বড় মামা খোরশেদ আলম রাজধানীর উত্তরার বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে গত শনিবার রাতে মারা যান তিনি। খবর পেয়ে খালাতো দুই ভাই নাঈমুল হক (৩৫) ও ফাহিম আহমেদ অমিত (২২) এবং তাদের ছোট মামা জাভেদ আলম খান (৫৫) ছুটে যান হাসপাতালে। সেখান থেকে খিলক্ষেতের কাওলার বাসায় ফেরার পথে উত্তরা আজমপুরে ট্রাকচাপায় তিনজনই প্রাণ হারান। গত শনিবার রাত ২টার দিকে উত্তরার আজমপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাথরবোঝাই ট্রাকটি জব্দ এবং চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ।   

উত্তরা পূর্ব থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় নাঈমের বাবা খাজা ওবাইদুল হক রোববার থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। 

স্বজনরা জানান, অমিত আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং নাঈম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। অমিত থাকতেন বনশ্রী ও নাঈম থাকতেন দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায়। তাদের মামা একই ঘটনায় নিহত ব্যবসায়ী জাভেদের বাড়ি খিলক্ষেতের কাওলায়। জাভেদ, নাঈম ও অমিত রাত ২টার দিকে আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। দুই ভাগনেকে নিয়ে জাভেদের কাওলার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। 

পুলিশ জানিয়েছে, তারা যখন বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন, তখন ঢাকাগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক তাদের ওপর উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অমিত ও নাঈমের মৃত্যু হয়। জাভেদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

স্বজনরা জানান, নাঈমের তিন বছর ৯ মাস বয়সের এক ছেলে রয়েছে। তাঁর বয়স যখন দুই বছর, তখন তাঁর মা রোজিনা আক্তার ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে তিনি দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী নানার বাসায় থাকেন। 

নাঈমের শ্বশুর দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুই বছর বয়সে আমার নাতি মাকে হারিয়েছে। এবার বাবাকে হারাল। ছোট্ট বয়সেই এতিম হয়ে গেল রেদোয়ান। মা বাবার ভালোবাসা বোঝারও বয়স হয়নি তার। ওর ভাগ্য কেন এমন হলো?’ তিনি জানান, নাঈমের গ্রামের বাড়ি ঢাকার ইসলামপুরে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলে রেদোয়ানকে নিয়ে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী শ্বশুরের বাসায় থাকতেন।

অমিত বনশ্রীতে বড় বোন মেহেজাবীন বিনতে আহমেদ মুমুর বাসায় থাকতেন। তাঁর বোনের দেবর মোমিনুল হক জানান, অমিতের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন। অমিত জন্মের সময় তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তখন তাঁর বাবা মোহাম্মদ মঞ্জু নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল সার কারখানায় চাকরি করতেন। মা মারা যাওয়ার পর দুই বোনের কাছে বড় হন তিনি। বোনদের বিয়ের পর বড় বোন মেহেজাবীনের সঙ্গে থাকতেন অমিত। মেহেজাবীন রাজধানীর বনশ্রীতে বাস করেন। 

কাঁদতে কাঁদতে মেহেজাবীন বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই অমিতকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। সে শুধু আমার ভাই নয়, আমার সন্তানের মতো। মামার মৃত্যুর খবর শুনে সে উত্তরায় গিয়েছিল। রাত সাড়ে ১১টায় তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। মামার লাশ দেখতে গিয়ে সে লাশ হয়ে গেল।’ 

একই রাতে সড়কে ঝরল আরও দুই প্রাণ

শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিপরীত পাশে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। তারা মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। রাতে অজ্ঞাত হিসেবে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। প্রথম পর্যায়ে দু’জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র তাদের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। নিহতরা হলেন– স্কুলছাত্র সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ (১৮) এবং তাঁর বন্ধু মামুনুর রশিদ ফাহিম (২৩)। ফাহিম দু্বাই প্রবাসী ছিলেন। তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে আর সাজ্জাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায়। সাজ্জাদ মতিঝিল মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র ছিল। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ভাগনে সাজ্জাদের লাশ শনাক্ত করতে এসে মামা বিল্লাল হোসেন জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাজ্জাদ ছোট। ফাহিম নোয়াখালী থেকে কয়েকদিন আগে সাজ্জাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। শনিবার রাতে সাজ্জদ তার নিজের মোটরসাইকেলে ফাহিমকে নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে বের হয়েছিল। রোববার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের মাধ্যমে তারা সাজ্জাদ ও ফাহিমের মৃত্যুর খবর পান। 

কাফরুল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন রোববার বিকেলে বলেন, মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়েছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত য় র পর র বব র থ কত ন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ সাজিদের শাহাদাতবার্ষিকীতে জবি শিবিরের আলোচনা সভা

জুলাই বিপ্লবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র শহীদ শিক্ষার্থী একরামুল হক সাজিদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া, কুরআন খতম ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে শাখা ছাত্রশিবির। একইসঙ্গে শহীদের বাবার সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত আয়োজন করে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) মাগরিবের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মাগরিবের নামাজ শেষে মসজিদের প্রধান খতিব হাফেজ মাওলানা সালাহ্ উদ্দিন ‘শাহাদাতের গুরুত্ব ও শহীদের মর্যাদা’ শীর্ষক আলোচনায় বলেন, “শহীদরা আল্লাহর পথে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে চিরস্থায়ী এবং জাতির ইতিহাসে অমর হয়ে থাকে।”

আরো পড়ুন:

বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সংসদের নেতৃত্বে জাহিন-রাফি

শাখা শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহেদ বলেন, “শহীদ সাজিদ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার আদর্শ ও ত্যাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে সাহস জোগাবে।”

আলোচনা শেষে শাখা শিবির সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে শহীদ সাজিদের রুহের মাগফিরাত, পরিবারের জন্য ধৈর্য ও সাহস এবং তার বাবার সুস্থতা কামনা করা হয়।

একরামুল হক সাজিদ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণআন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ