টাকা ছিনতাইয়ের ‘নাটক’ সাজিয়ে ধরা খেলেন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
Published: 26th, June 2025 GMT
ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার পথে ৩৪ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন মইনুল ইসলাম (৫৫)। এরপর তাঁকে নিয়ে মাঠে নামে পুলিশের একটি দল। ৯ ঘণ্টা অভিযান শেষে পুলিশ জানতে পারে টাকা ছিনতাই হয়নি, ওই ঘটনা সাজানো নাটক।
এ ঘটনা গতকাল বুধবারের, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী মইনুল ইসলাম উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের গোপালপুর বড়গ্রাম এলাকার মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে। সার, বীজ, কীটনাশকসহ মজুতদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ তাঁর বাসা থেকে ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে তাঁকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
ওই অভিযানে অংশ নেন দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সিফাত-ই-রাব্বানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম, বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস ছবুর।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ ও ভুল স্বীকার করেছেন মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীও তাঁর কাছে টাকা পাবেন। তিনি ভেবেছিলেন, টাকা ছিনতাই হয়েছে, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা গেলে হয়তো ব্যাংক ও ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছে ঋণ মওকুফসহ খানিকটা সহানুভূতি পাবেন।
মইনুল ইসলামের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় বিরল উপজেলায় বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি। টাকা তুলে বাড়িতে এসে কীটনাশকের কার্টুনে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। পরে মুরাদপুর নামক এলাকায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেল বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হন সেখানে। পুলিশের কাছে মইনুল ইসলাম বলেন, তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে আট লাখ টাকা তুলেছিলেন। হাতে থাকা আরও ২৬ লাখ টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ টাকা একটি সরকারি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ছয়জন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে সেই টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে গেছেন।
এরপর বেলা তিনটায় পুলিশ মইনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শহরের কাছে সব ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। একটি ফুটেজে দেখা মেলে মইনুলের। মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে ছোট একটি খালি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। এতে সন্দেহ হয় পুলিশের, মইনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাত ৯টায় পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেন মইনুল। এরপর পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গুদাম ঘরে রাখা কীটনাশকের কার্টুন থেকে ব্যাংক থেকে তোলা ৮ লাখ টাকাসহ ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করে। একই সঙ্গে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত ঋণ মওকুফের আশায় মইনুল ইসলাম নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ তাঁর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাঁকে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মইন ল ইসল ম ন মইন ল ছ নত ই ক র কর
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।