গণমাধ্যম ও যুব নীতিতে যুক্ত করতে হবে অংশীজনদের
Published: 25th, June 2025 GMT
গণমাধ্যম ও যুব নীতিতে সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও যুবাদের মতামত উপেক্ষিত থাকবে। নারী ও যুবাদের ক্ষমতায়নও হবে না। এ ছাড়া গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপনে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিধান প্রয়োজন। সরকার যেসব আইন ও নীতি প্রণয়ন করে, সেখানে অংশীজনদের শুরু থেকে যুক্ত করা হলে মাঠের অভিজ্ঞতা ও বাস্তব বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘গণমাধ্যম ও যুব নীতিমালা: জেন্ডার লেন্স পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিমত উঠে আসে। ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট পরিচালিত ‘সমতায় তারুণ্য’ প্রকল্প এবং প্রথম আলোর উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিআরডি) ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড টিম লিড মো.
মোখলেসুর রহমান জানান, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, জাতীয় যুব নীতি, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, সাইবার নিরাপত্তা আইন (বিলুপ্ত) এবং ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বিটিআরসির প্রবিধানমালা (খসড়া) নিয়ে পর্যালোচনা করে অংশীজনের মতামত নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে।
গবেষণায় গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বাস্তবায়নে অসামঞ্জস্যতা, নারী ও যুবাদের গতানুগতিক ও সীমিত উপস্থাপন এবং বাণিজ্যিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের বস্তুগত উপস্থাপনের বিষয় উঠে এসেছে। পাশাপাশি জেন্ডার সমতা প্রচারে যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠনের ভূমিকা, যুব নেতৃত্ব সংগঠনগুলোর চ্যালেঞ্জও বিষয়টি রয়েছে। আইন ও নীতিগুলোতে সংশোধন এবং অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়।
বৈঠকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর যুব নীতি পর্যালোচনা ও পরিবর্তন করতে হবে। বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে মিলে সেই কাজ করছে সরকার। গণমাধ্যমে যুবাদের উপস্থাপন কেমন হতে পারে, তা নিয়ে পরামর্শ আসতে পারে।
নীতির প্রয়োগ ও প্রভাবে সমাজের সবার ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, আইন ও নীতি প্রণয়ন নিয়ে অনেক কর্মশালা হয়, বৈঠক হয় কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা যেটা করবেন বলে ঠিক করে রাখেন, সেটাই শেষ পর্যন্ত হয়। বাকিদের মতামতের প্রতিফলন খুব কমই দেখা যায়। অথচ এসব মতামত মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে আসে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, বিভিন্ন আইন, নীতি করার ক্ষেত্রে পুলিশও শুরুতে যুক্ত থাকে না। কিন্তু প্রয়োগের কাজটি পুলিশকেই করতে হয়। শুরু থেকে পুলিশ যুক্ত থাকলে মাঠের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা যায় বলে মনে করেন তিনি।
গণমাধ্যম ও পর্দায় নারীর উপস্থাপন নিয়ে কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা। তিনি বলেন, যেসব নারী অনলাইনে নিজেদের প্রকাশ করছেন, সামনে আনছেন, যাঁরা ক্ষমতাবান ও সমাজে ভালো অবস্থান আছেন, তাঁরাই হেনস্তার, বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বাইরের দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতার কিছু বিষয় মেনে চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এটা প্রয়োজন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশন) নিশাত সুলতানা বলেন, সরকারের দিক থেকে নীতিমালার একটি কাঠামো প্রস্তুত করে বিশেষজ্ঞ বা অংশীজনদের যুক্ত করা হয়। কিন্তু এটা নীতিমালার খসড়া তৈরির শুরু থেকেই যুক্ত করা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকদের মানসিকতারও পরিবর্তন জরুরি।
আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ উছমান গনী বলেন, সমাজ পরিবর্তনে যাঁরা ভূমিকা রাখেন, তাঁদের ধর্মীয় বিষয়গুলো জানতে হবে। যার জন্য কাজ করা হচ্ছে, তাকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে পক্ষ ভেবে কাজ করা প্রয়োজন।
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সিনিয়র ম্যানেজার হাওয়া মুস্তাগফিরা এষা বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতায় নারী ও পুরুষ উভয়ের বিষয়গুলোই আসতে হবে। নীতিগুলো তৈরির ক্ষেত্রে সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) সহকারী অধ্যাপক নাছরিন আক্তার বলেন, যেসব সুপারিশ আসে, তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় দর্শনে নারীর অধিকার থাকতে হবে। কোন বিষয়টা নারীবিদ্বেষী, কোনটায় নারীকে যৌনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যাপ্তি ও প্রভাব অনেক শক্তিশালী। এসব প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারে সাক্ষরতার বিষয়ে ভাবতে হবে। স্কুল পর্যায়ে এসবের ওপর শেখাতে হবে। কনটেন্ট নির্মাণ করার সময় তাঁরাও জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে মাথায় রাখেন জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে বিষয়গুলো নিয়ে আরও সতর্ক থাকবেন।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান জাতিসংঘের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপসংক্রান্ত (সিডও) সনদ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, নারীদের উপেক্ষা ও অপমান করে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ইউনিসেফের জেন্ডার প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হুমায়রা আজিজ, সাংবাদিক মাহফুজ মিশু, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ওয়াইএপি সদস্য মো. শাওন, ভৈরবীর লিড অব প্রোডাকশন ফারিয়া জাহান ইকরা প্রমুখ।
আলোচনা শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) মাহিন নেওয়াজ চৌধুরী। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম অ শ জনদ র প রথম আল য ক ত কর ব ষয়গ ল র মত মত অ শ জন
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট