রিমঝিম বৃষ্টির মিষ্টিমাখা সুর শুনতে কার না ভালো লাগে। টিনের চালে ঝাপুরঝুপুর, গাছের ডালে টাপুরটুপুর, পুকুর-জলে রিনিঝিনি বৃষ্টির ছন্দে উদাস হয় মন। গ্রীষ্মের তাপদাহ শেষে বর্ষা আসে প্রশান্তি নিয়ে। বর্ষার আকাশে ভেসে বেড়ায় কালো কালো মেঘ। তীব্র বেগে ছুটে চলা এসব মেঘকে বলা হয় নিমবাস। নিমবাস বৃষ্টি ঝরায় হাটে-মাঠে-নদী ও পাহাড়ে। প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। হেসে ওঠে সবুজরঙা গাছপালা, ডেকে ওঠে কোলাব্যাঙ, পুকুর-জলে টুপটুপ ডুব দিয়ে আনন্দে খেলা করে হাঁসের ছানা। মাছেরা ছুটে বেড়ায় বৃষ্টির নতুন পানিতে। লাঙল কাঁধে চাষিভাই পা বাড়ান ক্ষেতের দিকে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় শক্ত মাটি নরম হয়ে যায়। মাটির বুক চিরে হাল চলে কর্মযজ্ঞ। আউশের চারা বুক বাঁধে নতুন পল্লবের আশায়। এদিকে জেলেরা জাল ফেলেন নদীতে। জাল ভরে উঠে আসে রুপালি মাছ।
পুকুর পাড়ে কদমের পাতাগুলো যেমন, ফুলগুলো তেমনি আকর্ষণীয় ও সুন্দর। ঝুম বৃষ্টিতে একসময় ক্ষেত-পাথার ডুবে যায়। যেন সমুদ্র জেগেছে গ্রামজুড়ে। দুষ্টু ছেলেরা কলাগাছ কেটে ভেলা বানায়, ঝাঁপ দেয় পানিতে। বড়দের শাসানি পেয়ে বাড়ি ফেরে অবশেষে।
ঘরের দাওয়ায় বসে বৃষ্টির ঝরে পড়ার দিনগুলো আজও মনে পড়ে। দাদির গল্পের আসর, মায়ের হাতের জাদুতে হেসে ওঠা নকশিকাঁথা, বিকেলে গরম চায়ের ভাপের সঙ্গে চাল ভাজা ও মুড়ি-মুড়কির দিনগুলো ছিল অসাধারণ। গ্রামের মতো শহরে বর্ষার সৌন্দর্য তেমন ফুটে ওঠে না। তবুও ইট-পাথরে ঘেরা শহুরে লোকজনও বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝুম বৃষ্টিতে কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় বর্ষার পরশ পেতে। কেউ ছাদে উঠে বৃষ্টির ছোঁয়া নিয়ে জুড়িয়ে নেয় দেহ-মন। শহরে থাকা দিনমজুরদের কষ্টের সীমা থাকে না বৃষ্টিতে। কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগ বেড়ে যায় বস্তিতে থাকা মানুষের। কর্মজীবীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে যান কর্মস্থলে।
বর্ষায় ধুয়ে যায় শহরের ময়লা-আবর্জনা। ধুয়ে যায় জীবনের শত ক্লান্তি। প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মন। বাড়ির ছাদ ও ব্যালকনিতে লাগানো গাছে ফুটে থাকে রং-বেরঙের ফুল। ঝিমিয়ে পড়া গাছের পাতাগুলো সতেজ হয়। শোনা যায় না বৃষ্টির মিষ্টিমাখা সেই সুর। বৃষ্টির মিষ্টি সুরে রচিত হয় কবিতা, গান ও গল্প। কবিদের ভাবনায় বর্ষা এক অনিন্দ্য-সুন্দর সৃষ্টি। বর্ষা বদলে দেয় প্রকৃতির রূপ। বর্ষা মানে অনাবিল আনন্দ। বর্ষা আমাদের প্রাণের ঋতু। আনন্দের ঋতু। v
সুহৃদ, চট্টগ্রাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরের ম্যারিনেট গাজা জলসীমা থেকে কত দূরে
দ্য ম্যারিনেট। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের নৌযান। নৌযানটি এখনো ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার অনলাইনে এই তথ্য জানানো হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একমাত্র দ্য ম্যারিনেটকেই এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। বহরের বাকি নৌযানগুলোকে তারা ইতিমধ্যে আটক করেছে।
দ্য ম্যারিনেট পোল্যান্ডের পতাকাবাহী নৌযান। তবে নৌযানটির মালিকের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়, দেখুন লাইভ ট্র্যাকারেনৌযানটিতে ছয়জন আরোহী আছেন। এই আরোহীদের মধ্যে একজন তুরস্কের অধিকারকর্মী সিনান আকিলতু। তিনি আজ নৌযানটি থেকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রবেশ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা দুটি মহৎ পরিণতির যেকোনো একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, আজ ভোরের দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলছিল ম্যারিনেট। এ সময় সূর্যোদয় হচ্ছিল।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টার দিকে ম্যারিনেটের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩ দশমিক ৭৮ নট। (ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার)। নৌযানটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে প্রায় ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।
আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী১৩ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই ম্যারিনেটকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবরোধ ভাঙার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নৌযানটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা ঠিক করা হয়েছে। নৌযানটি গাজা অভিমুখে চলছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বহরের ৪২টি নৌযানকে অবৈধভাবে আটকানো হয়েছে। আরোহীদের আটক হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ম্যারিনেট পিছু হটছে না।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান১৪ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়, ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।
ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছে ফ্লোটিলা আয়োজকেরা।
আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছতে পারেন২০ ঘণ্টা আগে