রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডকে প্রশাসনিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ৩০ জুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণশুনানি হওয়ার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কী কারণে এই গণশুনানি করলেন না? কেন তাড়াহুড়া করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করছেন? এ কারণে তাঁরা তদন্তপ্রক্রিয়ার ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছেন।

প্রসঙ্গত, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২৪ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্থাটি। আজ দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রসিকিউটর মো.

মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ ৩০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরীও (আকাশ) এ মামলার আসামি। তবে অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করবেন না বলে জানান মিজানুল ইসলাম।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণশুনানি না করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। আজ বৃহস্পতিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গম র ক য় ল র তদন ত গণশ ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি এতিম হয়ে গেলাম রে’

“আমি এতিম হয়ে গেলাম রে, আমার বাবা আর নেই, আমি এখন কী করবো ফুফু”- এভাবেই হাহাকার করছিলেন পাপিয়া আক্তার। বাবা হারানোর শোকে কণ্ঠ যেন পাথর ভেদ করা আর্তনাদ। পাশে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন স্বজনরা। সবাই জানে, এই কান্নার আর কোনো সান্ত্বনা নেই।

পাপিয়া মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ফলসাটিয়া এলাকায় হলি চাইল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালক পারভেজ খানের (৪৫) মেয়ে। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন পারভেজ খান। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

স্কুল পরিচালকের বিরুদ্ধে ৮ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ 

শ্রেণিকক্ষে টিকটক বানানোয় ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গভীর রাতে ফলসাটিয়া বাজারের পাশে থেমে থাকা স্কুল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসে ওই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন চালক পারভেজ খান। আগুনে বাসটি মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তিনদিন ধরে ৭০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে বাঁচার লড়াই চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু জীবন তাকে আর সময় দেয়নি।

নিহত পারভেজ খান সদর উপজেলার বারাইভিকড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার ঘরে রয়েছে স্ত্রী, এক স্কুলপড়ুয়া ছেলে এবং ছোট মেয়ে পাপিয়া আক্তার। 

স্ত্রী চোখে মুখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেলাম। এখন সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবো? কে চালাবে সংসার?”

স্থানীয়রা জানান, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। যারা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পারভেজের পরিবার যেন রাষ্ট্রীয় সাহায্য পায়, সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের ব্যয় চালাতে যেন সরকার ও প্রশাসন এগিয়ে আসে।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “গত বৃহস্পতিবার স্কুলবাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে দগ্ধ হন বাসটির ভেতর ঘুমিয়ে থাকা চালক পারভেজ। পুলিশ উদ্ধার করে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। স্কুলবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ