সরকারি ভালো চাকরি পেলেও বাবা করতে দেননি। শিক্ষক হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর থেকে পেয়েছি। শিক্ষাজীবনে এমন কয়েকজন শিক্ষক পেয়েছি, যারা আমাকে শিখিয়েছেন– সফলতা পেতে হলে সব সময় সৎ, কর্মঠ ও প্রগতিশীল মানুষ হতে হবে। এসব ভালো মানুষের আশীর্বাদ দেশসেরা হতে সহায়তা করেছে।

কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি সুলতানা। তিনি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ক্যাটেগরিতে প্রথম হয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, একই স্কুলড্রেসে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে। শিক্ষকরাও পরেছেন অ্যাপ্রোন। পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। পড়ার উপকরণের অভাব নেই। বিদ্যালয় মাঠের কোনায় ফুলের বাগান। সুন্দর খেলার মাঠ। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের শোভা বাড়িয়েছে সিটিজেন চার্টার ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।
শিউলি বাংলাদেশ ডাকবিভাগে উচ্চ পদে চাকরি পান। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মকর্তা আব্বাস আলী চেয়েছেন, তাঁর মেয়ে শিক্ষক হোক। এজন্য যোগদান করতে দেননি। ২০০৭ সালে বাবার ইচ্ছাপূরণ হয়। শিউলি জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দুরাকুঠি বাহাগিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০৯ সালে বদলি হয়ে আসেন সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

গত ১০ মে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিউলিকে জাতীয় শিক্ষাপদক দেওয়া হয়। তবে গর্বের পদকটি বাবার হাতে তুলে দিতে পারেননি তিনি।

পদকটি নিয়ে ট্রেনে করে রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ের শাহাগোলায় ফিরছিলেন শিউলি। জয়দেবপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে তাঁর ৮৫ বছর বয়সী বাবার মৃত্যুর সংবাদ পান। বাবার দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্প্রতি শিউলি ফিরেছেন প্রিয় কর্মস্থলে।

সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনার প্রস্তুতি নিলেও শিউলির অনুরোধে তা বাতিল করা হয়। তবে আগেই তারা বাবার মৃত্যুতে সমবেদনার পাশাপাশি দেশসেরা হওয়ায় ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়েছেন।

শিক্ষকতাকে শিউলি চাকরি নয়, ব্রত মনে করেন। শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছের বন্ধু, তাঁর জীবনের দর্শন এমনকি পরিচালকও। ফলে শিক্ষককে চিন্তাচেতনা ও নৈতিকতায় সেভাবে গড়ে উঠতে হয়। শিউলি মনে করেন, বর্তমানে শিক্ষকরা এ দর্শন থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। আবার শাসনের পরিমাণও অনেক কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক স্খলনের প্রবণতা বেশি। পরিস্থিতির উত্তরণ এবং সুন্দর সমাজ গঠনে অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

দেশসেরা সাফল্যের বিষয়ে শিউলি সুলতানা জানান, পেশাদারিত্বে তিনি কোনো আপস করেন না। ফজর নামাজের পর থেকে শুরু করেন দিনের কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের আজ নতুন কী শিখাবেন, সে চিন্তা থেকে অন্তত একটি ভিডিও কনটেন্ট বানান। তাঁর মৌলিক পাঁচ শতাধিক শ্রেণি পাঠদানের কনটেন্ট রয়েছে।

স্কুলে এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকির পর দাপ্তরিক কাজ করেন। ক্লাস শুরুর আগে সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে সারাদিনের পাঠদানের পরিকল্পনা ঠিক করেন। সহকারী শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন কিনা, তা তদারকি করেন। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। এমনকি বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন শিক্ষার্থীর। অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও সমাজের দক্ষ মানুষের পরামর্শ নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে সফলতা পেয়েছেন বলে জানান শিউলি।

সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। অবকাঠামো সংকটের কারণে গত তিন বছর তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল আলম জানান, শিউলি সুলতানা মেধাবী ও সৃজনশীল প্রধান শিক্ষিকা। দেশসেরা হতে যেসব সূচক প্রয়োজন, সবই অর্জন করেছেন তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চিরন্তন সফলতার অপরিহার্য ১০ শর্ত

সাফল্য অর্জনের জন্য মুমিন সমাজকে সম্মিলিতভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছু মৌলিক শর্ত পালন করতে হয়:

১. আত্মশুদ্ধি

আত্মশুদ্ধি হলো ব্যক্তির ভেতরের সৎ ও ন্যায়ের দিকে ধাবিত হওয়া সহজাত প্রবণতাগুলোকে পরিচর্যা করা এবং সেগুলোকে বিকশিত করা।

বাহ্যিক পরিবেশ, নির্দেশনা ও উদ্দীপনা এই সহজাত প্রবণতাকে জাগ্রত করতে, শাণিত করতে ও সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করে, যাতে মানুষ সত্যকে তার সঠিক রূপে উপলব্ধি করতে পারে। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, “নিশ্চয় সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে আত্মাকে পবিত্র করেছে।” (সুরা শামস, আয়াত: ৯)

২. সবর

সবর হলো ধৈর্য, যা সাফল্যের একটি শক্তিশালী ভিত্তি। এটি তিন ধরনের হয়:

আনুগত্যে ধৈর্য: আল্লাহর বিধান ও ইবাদত পালনে ধৈর্যধারণ করা।

পাপ থেকে বিরত থাকার ধৈর্য: নফসের কামনা, লোভ ও আকাঙ্ক্ষা এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে থাকার জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।

বিপদাপদে ধৈর্য: বাতিল ও অসত্যের বাড়াবাড়ি, জালিমের নির্লজ্জতা, দুর্দিনে সাহায্যকারীর অভাব এবং কঠিন মুহূর্তে হতাশা ও সন্দেহের বিরুদ্ধে অবিচল থাকা।

এর পাশাপাশি বিজয় ও ক্ষমতা লাভের পর বিনয় ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ধৈর্যও জরুরি। সকল পরিস্থিতিতে—সুখে-দুঃখে—আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ বজায় রাখা এবং তাঁর ফয়সালার কাছে আত্মসমর্পণ করাই সবর। (গাজালি, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ৪/৫৯, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০৫)

৩. অবিচলতা

অবিচলতা মানে এখানে শত্রুদের চেয়েও বেশি দৃঢ় ও অবিচল থাকা। এটি শত্রুর ধৈর্যের বিরুদ্ধে নিজেদের ধৈর্যের এক প্রতিযোগিতা। যখন ভ্রান্তপন্থীরা তাদের পথে অবিচল থাকে, তখন সত্যপন্থীদের উচিত আরও বেশি দৃঢ়তা ও সাহসের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া।

আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা কষ্ট পাও, তবে তারাও তোমাদের মতোই কষ্ট পাচ্ছে, আর তোমরা আল্লাহর কাছে এমন কিছু আশা করো যা তারা আশা করে না।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৪)

আরও পড়ুনসফলতা ও বিজয়ের জন্য ঐক্যের গুরুত্ব ১৬ আগস্ট ২০২৪৪. সতর্ক অবস্থান

ইসলামি পরিভাষায় একে বলে মুরাবাতা। অর্থাৎ, জিহাদের স্থানে, সীমান্ত ও স্পর্শকাতর অঞ্চলে সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকা। ইসলাম প্রচারের গুরুদায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মুসলিম উম্মাহ সবসময় শত্রুদের বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এটি নবীদের ও তাদের অনুসারীদের ক্ষেত্রে আল্লাহর এক সাধারণ নীতি। যখন ওয়ারাকা ইবনে নওফল রাসুল (সা.)-কে বলেছিলেন যে, “আপনার মতো বার্তা নিয়ে এমন কেউ আসেনি, যার বিরুদ্ধে শত্রুতা করা হয়নি” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩), তখন এটিই প্রমাণিত হয়েছে।

এই কারণে মুসলিম উম্মাহকে তার স্থায়ী ও স্বাভাবিক শত্রুদের থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য সর্বদা সতর্কতা ও পাহারায় থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো এবং সীমান্ত পাহারায় প্রস্তুত থাকো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)

৫. খোদাভীতি

খোদাভীতি হলো ভেতরের সেই সুরক্ষা, যা ব্যক্তিকে খারাপ পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কঠিন সামাজিক বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিংবা সামরিক পরাজয় ততক্ষণ পর্যন্ত সামান্যই ক্ষতি করতে পারে, যতক্ষণ না তা মৌলিক নীতি, নৈতিকতা ও আত্মাকে পরিবর্তন করে ফেলে।

আল্লাহকে ভয় করা সমাজের আত্মাকে পরিমার্জিত, শক্তিশালী ও উন্নত করার পথ। এর মধ্যে রয়েছে সৎ আচরণ, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা (যেমন সুদ, মদ, জুয়া), কঠোরভাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, লোভের প্রতিরোধ করা, সহযোগিতা, আত্মত্যাগ, আল্লাহর পথে ব্যয় এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা।

খোদাভীতিই বিবেক বা চেতনার সতর্ক প্রহরী, যা ব্যক্তিকে ভুল পথে বা দুর্বলতায় পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটিই সাফল্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু, “সুতরাং হে জ্ঞানীরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ১০০)

৬. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ

সমাজকে সংশোধন ও সাফল্যের পথে পরিচালিত করার জন্য এই কাজটি অপরিহার্য। এটি ধর্ম, জীবন, জ্ঞান, সম্পদ ও বংশ—এই পাঁচটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তাকে রক্ষা করে। এর মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত হয় এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই আল্লাহ উম্মাহকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে; আর এরাই হলো সফলকাম।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪)

আরও পড়ুনবিশ্বাসীরা কখন সফল হবে০৮ মে ২০২৫৭. রাসুল (সা.)-এর খাঁটি অনুসরণ

সাফল্যের জন্য আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য একমাত্র সেই পদ্ধতিতেই করতে হবে, যা তিনি তাঁর রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে বিধিবদ্ধ করেছেন। যারা রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর সঙ্গে নাজিলকৃত নূর (কোরআন) অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম। (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭)

৮. অনুতাপ ও প্রত্যাবর্তন

তওবা মানে আল্লাহর দিকে দ্রুত ফিরে আসা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এটি ভ্রান্ত পথ থেকে সরে আসার প্রতীক। আল্লাহ তায়ালা তওবাকে সাফল্যের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সুরা জুমার, আয়াত: ৩১)

৯. আল্লাহকে স্মরণ করা

আল্লাহর জিকির বা স্মরণ অধিক পরিমাণে করলে সফলতা অবশ্যম্ভাবী। কোরআনে বলা হয়েছে, “আর তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সুরা জুমুআ, আয়াত: ১০)

১০. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া

আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, যা তিনি কৃতজ্ঞদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন, এর মাধ্যমেও সাফল্য লাভ হয়: “সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।” (সুরা আরাফ, আয়াত: ৬৯)

আরও পড়ুনসফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য২৫ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিরন্তন সফলতার পথে বাধা ৫টি
  • এ সপ্তাহের রাশিফল (১৩-১৯ ডিসেম্বর)
  • চিরন্তন সফলতার অপরিহার্য ১০ শর্ত
  • সকালের অ্যালার্ম, না ফোনভীতি? জেন–জিরা কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ জয় করবেন যেভাবে
  • ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষ, শাহজাদীর মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা
  • ‘ইয়াকিন’ কীভাবে অর্জন করা যায়