প্রকৃত ঘটনা সামনে এলে হাসনাত আবদুল্লাহ বুঝতে পারবেন তিনি ভুল করেছেন: দুদকের ডিজি
Published: 26th, June 2025 GMT
দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ঘুষ চাওয়া নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ যে ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। আজ বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রকৃত ঘটনা সামনে এলে হাসনাত আবদুল্লাহ বুঝতে পারবেন তিনি ভুল করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মো.
এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে দুদক বলে, একটি প্রতারক চক্র দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। যার সঙ্গে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন। ইতিমধ্যে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
সম্প্রতি হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা। আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছ থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আক্তার আর তাঁর ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয়, আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকাপয়সার অভাব থাকার কথা না, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আক্তার আবার ফোন দিয়ে জানতে চায়, টাকা দেবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করাদের কাছ থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেতা ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, ‘দুদকের এই সব কাজকারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই, কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’
হাসনাত বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই, দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন? ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সে জন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরোনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাব। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন তুলে নিতে অর্থ উপদেষ্টার আহ্বান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “কিভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তার ধারণা পাওয়া গেছে। আশা করি আজ রাতের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করে অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকের এ কথা বলেন।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং প্রণীত নীতি বাস্তবায়নপূর্বক রাজস্ব আহরণ-এ দুটো কার্যক্রম পৃথকীকরণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়। এরপর মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া তৈরি করে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জ করে ১২ মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৫টায় অর্থ উপদেষ্টা বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের আলোচনার আহ্বান জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডাকেন। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়।
এই বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “তারা না আসলেও সব সিনিয়র অফিসার, কমিশনাররা আসছে। এরা সবাই রেসপন্সিবল। যারা আন্দোলন করছে, বেশিরভাগই তাদের অধীনে কাজ করে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি এবং এই সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হবে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি। সমস্যার সমাধান বেশ তাড়াতাড়ি হবে। আগামী সপ্তাহে আরো একটি সভা করব। তখন একটা চূড়ান্ত হবে।”
শনিবারে এনবিআর কর্মকর্তাদের একটি কর্মসূচির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সেটার ব্যাপারে তাদেরকে অনুরোধ করেছি। তারা যেন ইমিডিয়েটলি এটা উইথড্রো করে। এখানে আমাদের কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই। দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে তারা এটা শুনবে বলে আশা করছি। কিছুদিনের মধ্যে দেখবেন সমাধান করে দেব।”
অন্যদিকে, এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আজকে আড়াই ঘণ্টারও বেশি লম্বা সময় ধরে মিটিং হয়েছে। রেভিনিউজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ১৭ জন সর্বোচ্চ অথরিটি বা সদস্যের মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। একজন অফিসিয়াল কাজে বাইরে থাকার কারণে আসতে পারেন নাই।সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সদস্যরা আলোচনা করেছেন।”
তিনি বলেন, “আপনারা যেভাবে উদ্বিগ্ন, আমরাও একইভাবে উদ্বিগ্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যার সাথে আমদানি রপ্তানি সবকিছু জড়িত। সেখানে যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো হয়েছে, সেটা কিভাবে হলো সে বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। আমরা খুবই আশাবাদী যে একটা সুন্দর সলিউশন হবে। স্যার সেই দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে। আলোচনা চলছে, আরো আলোচনা হবে। আশা করি একটা সুখবর দিতে পারব।”
তিনি বলেন, “এই আলোচনা শেষ হলেও আন্দোলনরত কর্মকর্তারা উনাদের মধ্যে আলোচনা করছেন।উনারা সিদ্ধান্ত দিলে আজকের মধ্যেই একটা সলিউশন হবে বলে আশা করি।”
এনবিআর চেয়ারম্যানি বলেন, “এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে, টেলিফোনে, মেসেজ বিনিময়ের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। যারা রাজস্ব আহরণ করেন, তারাও অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং টেলেন্টেড মানুষ। এতকিছুর পরও সারা দেশের রেভিনিউ কালেকশন বেশ ভালো ট্রাকেই আছে। আন্দোলন করলেও তারা সাথে সাথে এই কাজটাও করছে। ব্যাপারটা এমন না যে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তাদের কনসার্নগুলো ভেন্টিলেট করা গেছে।আশা করি এগুলোর একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে।যখন সমাধান হবে সবকিছুরই সমাধান হবে।”
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ