ইউপি সদস্য ও তার ভাবীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ প্রবাসীর বিরুদ্ধে
Published: 28th, June 2025 GMT
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কের জেরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শহিদুল ইসলাম ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী ইউনুস শেখ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ সময় শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনা বেগমকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ৫ নং চন্ডিপুর ইউনিয়নের ২ নং চরবলেশ্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ মূল ঘাতক ইউনুস শেখের বড়ভাই রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামাান সেলিম হাওলাদারের ছোটভাই ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের সঙ্গে চরবলেশ্বর গ্রামের প্রবাসী ইউনুস হাওলাদারের স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম একাধিকার স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছে। তিনি নারী নির্যাতনের এক মামলায় এক বছর আগে গ্রেপ্তারও হন। সম্প্রতি একটি নাশকতার মামলায় জেল থেকে বের হয়ে সে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে আবার সম্পর্ক গড়ে তুলে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হলে এই ঘটনার জেরে ইউনুস শেখ তার লোকজন নিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামকে (৫২) তার ঘরের সামনের পুকুরঘাটে কুপিয়ে হত্যা করে।
শহিদুল ইসলামের চিৎকার শুনে তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ও বড় ভাই মর্তুজা হাওলাদারের স্ত্রী মুকুল বেগম ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এদের মধ্যে মতুর্জার স্ত্রী মুকুল বেগমও (৪০) মারা যায়। ইউপি সদস্যের স্ত্রী রেহেনা বেগমকে পুলিশ উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত শহিদুল ইসলামের মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তোহা মনি পুলিশকে বলেন, রাত ১১টার পর আমার বাবা ফকিরহাট বাজার থেকে এসে আমাদের ঘরের সামনের পুকুরঘাটে বসেছিল। এ সময় পূর্ব থেকে ওঁত পেতে থাকা পার্শ্ববর্তী ইউনুস শেখ তার লোকজন নিয়ে আমার বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। চিৎকার শুনে আমরা মা ও কাকী বের হলে তাদেরকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এর মধ্যে কাকী মারা যায়, মাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থাও ভাল না।
৫ নং চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু বলেন, গত রাতে পূর্ব-শত্রুতার জেরে আমার পরিষদের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ ইউনুস শেখ ও তার সহযোগীরা বলে লোকমুখে শুনেছি। হত্যা কোনো ফয়সালা নয়। আমি দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।
ইন্দুরকানী থানার ওসি মারুফ হোসেন বলেন, পরকীয়ার জেরে প্রবাসী ইউনুস শেখ ও তার সহযোগীরা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ও তার ভাইয়ের বউকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তার স্ত্রীকেও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইউনুস শেখের বড়ভাই রফিকুল ইসলামকে রাতে আটক করা হয়েছে। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউপ সদস য প রব স ইউন স শ খ প রব স এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ
নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।
আরো পড়ুন:
ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু
মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক
কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।