বগুড়ায় তিন দিন ধরে নিখোঁজ যুবকের লাশ ভাসছিল লেকে
Published: 29th, June 2025 GMT
বগুড়ায় নিখোঁজের তিন দিন পর এক যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্টেশন বোট ক্লাবের লেক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
ওই যুবকের নাম হাসিন রাইহান ওরফে সৌমিক (৩০)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার কোহিনূর গার্ডেনের বাসিন্দা তৌফিকুর রহমানের ছেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি জেলার সোনাতলা উপজেলার আগুনাতাইড় গ্রামে।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাসিন রাইহান নিখোঁজ ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাসিন রাইহান নিখোঁজের ঘটনায় গত শুক্রবার তাঁর বাবা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাঁর সন্ধান চেয়ে থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছিল। আজ সকাল সোয়া ৯টার দিকে মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্টের বি-ব্লক এলাকার স্টেশন বোট ক্লাবের লেকে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে হাসিন রাইহানের স্বজনেরা লাশ দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেন।
ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এখন পর্যন্ত হত্যার কোনো আলামতও মেলেনি।
হাসিনের মা আনজুমান আরা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁর ছেলে। বগুড়ায় তাঁর তেমন কোনো বন্ধু নেই। স্মার্টফোন বা ফেসবুক আইডিও নেই। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে হাঁটতে বের হন। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁর কাছে থাকা বাটন ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজনদের কাছে খোঁজ করেও না পাওয়ায় সদর থানায় জিডি করা হয়।
সদর থানার ওসি হাসান বাসির প্রথম আলোকে বলেন, হাসিনের নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর বাবা থানায় জিডি করলে সন্ধান চেয়ে থানায় থানায় বার্তা পাঠানো হয়। তিন দিনের মাথায় তাঁর লাশ উদ্ধার হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন বাবা-মেয়ে
পড়াশোনায় বয়স কোনো বাধা নয়, চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। এটি আবারও প্রমাণ করলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার আবদুল হান্নান। ৪২ বছর বয়সী হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
হান্নান বাঘা কাকড়ামারী কলেজ থেকে এবং হালিমা খাতুন (১৭) গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
হান্নান গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লার মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তাঁর এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে আবু হানিফ নিরব (১৩) নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে রমজান মিয়ার বয়স মাত্র ছয় বছর।
১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন হান্নান। তখনই লেখাপড়া ছেড়েছেন তিনি। এর পর পৈতৃক সূত্রে গোপালপুর রেলগেট এলাকায় পাওয়া একটা দোকানে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। পরে বিয়ে করে সংসার জীবনে থিতু হন। এক পর্যায়ে লেখাপড়ার প্রতি আবারও ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। ২০২১ সালে কাউকে না জানিয়ে উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম (ভোকেশনাল) শ্রেণিতে ভর্তি হন। দুই বছর পর মেয়ে হালিমার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে প্রশংসা কুড়ান তিনি।
আবদুল হান্নান বলেন, লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাসের পর এবার এইচএসসি পরীক্ষাও দিচ্ছি। শুধু এইচএসসি নয়, মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করার ইচ্ছে তাঁর।
মেয়ে হালিমা খাতুন জানান, বাবার মেধা আছে এবং ইচ্ছাশক্তি আছে। লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তিনি এসএসসি পাস করে আবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরস্পরের মধ্যে লেখাপড়া নিয়ে প্রতিযোগিতাও রয়েছে বলে জানান তিনি। হালিমা জানান, বাবার জন্য তিনি গর্ববোধ করেন। তাঁর বাবাকে দেখে অন্যরা পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
আবদুল হান্নানের প্রতিবেশী মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়, মনের ইচ্ছাটাই বড়– আবদুল হান্নান তা প্রমাণ করেছেন। সবার জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাবা ও মেয়ের একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি শুনেছি। উচ্চশিক্ষা অর্জনে উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।