এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ল র দ ম কম এ পর স থ ত ব শ বব জ র প রবণত দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য যে দেশগুলো বেশি দায়ী সেই দেশগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বরাদ্দকৃত অর্থ পেয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো ধনী পেট্রো দেশগুলো রয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং কার্বন ব্রিফ জাতিসংঘে জমা দেওয়া তথ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, কীভাবে জনসাধারণের কোটি কোটি ডলার বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খরচ করা হচ্ছে।

তদন্তে একটি ব্যাপকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা পাওয়া গেছে যা ধনী দূষণকারীদের থেকে দুর্বল দেশগুলোতে মূলধন স্থানান্তর করে, তাদের অর্থনীতি স্বচ্ছ করতে এবং একটি উষ্ণ বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে।

কিন্তু আরো দেখা গেছে যে, তহবিলের বৃহত্তম অংশের বিতরণে কোনো কেন্দ্রীয় তদারকি ছিল না। এই বিতরণ সম্পূর্ণরূপে আলাদা আলাদা দেশগুলোর বিবেচনার ভিত্তিতে ছিল। তাই এটি রাজনৈতিক স্বার্থের বিষয় ছিল এবং সবসময় যেখানে এই তহবিল যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ হয়নি।

অবশ্য সরকারি তথ্য জলবায়ু তহবিলের সব প্রাপকের সন্ধান করার জন্য যথেষ্ট বিস্তৃত নয়। তবে গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে তহবিলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ বিশ্বের ৪৪টি দরিদ্রতম দেশে গেছে, যা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে পরিচিত। এর বেশিরভাগই ছিল অনুদানের পরিবর্তে ঋণের আকারে।

কিছু স্বল্পোন্নত দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পেয়েছে, যার পরিশোধের শর্ত সরকারকে আরো ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিতে পারে। বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলার ক্ষেত্রে ঋণের অংশ ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।

বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার জন্য দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের এক শীর্ষ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য তাদের বৃহত্তর দায়িত্ব পালন এবং সমাধানের জন্য তহবিল সরবরাহের ক্ষমতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক জমা দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে,  ২০২১ ও ২০২২ সালে কোপেনহেগেনের লক্ষ্যমাত্রা বিলম্বিতভাবে পূরণ করা হয়েছিল। ওই সময় ২০ হাজারেরও বেশি বৈশ্বিক প্রকল্পের আওতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে পেট্রো ডলারের দেশগুলোর কাছে, সেইসাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের কাছে।

ফ্রান্স ও কানাডার সমান মাথাপিছু জিডিপিসহ জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক সংযুক্ত আরব আমিরাত জাপান থেকে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে যা জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আবুধাবিতে একটি অফশোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের জন্য ৬২৫ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে একটি বর্জ্য পোড়ানোর যন্ত্রের জন্য ৪৫২ মিলিয়ন ডলার।

বিশাল তেলক্ষেত্র এবং আরামকোর বেশিরভাগ মালিকানাধীনতার কারণে শীর্ষ ১০ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সৌদি আরব। এই দেশটি জাপান থেকে প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তার বিদ্যুৎ কোম্পানিকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং একটি সৌর খামারের জন্য ৭৮ মিলিয়ন ডলার।

বলকান অঞ্চলের ছয়টি দেশ যারা ইইউতে যোগদানের আশা করছে তারা জলবায়ু অর্থায়নে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে। অর্থের সিংহভাগ সার্বিয়ায় গেছে, যা মাথাপিছু ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় ১০ গুণ বেশি অর্থ পেয়েছে।

প্রতিবেদনের সময়কালে ভারত ছিল এককভাবে বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী, যেটি প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। একইসময় চীন পেয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, যা বেশিরভাগই বহুপাক্ষিক ব্যাংক থেকে।

 ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিচালক সারা কোলেনব্র্যান্ডার বলেন, “এর ফলে ইসরায়েল, কোরিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো - যারা গত ৩০ বছরে প্রচুর পরিমাণে কার্বন পদচিহ্নের কারণে ধনী দেশ হয়ে উঠেছে - তাদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বাধ্য করছে। এটা হাস্যকর যে এই জাতীয় দেশগুলো টোগো, টোঙ্গা এবং তানজানিয়ার মতো দেশগুলোর মতো একই বিভাগে রয়ে গেছে।”

বিশ্বের কিছু দরিদ্রতম দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পায়, যদিও সতর্ক করা হয়েছে যে অনেকেই শর্তাবলী এবং সুদ পরিশোধ করতে পারে না।

আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জলবায়ু অর্থায়ন পরিচালক ঋতু ভরদ্বাজ বলেন, “জলবায়ু অর্থায়নের লুকানো গল্প প্রতিশ্রুতির পরিমাণে নয় বরং এর আকারে। জলবায়ু অর্থায়ন দরিদ্র দেশগুলোর উপর আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দান করা অর্থ যদি একটি ছাড়ের ঋণও হয়, তবুও সেই ঋণগুলোর এমন শর্তও থাকে যা গ্রহীতার চেয়ে ঋণদাতাকেই বেশি লাভবান করতে পারে।”
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • বাঙালি মুসলমান চিন্তার মেরুকরণ
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো
  • বর্তমান সংবিধান মানলে পরবর্তী নির্বাচন ২০২৯ সালে: ফরহাদ মজহার
  • জুলাই হত্যা মামলায় ফেনীতে কারাগারে থাকা প্রবাসীর জামিন
  • জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গেজেট প্রকাশ
  • বাপেক্সে নিয়োগের ফল প্রকাশ, ৯ম ও ১০ম গ্রেডে সুপারিশ পেলেন ৭১ জন
  • নারী শ্রমিকের প্রতি বৈষম্য আর কত দিন