বর্ষায় হাঁটুপানির মধ্যে কুমিল্লার ধর্মপুর খাদ্য গুদাম
Published: 25th, June 2025 GMT
বর্ষা এলেই হাঁটুপানিতে ডুবে যায় কুমিল্লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সংরক্ষণাগার ধর্মপুর খাদ্য গুদাম। জেলার সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দুর্যোগকালীন সাধারণ মানুষের জন্য যেখান থেকে খাদ্য সরবরাহ হয়, সেই গুদামঘরই এখন নিজেই বাঁচার সংকটে।
দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় গুদামের চারপাশ রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। গরমে দুর্গন্ধে চলাফেরা দায়, বর্ষায় পানি জমে হাঁটু পর্যন্ত। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সরকারি এই স্থাপনাটি।
গুদামের ১৪টি ঘরের মধ্যে সাতটি অচল, একটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত। কার্যকর ঘরগুলোতে সাড়ে ছয় হাজার টনের বেশি শস্য রাখা গেলেও পরিবেশের কারণে সেগুলোও ঝুঁকির মধ্যে। কর্মীরা বলছেন, শস্যের গুণগত মানও ঠিক রাখা যাচ্ছে না।
আরো পড়ুন:
৬০ লাখ মে.
রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে যশোরে মানববন্ধন
শ্রমিক মোহাম্মদ আলী বলেন, “প্রতিদিন এই পানির ভেতর দিয়ে চাল-গম ওঠাই, নামাই করি। পায়ে ঘা হয়ে গেছে, চুলকানিও হয়। এত দুর্ভোগের কথা কে ভাবে?”
এক পরিবহন চালক আবুল কাশেম বলেন, “বর্ষায় তো ট্রাকই ঢুকতে পারে না। রাস্তা পানির নিচে। অনেক জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। মাল নামাতে গিয়ে রোদে-বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।”
গুদাম ভবনের একাংশে সাময়িকভাবে মেঝে উঁচু করে সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, “আমাদের পাশ দিয়ে যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন গেছে, সেটি উন্নয়নের সময় পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে অনেকবার বলেছি, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি।”
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, “ধর্মপুর খাদ্য গুদামের জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমরা জানি। সমস্যা নিরসনে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে, তবে এখনো তা একনেকে অনুমোদন পায়নি। আশা করছি, নতুন অর্থবছরে বাজেট অনুমোদিত হবে।”
জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, “কুমিল্লার জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা। খাল ও জলাধার দখল ও ভরাটের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা নতুন একটি গুদাম তৈরির বিষয়ে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছি।”
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, জলাবদ্ধতার শুরু ২০১৭ সাল থেকে। আশপাশের ড্রেন ও বৃষ্টির পানি জমে এখানে আটকে যায়। পাশেই একটি প্রাকৃতিক নালা থাকলেও স্থানীয়রা সেটি ভরাট করে ফেলেছেন।
সম্প্রতি গুদাম এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, সড়ক উঁচু করার চিন্তা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা এই অব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকলে দুর্যোগের সময় কুমিল্লার খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তাদের আহ্বান, “কর্তৃপক্ষ যেন আর দেরি না করে শস্যের নিরাপত্তা মানেই মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা।”
ঢাকা/রুবেল/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ
নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।
আরো পড়ুন:
ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু
মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক
কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।