ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার পথে ৩৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন মইনুল ইসলাম (৫৫)। এরপর তাঁকে নিয়ে মাঠে নামে পুলিশের একটি দল। ৯ ঘণ্টা অভিযান শেষে পুলিশ জানতে পারে টাকা ছিনতাই হয়নি, ওই ঘটনা সাজানো নাটক।

এ ঘটনা গতকাল বুধবারের, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী মইনুল ইসলাম উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের গোপালপুর বড়গ্রাম এলাকার মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে। সার, বীজ, কীটনাশকসহ মজুতদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ তাঁর বাসা থেকে ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে তাঁকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।

ওই অভিযানে অংশ নেন দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সিফাত-ই-রাব্বানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম, বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস ছবুর।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ ও ভুল স্বীকার করেছেন মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীও তাঁর কাছে টাকা পাবেন। তিনি ভেবেছিলেন, টাকা ছিনতাই হয়েছে, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা গেলে হয়তো ব্যাংক ও ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছে ঋণ মওকুফসহ খানিকটা সহানুভূতি পাবেন।

মইনুল ইসলামের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় বিরল উপজেলায় বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি। টাকা তুলে বাড়িতে এসে কীটনাশকের কার্টুনে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। পরে মুরাদপুর নামক এলাকায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেল বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হন সেখানে। পুলিশের কাছে মইনুল ইসলাম বলেন, তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে আট লাখ টাকা তুলেছিলেন। হাতে থাকা আরও ২৬ লাখ টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ টাকা একটি সরকারি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ছয়জন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে সেই টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে গেছেন।

এরপর বেলা তিনটায় পুলিশ মইনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শহরের কাছে সব ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। একটি ফুটেজে দেখা মেলে মইনুলের। মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে ছোট একটি খালি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। এতে সন্দেহ হয় পুলিশের, মইনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাত ৯টায় পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেন মইনুল। এরপর পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গুদাম ঘরে রাখা কীটনাশকের কার্টুন থেকে ব্যাংক থেকে তোলা ৮ লাখ টাকাসহ ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে। একই সঙ্গে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত ঋণ মওকুফের আশায় মইনুল ইসলাম নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। সব‌কিছু বি‌বেচনায় নি‌য়ে পু‌লিশ তাঁর মুচ‌লেকা নি‌য়ে ছে‌ড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন ক‌রে তাঁকে স্বজন‌দের হা‌তে তু‌লে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মইন ল ইসল ম ন মইন ল ছ নত ই ক র কর

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম