কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ‘ধর্ষণ’ ও নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নারী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জোটের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের পক্ষ থেকে কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর প্রতি সংঘটিত যৌন এবং অনলাইন সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ ঘটনা–সংশ্লিষ্ট ভিডিও দ্রুত সরিয়ে নেওয়া এবং ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৬ জুন রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি ভুক্তভোগী নারীকে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে ধর্ষণ করেন। চার ব্যক্তি এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভুক্তভোগীর আর্তনাদে প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা ভাঙা এবং কিছু লোক তাঁকে মারধর করছেন। সেই মারধরের ভিডিও ধারণ করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিশেষ আবেদন জানানো হয়।

ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন যথাক্রমে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত অধ্যাদেশ ২০২৫)–এর ৯(১) ধারায় ধর্ষণ অপরাধকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ১৪ ধারায় অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনে ভুক্তভোগী নারীসংশ্লিষ্ট যেকোনো তথ্য বা ছবি প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর অপর ধ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন

মুরাদনগরের একটি মামলার ঘটনায় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে (এসপি) হাইকোর্ট বলেছেন, সেনসেটিভ ম্যাটার (স্পর্শকাতর বিষয়)। অভিযোগপত্র হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তদন্তের সময়সীমা উল্লেখ আছে। দ্রুত যেন হয় মনিটরিং (তদারকি) করবেন। কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) দেবেন।

মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা–সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ এবং মামলার তদন্তের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে মঙ্গলবার আদালত এ কথা বলেন। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দিতে বলেছেন।

ওই ঘটনা নিয়ে ‘দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা’ শিরোনামে গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বিবাদীদের ১৪ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন (হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখে প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই আদালত কমপ্লায়েন্স বিষয়ে অবস্থান জানাতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ১২ আগস্ট বেলা ১১টায় আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির হন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান শুনানিতে পুলিশ সুপারের নেওয়া পদক্ষেপ ও কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্যাদি–সংবলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। শফিকুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। রিটের পক্ষে আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি নিয়ে আদালত কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দাখিলের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।

ডিএনএ পরীক্ষা, তদন্তসহ মামলা–সম্পর্কিত পরবর্তী অগ্রগতির তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অভিযোগপত্র হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো শেষ করতে বলেছেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন কোনোভাবেই অতিক্রম না করে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজগুলো করে আগামী ২২ অক্টোবর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সুপারের পক্ষে মঙ্গলবার আদালতে তুলে ধরা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মামলার পর ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। বিষয়টি ওসি দেখভাল করছেন। ভুক্তভোগীর জন্য সার্বক্ষণিক যেন নিরাপত্তা থাকে এবং সময়ে সময়ে এসপি ওসিকে এবং ওসি এসপিকে ফলোআপ ও হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লায় বিষাক্ত মদ পানে দুজনের মৃত্যু
  • স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন