কসমোপ্রফ প্রদর্শনীতে ৩ মিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ পেল রিমার্ক
Published: 29th, June 2025 GMT
বিশ্বের বৃহত্তম কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যের প্রদর্শনী কসমোপ্রফ (সিবিই আশিয়ান)-২০২৫এ অংশ নিয়ে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারের কসমেটিকস পণ্যের রফতানি আদেশ পেয়েছে রিমার্ক এলএলসি ইউএসএ’র এফিলিয়েটেড রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। একইসঙ্গে থাইল্যান্ডসহ ২৭টি দেশের ১৭০টি কোম্পানির ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ দেশের জন্য রিমার্কের গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সোল ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
রিমার্কের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের (আইবিইউ) প্রধান রাশেদুল ইসলাম জানান, রিমার্কের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসায়িক ইউনিট ‘হারল্যান নিউইয়র্ক কোম্পানি লিমিটেড (থাইল্যান্ড)’ যৌথভাবে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শন করে। মেলায় রিমার্কের স্টল ঘিরে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ছিলো প্রচন্ড আগ্রহ। বিশেষ করে তিন দিনের এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে রিমার্কের স্টল ভিজিট করেছেন থাইল্যান্ডের সেলিব্রেটিরা। সেখানে তারা বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে দেখেন এবং উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তিনি জানান, কসমোপ্রফ ২০২৫ প্রদর্শনীতে আমাদের পণ্য নিয়ে ২৭টি দেশের ১৭০টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, চীন ও ভারতসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজার উল্লেখযোগ্য। কোম্পানিগুলো রিমার্কের গ্লোবাল ব্র্যান্ডের পণ্য ছাড়াও যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়ীক পরিধি বৃদ্ধি এবং প্রাইভেট লেবেল ম্যানুফ্যাকচারিং আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মেলায় মোট অর্ডারের পরিমাণ প্রায় ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি আরো জানান, এবারের কসমোপ্রফে উদ্ভাবনী পণ্যের তালিকায় অন্যতম আকর্ষণ ছিলো রিমার্কের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড এর প্রায় শতাধিক পণ্য। এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের সুবিশাল বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য রফতানি হচ্ছে। এবারের কসমোপ্রফ থেকে নতুন রফতানি আদেশ বাংলাদেশে কসমেটিকস পণ্য উৎপাদনের আরেকটি মাইলফলক পার করবে বলে মনে করছি।
গত ২৫ থেকে ২৭ জুন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কুইন সিরিকিট ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ফিনিশড প্রোডাক্ট ক্যাটাগরিতে ১ নম্বর হলে রিমার্কের ব্র্যান্ডগুলোর প্রদর্শনী হয়। বিশ্বের দুই হাজারেরও বেশি খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অংশ নেয় রিমার্কের ব্র্যান্ড এবং পণ্য। বিশেষ করে নিওর, হারল্যান, ব্লেইজ ও স্কিন, ডার্মা ইউ, ক্যাভোটিন, ইউএস লিলিসহ রিমার্কের বেশ কিছু কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ৩৫ হাজার দর্শনার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করে।
রিমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, ‘‘সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ রিমার্ক এইচবির উৎপাদন প্রক্রিয়া সিজিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস সার্টিফিকেট) এবং আইএসও স্বীকৃত যা নিশ্চিত করে যে সকল পণ্য সর্বোচ্চ গুণগত ও নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসারে তৈরি করা হয়। এই উৎকর্ষতার প্রতিশ্রুতি রিমার্ক এইচবি লিমিটেডকে বাংলাদেশের কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্পে শীর্ষস্থানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি আমরা দেশের শিল্প খাতের সর্বোচ্চ সম্মাননা গ্রীন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি।’’
‘‘বিশ্বের বৃহৎ এই আয়োজনে রিমার্কের বাংলাদেশে উৎপাদিত গ্লোবাল ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো প্রদর্শন করা হয়। কসমোপ্রফে এবারই প্রথম কোন বিদেশী ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শন হয়। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্য রফতানিতে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে। রিমার্কের এই প্রতিনিধিত্ব দক্ষিণ এশিয়ার কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার খাতের জন্য একটি মাইলফলক,’’ বলেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এএসবিএমইবি) জেনারেল সেক্রেটারী জামাল উদ্দীন বলেন, ‘‘আমাদের জন্য খুবই খুশির কথা যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যের প্রতি বিদেশিরা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে। বিদেশিরা এদেশের পণ্য নিতে চাচ্ছে। যা বড় ধরনের সাফল্য। এটা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত পন্য এখন আন্তর্জাতিক মানসম্মত এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী। এজন্য রিমার্ককে ধন্যবাদ। কসমেটিকস খাত ভবিষ্যতে অন্যতম রফতানি খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও এই খাতে বিনিয়োগ হয়নি। বর্তমানে যেসব উদ্যোক্তা কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন তাদের জন্য সরকারের নীতি সহায়তা ঘোষণা করা প্রয়োজন। সহায়ক নীতি থাকলে এই খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘উদ্ভাবনী দক্ষতা, সাশ্রয়ী মূল্য ও গুণগত মানের উপর জোর দিয়ে রিমার্ক এইচবি লিমিটেড বাংলাদেশের কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রিমার্কের নিবিড় গবেষণা ও অত্যাধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে কার্যকরী ও নিরাপদ স্কিনকেয়ার সমাধান দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে প্রতিষ্ঠানটি যেমন মানসম্মত পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেছে, তেমনি বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করেছে। আমরা যতটুকু দেখেছি, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়ে আমাদের দেশে রিমার্কের উৎপাদিত কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্য অনেক উন্নত।’’
উল্লেখ্য, লাখো ভোক্তার আস্থা অর্জন করে রিমার্ক এইচবি দক্ষিণ এশিয়ায় কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। গুণগত মান, সাশ্রয়ী মূল্য ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এই শিল্পে একটি নতুন সংজ্ঞা রচনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ত্বকের নানান সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে রিমার্কের গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো।
ইতোমধ্যে রিমার্কের আন্তর্জাতিক পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্য অনেক দেশে রফতানি হচ্ছে এবং নতুন নতুন গন্তব্যে রফতানি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শাহেদ//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম র ক এইচব র জন য রফত ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বাঙালি মুসলিমদের নিশানা করেই কি আসামে আদিবাসীদের অস্ত্র দিচ্ছে রাজ্য সরকার
ভারতের আসাম রাজ্যের বিজেপি সরকার তীব্র বিতর্ক সত্ত্বেও গতকাল বৃহস্পতিবার আদিবাসীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ওই দিনই জানানো হয়েছে, অনলাইনে আবেদন করে রাজ্যের ‘অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত’ এলাকায় বসবাসকারী ‘মূল নিবাসী উপজাতি গোষ্ঠীর’ মানুষ আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
ভারতের সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, বিজেপিশাসিত রাজ্যের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অতীতের একাধিক ভাষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে ‘অরক্ষিত’ এলাকা বলতে এমন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে বাঙালি-বংশোদ্ভূত মুসলিমরা বসবাস করেন।
রাজ্যের একাংশের মানুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে শুক্রবার বলেন, এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতে সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিল।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নাগরিকের হাতে অস্ত্র থাকা প্রয়োজন: মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত
অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বৃহস্পতিবার পোর্টাল চালু করার সময় মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘যদি আমি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বা আন্তরাষ্ট্রীয় সীমানা অঞ্চলের কাছাকাছি থাকি, অথবা আমি এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করি, যেখানে আমার সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা খুবই কম। যদি সেখানে একটি সম্প্রদায়ের হার ৯০-৯৫ শতাংশ হয় এবং অপর সম্প্রদায় ৫ শতাংশ হয়, তবে সেখানে উত্তেজনা থাকবে। ঐতিহাসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক—সব স্তরেই উত্তেজনা থাকবে। একটি ছোট ঘটনা এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে পারে যেখানে ৯৫ শতাংশের সম্প্রদায় ৫ শতাংশকে আক্রমণ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে।’
আসামের আদিবাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর আরও যুক্তি, সাধারণভাবে একটি থানায় ৬ থেকে ১২ জন কনস্টেবল থাকেন। কোনো সংঘাত হলে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
বিজেপির এই উগ্রবাদী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই দুই-তিন ঘণ্টা আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। এবং যদি লোকেরা (আক্রমণকারীরা) এটা জানে, আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত বাড়িতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে, তাহলে এটিই একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের ‘প্রথম প্রতিরক্ষক’ বলেও উল্লেখ করেন হিমন্ত।
কারা পেতে পারেন আগ্নেয়াস্ত্র
আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের জন্য ‘সেবা সেতু’ নামে একটি পোর্টালে আবেদন করা যাবে। সেবা সেতু ওয়েবসাইটে এত দিন আসাম সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পরিষেবার ঘোষণা দেওয়া হতো। সেসবের পাশাপাশি এখন জানানো হয়েছে, কারা আগ্নেয়াস্ত্র পেতে পারেন।
ওয়েবসাইটে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদনকারীকে আসামের আদিবাসী হতে হবে, তার বয়স কমপক্ষে ২১ হতে হবে এবং ‘অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত’ অঞ্চলে বসবাস করতে হবে। আবেদনকারীর অপরাধমূলক কোনো ব্যক্তিগত ইতিহাস থাকা চলবে না এবং তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও থাকা চলবে না।
সেবা সেতু ওয়েবসাইটে শর্তে আরও বলা হয়, আবেদনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। ২০১৬ সালের অস্ত্র আইন মোতাবেক উপযুক্ত প্রশিক্ষণও থাকতে হবে।
তবে প্রচারমাধ্যমের বক্তব্য অনুসারে, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ‘অরক্ষিত অঞ্চল’ বলতে বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলকে বোঝালেও সেবা সেতুতে অরক্ষিত অঞ্চলের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। বন্দুক সংগ্রহ করার আগে আরও একাধিক বিষয়—যেমন কেন তার আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োজন—এ বিষয়ে আবেদনকারীকে লিখিতভাবে তার বক্তব্য রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।
ভারতের বর্তমান অস্ত্র আইন অনুসারে একজন সাধারণ বেসামরিক নাগরিকের পক্ষে আইনগতভাবে অস্ত্র কেনা বা সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। আসাম সরকারের এই নতুন নির্দেশনা অস্ত্র সংগ্রহ করাকে অনেক সহজ করে দেবে বলে আসামের সাধারণ মানুষই মনে করছেন।
নাগরিক সমাজের বিরোধিতা
আজ শুক্রবার প্রথম আলোর সঙ্গে এই বিষয়ে আসামের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি আসামে তৈরি হতে চলেছে।’
ওই ব্যবসায়ী বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে আসামে এই মুহূর্তে প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলিম রয়েছেন, যাঁদের বড় অংশই বাঙালি মুসলমান। আসামে যে জনবিন্যাসের একটা পরিবর্তন হচ্ছে তা–ও অনস্বীকার্য। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, সমাজের একটি বৃহৎ অংশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে।
আসামের ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, যে রাজ্যে বা দেশে সাধারণ মানুষের হাতে বেশি অস্ত্র থাকে, সেখানে সাধারণভাবেই বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে মাঝেমধ্যেই স্কুল-কলেজে গুলি চলে। আসামে সুকৌশলে পরিস্থিতিকে সেই দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুনআসামে কাদের লক্ষ্য করে আদিবাসী, মূল নিবাসীদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দিল হিমান্তের সরকার৩০ মে ২০২৫উত্তর-পূর্ব ভারতে একসময় কর্মরত এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার মতে, এর ফলে আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশেও সহিংসতা বাড়বে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্দুক এমন এক জিনিস, যা এক জায়গায় থেমে থাকে না। একেকটি বন্দুকের বিরাট আয়ু হয়, যত্নে রাখলে একেকটি বন্দুক দীর্ঘদিন কাজ করে। ফলে এই আগ্নেয়াস্ত্র ধীরে ধীরে কালোবাজারে বিক্রি হবে এবং তা গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও ঢুকে পড়বে। আসামের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত রয়েছে।’
সাবেক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা, যার সীমান্তের মাত্র ২ শতাংশ রয়েছে ভারতের সঙ্গে। বাকি ৯৮ শতাংশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে।
অবসরপ্রাপ্ত ওই পুলিশ কর্তা বলছিলেন, ‘সেসব দেশের সঙ্গে নানা কারণে ভারতের সম্পর্ক বেশ খানিকটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা ঈশ্বরই জানেন।’
উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের কথায়, এর ফলে শুধু আসামে নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সহিংসতা বাড়বে। কারণ, এই বন্দুক সেখানেও পৌঁছবে।
ওই গবেষক বলেন, ‘আমার মনে হয় এই কাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হলো। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হয়তো এভাবে নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে তুলে ধরতে চাইছেন। কারণ, তিনি দেখেছেন, মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক জীবনে চরম উন্নতি করেছেন।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে হিমন্তের বিতর্কিত মন্তব্য, নিন্দা জানাল বিরোধীরা১৮ মে ২০২৪