ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চলমান দুর্নীতির মামলার বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিদের ওপর তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির বিচারব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

গত শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এ মামলার ফলে গাজায় হামাসের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় নেতানিয়াহুর সক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে এবং ইরানের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনা সামাল দেওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, ‘লাগামহীন কৌঁসুলিরা বিবি নেতানিয়াহুর সঙ্গে যা করছেন, তা পাগলামি।’ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলা অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তাঁর ডাকনাম বিবি নেতানিয়াহু বলে সম্বোধন করে থাকেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

ট্রুথ সোশ্যালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, ‘ইসরায়েলকে রক্ষা ও সহায়তা দিতে আমেরিকা প্রতিবছর শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে। আমরা এটা (নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলা ঘিরে চলমান কর্মকাণ্ড) বরদাশত করব না।’

২০২০ সালে শুরু হওয়া দুর্নীতির মামলায় আগামী সোমবার নেতানিয়াহুকে আদালতে জেরার কথা ছিল। কিন্তু রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালত এ শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন।

এর আগে নেতানিয়াহুর আইনজীবীরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে শুনানি দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত গত শুক্রবার সেই আবেদন খারিজ করে দেন।

পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন নেতানিয়াহুদুর্নীতি মামলার বিচারের শুনানিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তেল আবিবের জেলা আদালতে, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আত্মগোপনে থাকা আ.লীগ নেতা বেন্টু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আত্মগোপনে থাকা আজিজুল আলম বেন্টু (৫৩), তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিনের (২৯) বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আজিজুল আলম বেন্টু আত্মগোপনে রয়েছেন।

রোববার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।

মামলার বাদী আমির হোসাইন জানান, আজিজুল আলম বেন্টু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিন (২৯)।

দুদক জানায়, তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিলে ৯ দশমিক ৪০০৮১৮৯ একর জমির সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। ফলে আয়বর্হিভূত ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখা যায়।

অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিনী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে নাসিমা আলমের দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকার। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে। 

২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। তারও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

দুদক বলছে, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় বেন্টুর স্ত্রী-ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘মামলটি দায়ের করার পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ