নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। এটি গ্রহণের ফলে স্নায়বিক বৈকল্য দেখা দেয় ও বারবার তা গ্রহণের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদক লক্ষ্য করা যায়। সভ্যতার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মাদকদ্রব্যেরও যথেষ্ট উন্নতি (!) হয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে যেসব মাদকের সেবন সর্বাধিক সেগুলো হলো– গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, রেকটিফায়েড স্পিরিট, মদ, বিয়ার ইত্যাদি। দেশে এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ২৭ ধরনের মাদক। এর মধ্যে ১৮ ধরনের ব্যবহার বেশি।
সরকারি তথ্যমতে, দেশে মাদকাসক্তের মধ্যে ৮০ শতাংশ কিশোর বা তরুণ। মাদকাসক্ত হওয়ার ফলে শুধু যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, তা নয়। একই সঙ্গে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটায়। মাদকাসক্তদের মধ্যে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই মাদকাসক্তি থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এর পেছনের কারণ এবং যুগোপযোগী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। 
মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদক সহজে প্রবেশ করায় অলিগলি থেকে শুরু করে বস্তি– সব জায়গায় এর কারবার চলে এবং অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মাদকের কারবার বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এ ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে। ছিন্নমূল মানুষকে অল্প টাকায় এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। যার ফলে তারা একসময় হচ্ছে মাদকাসক্ত এবং জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। তাই মাদক কারবারে জড়িত সবাইকে কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে সহজে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করতে না পারে।
অনেক পুলিশ সদস্যও মাদক কারবারে জড়িত। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে এবং সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।
সাধারণত ব্যক্তিগত জীবনে ব্যর্থতা, পারিবারিক কোলাহল, বেকারত্ব, বিষণ্নতা আর অবসাদ থেকেও অনেকের মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। পরিবারের উচিত সন্তানের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তাদের সময় দেওয়া। যারা ইতোমধ্যে মাদকাসক্ত, তাদের সুস্থ করতে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে আইনের সহায়তা নেওয়া। তা ছাড়া বাবা-মায়ের উচিত প্রত্যেক সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এবং নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা।
কথায় আছে– ‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’। তেমনি অসৎসঙ্গ অনেক সময় মাদকাসক্ত করে তোলে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধু নির্বাচনে সচেতন থাকা এবং বাবা-মায়ের উচিত সন্তান কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, সেদিকে নজর দেওয়া। যেসব কিশোর মাদকাসক্ত হয়ে নানা অপরাধে যুক্ত, তাদের সঠিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া। যদিও একবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তা থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য। পরিবার ও সমাজের সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং রাষ্ট্রের কার্যকরী পদক্ষেপই পারে মাদকাসক্তির ভয়াল থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করতে।

nনুসরাত সুলতানা: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
nusratsultana.

cu57@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রবাসে বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহনন প্রবণতা

দেশের বাজারে চাকরির সংকট কিংবা কম বেতন অথবা কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকাসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রবাসী হচ্ছে। মূলত অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং জীবনমান উন্নয়নের আশায় পাড়ি জমায় দূর প্রবাসে।

২০২৪–এর একটি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখের বেশি, এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবেই আছে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে চলছে দেশের অর্থনীতি। তবে দুঃখের বিষয় বিশাল এই জনগোষ্ঠীর দুঃখের বাস্তব চিত্র কোথাও তুলে ধরা হয় না।

একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কখনোই অকারণে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয় না, দেশের কেউ আত্মহত্যা করলে সেটার কারণ হয়তো পরিবার কিংবা আশপাশের মানুষ কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। তবে প্রবাসে এই চিত্র ভিন্ন, এখানে নিজের খবর নিজেরই রাখার সময় হয় না। ফলে দেখা যায়, একই রুমে থেকেও রুমমেট কী কারণে আত্মহত্যা করছে, সেটি টেরও পাওয়া যায় না।

আমি নিজে একজন প্রবাসী হিসেবে প্রবাসে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে কয়েকটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।

বৈবাহিক জীবনে অশান্তি

প্রবাসে যেসব পুরুষ আত্মহত্যা করেন তাঁদের বেশির ভাগ বিবাহিত। স্ত্রীকে দেশে রেখে অনেক প্রবাসী শ্রমিক বছরের পর বছর প্রবাসে থেকে যান। অনেক সময় ভিসা, আকামা না থাকায় কয়েক বছরেও যাওয়া হয় না দেশে, যার প্রভাব গিয়ে পড়ে বৈবাহিক জীবনে। ফলে সম্পর্কে দেখা দেয় ভাঙন। এখানে পারিবারিক অশান্তি, পরকিয়াসহ বিবিধ কারণ যুক্ত। এসব কারণে অনেক প্রবাসী আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেন।

ঋণ শোধ করার চাপ

অনেক প্রবাসী চক্রবৃদ্ধি সুদে অথবা উচ্চ সুদে লোন করে এখানে আসেন, তিনি সেই লোনের টাকা শোধ করতে পারেন না, পাওনাদার পরিবারকে নানা রকম চাপ দেয়। এরপর সেই চাপটা আবার ওই প্রবাসীর ওপরই ফিরে আসছে। এ চাপটা নিতে না পেরেই অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।

নারী কর্মীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা

দেশে থাকা দালাল নানা রকম চটকদার কথা বললেও বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিকদের জীবন এক বিভীষিকাময় জেল বললেই চলে। বিশেষত যাঁরা বাসাবাড়িতে কাজের ভিসায় আসেন, তাঁদের বেশির ভাগই নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়েন। কাজের কোনো নির্ধারিত সময় কিংবা ধরন কোনো কিছুরই ঠিক থাকে না। এরপরও অনেকের বেতন দেয় না ঠিকমতো। আবার নারী কর্মীদের কুকাজের প্রস্তাব করেন এমন সংখ্যাও কম না। এ ছাড়া শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের স্বীকারও হতে হয় অনেককে। এর বাইরেও দালালেরা নানা কাজের কথা বলে এখানে এনে দেহ ব্যবসার মতো কাজেও নারীদের কাজ করতে বাধ্য করে। এসব চতুর্মুখী সমস্যা মোকাবিলা করে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে যায়, ফলে অনেকে নিয়ে নেন আত্মহননের সিদ্ধান্ত।

প্রবাসে আত্মহনন বন্ধে সরকারকে হতে হবে প্রবাসীবান্ধব। সরকার চাইলে চালু করতে পারে প্রবাসী সহায়তা অ্যাপস, যেখানে প্রবাসীরা যেকোনো সমস্যা হলে সেটি মোবাইলের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা অভিবাসনপ্রত্যাশী তাঁদের যেকোনো একটি কাজে দক্ষ করে সেই কাজের ভিসায় অনুমতি দেওয়া এবং প্রবাসযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনা। প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদেরও খেয়াল রাখতে হবে প্রবাসীর মানসিক ব্যাপারে।

প্রবাসে আত্মহত্যা করা অনেক প্রবাসীর পরিবার মনে করে তাদের স্বজন হত্যার শিকার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা লাশের শরীরে বিভিন্ন রকম জখমের দাগকে উদাহরণ হিসেবে দেখায়। আত্মহত্যাকে হত্যা দাবি করা লাশের অধিকাংশই থাকেন প্রবাসে গৃহপরিচারিকার কাজে। এসব ক্ষেত্রে উচিত দেশে লাশ এলে সেটি আবার পোস্টমর্টেম করা। প্রবাসী বাঁচলে বাড়বে রেমিট্যান্স, রেমিট্যান্স বাড়লে এগোবে দেশ।

মিনহাজ বিন মাহবুব

কাতারের দোহায় কর্মরত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা

ই–মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনীতি থেকে কি হারিয়ে যাবেন নারীরা
  • প্রবাসে বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহনন প্রবণতা