গানে নিয়মিত সাবিনা ইয়াসমীন, কণ্ঠে তুললেন ‘প্রাণের বাংলাদেশ’
Published: 30th, June 2025 GMT
সময় চলে যায়, কিন্তু কিছু কণ্ঠ থাকে উতরে যায় সময়কে। সে কণ্ঠ অক্ষয়, অমর। এমনই এক কণ্ঠের নাম সাবিনা ইয়াসমীন। দেশের গান মানেই যেনো তার কণ্ঠ।
প্রজন্ম বদলেছে, সময় বদলেছে, কিন্তু গান নিয়ে সাবিনা ইয়াসমীনের ভালোবাসা আজও অটুট। চলতি বছর তিনি আবারও নিয়মিত হচ্ছেন নতুন গানে। স্টেজ শোর পাশাপাশি ফের স্টুডিওতে ফিরছেন হৃদয়ের গভীর থেকে গাওয়া সেই চেনা কণ্ঠে।
বাংলা গানের এই জীবন্ত কিংবদন্তি আবারও গাইলেন বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার গান-‘প্রাণের বাংলাদেশ’। সোমবার এই দেশের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। গানটির কথা ও সুর করেছেন আরিফ হোসেন বাবু, সংগীতায়োজন করেছেন তরুণ সুরকার রোহান রাজ।
‘প্রাণের বাংলাদেশ’ গানটি খুব শিগগিরই প্রকাশ পেতে যাচ্ছে অরিন মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে। গানটি নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘গানটির কথাগুলো খুব আবেগজড়ানো। আধুনিক সংগীতের ছোঁয়ায় সাজানো এই দেশের গানটি গাইতে গিয়েও ভালো লেগেছে। রোহান ভালো সংগীত করেছে, গানটি শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে-এই বিশ্বাস আমার আছে।’
আরিফ হোসেন বাবুর কণ্ঠে ছিল স্বপ্নপূরণের আবেগ। বললেন, ‘সাবিনা আপার পাশে গান নিয়ে দাঁড়ানো-এটা আমার জীবনের এক পরম সৌভাগ্য। তাঁর কণ্ঠে আমার লেখা গান মানে, আমার স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ, গর্বিত।’
সংগীত পরিচালক রোহান রাজের কণ্ঠেও ধরা পড়ল মুগ্ধতা ও গভীর অনুরাগ,‘যাদের গান শুনে আমি বড় হয়েছি, তাঁদের একজনের সঙ্গে কাজ করতে পারা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। সাবিনা আপা শুধু লিজেন্ড নন, তিনি আমাদের প্রেরণাও। তাঁর মতো একজন কিংবদন্তি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে পারাটা ছিল স্বপ্নের মতো।’
এর আগে সাবিনা ইয়াসমীনের সর্বশেষ গান ছিল 'আমার পতাকা লাল সবুজে আঁকা'-যেখানে তাঁর সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে ছিলেন বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর। সে গানটির কথা লিখেছেন মনিরুজ্জামান মনির, সুর ও সংগীতায়োজন করেছিলেন মনোয়ার হোসাইন টুটুল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নত ন গ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাজা দিলে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করা হবে।
আজ রোববার সকালে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম এ কথা বলেন। তাঁকে ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন। ইন্টারপোল কোনো রকম সাড়া দেয়নি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে প্রসিকিউশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল। কালকে (সোমবার) যদি রায় হয় এবং রায়ে যদি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে ইন্টারপোলে আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করবে প্রসিকিউশন তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী) বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায় দেওয়া হবে আগামীকাল সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেবেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি সরাসরি হত্যার নির্দেশ কাউকেই দেননি। যেটা আইনজীবী বোধ হয় এই আদালতে খানিকটা বলেছিলেন।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি সব কথা বলতে পারবেন। হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলবেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্যই নয়। সামাজিক দৃষ্টিতে বক্তব্য। প্রসিকিউশন মনে করে, এখানে যে মামলা হয়েছে, এটা তিনি জানেন না বা জানতেন না, এটা বলার আর সুযোগ থাকছে না শেখ হাসিনার। তাঁর ভয়েস রেকর্ড (কণ্ঠস্বর) বাজিয়ে শোনানো হয়েছে উন্মুক্ত আদালতে, যা সম্প্রচার হয়েছে। সেখানে শোনা গেছে, শেখ হাসিনা নিজ মুখে এই আদেশটা দিয়েছেন কথোপকথনের মাধ্যমে। অপরাধী পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, কেউই স্বীকার করেনি যে তারা অপরাধী। তারই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন যে শেখ হাসিনা আদৌ অপরাধী, কি অপরাধী নন।
ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দেওয়ার যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটি কি শুধু শেখ হাসিনার বিষয়ই থেকে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, বিষয়টি প্রসিকিউশন সম্পূর্ণভাবে সরকারের ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে। প্রসিকিউশন বা বিচারব্যবস্থা এটাকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) কোনো আমলে নিচ্ছে না।
ট্রাইব্যুনালের আদেশ মেনে নেবে প্রসিকিউশন
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছে প্রসিকিউশন। শুধু তা–ই নয়, এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এই মামলায় বা এই ঘটনায় যাঁরা ভুক্তভোগী আছেন, শহীদ আছেন, আহত পরিবার আছে, তাঁদের বরাবর হস্তান্তরের প্রার্থনাও জানানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে আদেশই দেবেন, প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, চব্বিশের আগের ট্রাইব্যুনালের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও সেখানে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো প্রযোজ্যতা ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানের পর আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক আইন, অর্থাৎ রোম স্ট্যাটিউটে যে আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা এবং অ্যাপ্লিক্যাবিলিটি (প্রযোজ্যতা) আছে, সেটা এখানে প্রযোজ্য করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে যে কয়েকটি অভিযোগ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে, একই অভিযোগ যদি দেশের অন্য কোনো আদালতে কোনো মামলা থেকে থাকে, সেগুলো আর চলবে না। কারণ, সাংবিধানিক অধিকার হলো একই অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে দুবার শাস্তি বা দুবার বিচার করা যাবে না। এর বাইরে যদি অন্য কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, সেটি চলতে পারে।
পলাতক অবস্থায় শেখ হাসিনা আপিল করতে পারবেন না
এ মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাঁদের সাজা হলে আপিল করার সুযোগ থাকবে কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, অবশ্যই না। এ মামলার যেসব আসামি পলাতক আছেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন না।
মামলার প্রধান আসামি একজন নারী। নারী হওয়ার কারণে আইনে বিশেষ কোনো সুবিধা তিনি পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআরপিসিতে জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক, শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ (অগ্রাধিকার) দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ নেই। অতএব রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি বিবেচনা করে শাস্তি প্রদান করা হবে বা মামলা প্রমাণ না হলে খালাস প্রদান করা হবে।