাকার প্রার্থীদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আদায় করে নেবেন, যেন আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যেসব সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে, তা কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই তারা অনুমোদন করেন।’
ধরলাম, তিন জোটের রূপরেখার মতো বেইমানি জুলাই ঘোষণায় হবে না। এটি প্রথম অধিবেশনে পাস হলো। কিন্তু সেটি অনুমোদন করার সামর্থ্য সংসদের আছে কি? সংসদ সদস্যরা যে শপথবাক্য পাঠ করেন, সেখানে তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নেন। সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সেই সংবিধানের আগাগোড়া সংস্কার করা শপথ ভঙ্গ নয় কি?
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী পার্টি এনসিপি যদি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে তারাও কি সংবিধানের মৌল চেতনার বাইরে গিয়ে সংস্কার বা সংশোধনী করতে পারবে? পারবে না। কারণ সেই এখতিয়ারই তাদের নেই।

দুই.


সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তাদের মতো অনেকেই বলছেন, সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংবিধান সংস্কারের জন্য বিল উত্থাপনের অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আদায়ের যে পরামর্শ জনগণকে তিনি দিয়েছেন, একদিকে তা বিভ্রান্তিকর, অন্যদিকে তা জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের

আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি।
সংবিধান সংশোধনের যে ক্ষমতা বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদের কাছে দেওয়া আছে, সেই পদ্ধতির অপব্যবহারের সঙ্গে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের বিস্তারের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এ দেশের মানুষ সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের জন্য অভ্যুত্থান করেছে পুনরায় সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা সংবিধান সংশোধন এবং সংবিধান সংস্কারের পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলেছেন। তিনি ভুলে গেছেন, সংসদ আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষমতা বা এখতিয়ার সংসদের নেই। সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন বা সংস্কারের ক্ষমতা কেবল জনগণের বা জনগণের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ‘সংবিধান সংস্কার সংসদ’-এর।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছে, জনগণের মুক্তির জন্য প্রথমে সংবিধানের সংস্কার এবং পরে সেই পরিবর্তিত সংবিধানের আলোকে সরকার পরিচালনার জন্য জাতীয় সংসদ গঠনের নির্বাচন আয়োজন করা এই অন্তর্বর্তী সময় থেকে উত্তরণের একমাত্র ন্যায্য উপায়।

তিন.
একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিতরা প্রথমে সংবিধান সংস্কার সভা বা গণপরিষদ সদস্য হিসেবে জুলাই ঘোষণাপত্র অনুসারে সংবিধান সংস্কার বা পাস করবে। তারপর অনুমোদিত সংস্কারকৃত সংবিধানের অধীনে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তারা শপথ নেবেন। তারপর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ভার তুলে দেবেন তাদের হাতে।
বর্তমান সংবিধানের ৭ক। (১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়– (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে– তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।
(২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে– তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।

(৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
নইলে বর্তমান সংবিধানের ৭(ক) ধারা অনুসারে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখে পড়বেন গণঅভ্যুত্থানকারী নেতারা। সংসদ সদস্যরা এই উছিলায় বর্তমান সংবিধান বহাল রাখবেন। আর যদি পরিবর্তন করেন বা না করেন, তাহলেও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র নেতৃত্ব, শিক্ষক, অন্তর্বর্তী সরকারের সব সদস্য, অভ্যুত্থানে যোগদানকারী সব রাজনৈতিক দলের নেতারা সর্বোচ্চ শাস্তির মুখে পড়বেন।
ধরা যাক, বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নতুন সংসদে ১৫তম সংশোধনী বাতিল করা হলো আদালতের রায়ে। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্র জাতীয় সংসদ সদস্যরা কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন? তাদের তো সেই অধিকারই নেই।

ধরা যাক, শাস্তির মুখে পড়ল না গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীরা। কিন্তু সংবিধানের মৌল চেতনার নামে, ১০-১৫ বছর পর আরেকজন শেখ হাসিনা এসে জুলাই ঘোষণা বাতিল করতে পারেন কিনা?
জিতবে তো বিএনপি। বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জাতীয় সংসদে গিয়ে সংশোধনী আকারে সংস্কারকৃত সংবিধান পাস করাতে পারলে, গণপরিষদ সদস্য হয়ে পাস করাতে 
আপত্তি কোথায়?

নাহিদ হাসান: লেখক ও সংগঠক
nahidknowledge@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন র জন য অন ম দ অপর ধ ক ষমত শপথ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানে হত্যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বিক

রাজধানীর মিরপুর থানায় দায়ের করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা মামলায় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে উপজেলা বিএনপি এবং সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় উপজেলার কোদালপুর বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বাজার প্রদক্ষিণ করে কোদালপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ

খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা বহাল, ২ মহাসড়কে অবরোধ শিথিল

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিরপুর থানায় ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে প্রধান আসামি করে গণঅভ্যুত্থানে নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়। মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবিলম্বে মামলা থেকে নিরপরাধ বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য তারেক আজিজ মোবারক ঢালী বলেন, ‘‘যেসব বিএনপি নেতাকর্মীর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তারা সকলে বিগত দিনে স্বৈরাচারি হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হোক।’’ 

কোদালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম সালু মৃধা বলেন, ‘‘বিগত দিনে বিএনপি করার কারণে আমরা মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি, হামলার শিকার হয়েছি। এখন আবার আমাদের নাম একই মামলায় জড়ানো হয়েছে। এটি ঘৃণিত ষড়যন্ত্র, এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’’ 

ভুক্তভোগী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন মৃধা বলেন, ‘‘আমি বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। এমনকি, জুলাই আন্দোলনেও অংশ নিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গত ২০ সেপ্টেম্বর আমার নাম মিরপুর থানার মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’’ 

তিনি এর তীব্র নিন্দা এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান। 
 

ঢাকা/আকাশ/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণঅভ্যুত্থানে হত্যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বিক
  • গ্রামীণ ব্যাংক ও রাষ্ট্র চালানো এক জিনিস না: ফরহাদ মজহার
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে শক্তিতে রূপান্তর করেছে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা