সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকবার আকাশে জমেছিল মেঘ। শেষ পর্যন্ত সারাদিন বৃষ্টির দেখা মিলল না। এমনই মেঘমেদুর দিনে নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে আকাশি-নীল রঙের শাড়িতে সেজেছিলেন তরুণীরা। ছেলেদের পোশাকেও ছিল বর্ষার রং, নীল পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা।
আষাঢ়ের ৮ম দিনে গান-কবিতায় বর্ষাকে বরণ করল বাচিক শিল্প চর্চা কেন্দ্র ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’। ২০১৪ সাল থেকে ১২ বছর ধরে নগরীতে বর্ষাবরণ অনুষ্ঠান করে আসছে সংগঠনটি। এবারের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কবি ও অধ্যাপক হোসাইন কবিরের কথনের মধ্য দিয়ে। স্বাগত বক্তব্য দেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম।
আবৃত্তিশিল্পী মুফরাত হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে অদিতি সংগীতনিকেতন ও সুরানন্দ শিশুদের সংগীত জগৎ। সৌরভী নাথের নির্দেশনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যময়ী একাডেমি। কবি নজরুল একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল দলীয় নৃত্য এবং সম্মিলিত যন্ত্রসংগীত।
অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আল তুষি, রুবেল চৌধুরী ও আনিকা চৌধুরী। বর্ষার কবিতায় ত্রয়ী আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিলেন রাজেশ্বরী চৌধুরী, পায়েল বিশ্বাস, অনামিকা দাশ, পূর্ণিমা লালা, পিংকী কর, শর্মিলী বণিক, জুয়েনা আফসানা, চিংকু রানী শীল, ফেরদৌস বেগম ডলি, স্বপ্না জিমি, ভুবন দাশ ত্রয়ী ও প্রজ্ঞা লাবনী চৌধুরী।
দলীয় আবৃত্তিতে আবৃত্তিশিল্পী কারিশমা কবির ঐশী ও মুফরাত হোসেনের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নববর্ষা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের বড়দের বিভাগের অর্ধশত শিল্পী। শারমিন মুস্তারী নাজুর পরিচালনায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আবৃত্তি কর্মশালার ৩২তম আবর্তনের প্রশিক্ষণার্থীরা পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’। কারিশমা কবির ঐশী ও রাজেশ্বরী চৌধুরীর পরিচালনায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস শিশু বিভাগ পরিবেশন করে প্রযোজনা ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’।
মোহাম্মদ মুফরাত হোসেনের পরিবেশনায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বড়দের বিভাগ পরিবেশন করে প্রযোজনা ‘আমি বাংলার গান গাই’। এতে অংশ নেন সৌমেন দাশ, নাজিম উদ্দীন, অরিন্দম সরকার, আরিফুর রহমান, তাহসির আরাফাত। দলীয় পরিবেশনায় আরও অংশ নেন সেকান্দার হোসেন, রণবীর শাওন, সঙ্গীতা রানী দেবী, শমীতা দাশ, বিজয়া ভট্টাচার্য, আদিবা তাবাসসুম, নিশিতা বসু, ডেজি দত্ত, উম্মুল ওয়ারা, শাহীনুর আক্তার সুরাইয়া সুলতানা, মাইমুনা আক্তার ও সামান্তা দাশ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের মন্দির
মানুষের মন্দির
এটি ছিল এক বিষণ্ন রাত
ফ্যাকাশে আলোর সঙ্গে,
হৈমন্তী চাঁদের আলোয়
আলোকসজ্জিত আকাশ।
আমরা আনন্দে একত্র হয়েছিলাম
শরতের রোদে রাঙা দুপুরে
আমাদের ঘামের ফসল হাতে
. . . . . . . . . . .
আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি
আমাদের বপনের ঋতুতে
আমাদের যত্নের ঋতুতে,
আমরা ছিলাম অধ্যবসায়ী
আমরা ছিলাম নিবেদিত
আমাদের প্রচেষ্টা প্রতি,
এখন সময় এসেছে ফসল তোলার।
এই সব দিনে
আমরা ভোগ করি পরিশ্রমের ফসল
আমাদের আগে ছিল যারা,
বুঝি না আত্মত্যাগের মানে
যা জন্ম নিয়েছে
নিজের গড়া গৌরবের ছায়া হতে।
আমারও লোভার্ত হাত পৌঁছেছিল সেই আলমারিতে
একটি নিরবচ্ছিন্ন চেতনা নিয়ে,
প্রাচুর্যের মানে বুঝতে অপারগ,
এক নিঃশব্দ অস্বীকৃতির ভারে।
. . . . . . . . . . . .
এই সময়ে
কিছু মানুষ আছে,
আমার প্রতিবেশীরা,
আমার সহপথিক মানবেরা
অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তবু ভোগে যন্ত্রণায়।
এদিকে আমার কঠিন চেতনা
আসে আর যায়
সহানুভূতির প্রাঙ্গণ দিয়ে,
ফেলে রেখে যায়
আমার জন্মগত ও ঈশ্বরপ্রদত্ত করুণা,
আমার অসংবেদনশীলতার দ্বারে।
.. . . . . . . . . . .
দশমাংশ কী,
এ কি শুধু এইটুকুই...
আমাদের সীমিত পকেট আর পার্স খালি করা
চাঁদার ঝুড়িতে ফেলার জন্য?
. . . . . . . .
আমি আমার দশম ভেড়া কোথায় দেব,
আমার দশম ছাগল,
আর কোন মন্দিরে...?
এ কি মানুষের তৈরি মন্দির,
ইট, চুনসুরকি আর কাঠ দিয়ে গড়া,
যেখানে আমরা জমায়েত হই
আমাদের স্বেচ্ছায় জমানো অস্থিরতা উজাড় করতে,
নাকি এটা তার চেয়ে বড় কিছু,
একটি মন্দির যা বিরাট কোনো চেতনার জগতে বিরাজমান,
যা আমাদের সকলকে আপন করে জড়িয়ে ধরে?
যখনযখন সবকিছু ধসে পড়বে,
তখন তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে?
যখন আকাশ নিজেকে গুটিয়ে নেবে,
তখন তুমি কীভাবে নিশ্বাস নেবে?
যখন তারারা তাদের আলো নিভিয়ে দেবে,
তখন কি আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাটাও
অদৃশ্য হয়ে যাবে?
যখন হাসি ব্যথার জন্ম দেবে,
তখন কি আমরা
অর্থবোধক অনুভূতি থেকে
সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে যাব?
যখন আমরা আর আহারের জন্য ক্ষুধার্ত থাকব না,
তখন কি আমরা সময়ের মৃত্যুযাত্রায়
নীরবে আত্মসমর্পণ করব?
যখন দিগন্তের শেষ
আমাদের সামনে দাঁড়াবে,
তখন কি আমরা ছুটে বেড়াব
সবকিছু মনে করতে, ফিরে পেতে
যা আমরা অবহেলা করেছি,
ধ্বংস করেছি, ভুলে গেছি?
যখন সব ‘কেন’র উত্তর মিলবে,
তখন কি আমরা অবশেষে বুঝতে পারব?
যেমন মি. স্মিথ বলেছিল নিওকে,
আমরা একধরনের ভাইরাস,
একটা বিপজ্জনক জাত
যাদের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো
ধ্বংস করার দক্ষতা।
এই আত্মনির্মিত দুঃস্বপ্ন
কবে শেষ হবে?
কবে?