কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর সেই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞরা। তবে পুলিশ বলছে, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা না হলেও ধর্ষণের বিষয়টি প্রমাণ করতে তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার দিকে এগোচ্ছেন। এ বিষয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে শিগগিরই ডিএনএ নমুনা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন সমকালকে বলেন, আমরা ঘটনার পর ওই নারীর কাপড়সহ কিছু আলামত জব্দ করেছিলাম। আদালতের অনুমতি নিয়ে শিগগিরই এসব আলামত ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।

উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শিল্পী সাহা বলেন, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব বুঝিয়ে ঘটনার পরদিনই পরীক্ষা করানোর দরকার ছিল। এখন দেরিতে হলেও ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষাসহ তাঁর বস্ত্রের ডিএনএ নমুনা দেওয়া জরুরি। না হলে মামলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ত্রুটি থেকে যাবে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.

শারমীন সুলতানা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই নারীর কাছ থেকে জব্দ করা ডিএনএ নমুনা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো দরকার। আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকি, ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে যেন দেরিতে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য না আনা হয়। এতে অনেক পরীক্ষায় ফল মেলে না।

কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, অপরাধীদের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করে ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ করা সম্ভব।

এদিকে ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলী পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন থাকলেও নারীকে নির্যাতন ও ভিডিও ভাইরালকাণ্ডে গ্রেপ্তার চার আসামির আজ রিমান্ড শুনানি হতে পারে। পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই নারীকে নির্যাতন, ভিডিও ধারণসহ ভাইরালকাণ্ডে জড়িত অধিকাংশই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের আটক করতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াও তাদের ছবি নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। 

‘জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, মুরাদনগরে সেই নারীর প্রতি যে নির্মম বর্বরতা চালানো হয়েছে, এতে আমরা মর্মাহত। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক, সবাই গ্রেপ্তার হবে। 

বুধবার বিকেলে উপদেষ্টা মুরাদনগরে পৌঁছে কবি নজরুল মিলনায়তনে প্রশাসন ও সুধী মহলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে সভায় ওই নারীর পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মতবিনিময় সভায় নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপের কথা জানানো হয়। 

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা। এ সময় শারমিন এস মুরশিদ তাঁকে বলেন, সরকার আপনার পাশে আছে। সব নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহায়তাও প্রদান করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত সব আসামিকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা মতিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল মালিক, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান প্রমুখ। 

রাজধানীতে প্রতিবাদ সমাবেশ

মুরাদনগরের ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাজধানীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জোবায়দা পারভীন। 

এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতাকে রাজনীতিকীকরণ করে বিচার ব্যাহত করার চেষ্টা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সমাজকল্যাণ উপপরিষদের সম্পাদক হুমায়রা খাতুন, নিজেরা করির সারাবান তহুরা প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র দনগর ওই ন র র ঘটন র প পর ক ষ ড এনএ

এছাড়াও পড়ুন:

লোকজনের ভিড়, সাক্ষাৎকারের ‘চাপ’—বাড়ি ছাড়লেন মুরাদনগরের নির্যাতিত সেই নারী

কুমিল্লার মুরাদনগরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার সেই নারী বাবার বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি ও তাঁর মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে দেখা যায়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর প্রতিদিনই তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে তাঁর জীবন ‘দুর্বিষহ’ হয়ে উঠেছে। এমন ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতে তিনি বাড়ি ছেড়ে গেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন রাতে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ সময় স্থানীয় কিছু লোক ফজর আলীর পাশাপাশি ওই নারীকেও মারধর করেন। বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় তিন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী নারী তাঁর স্বামীর বাড়ি যাবেন বলে বাবার বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। পুলিশের সহযোগিতায় তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। এরপর তাঁর মা–বাবাসহ পরিবারের লোকজনও অন্যত্র চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার তাঁদের বাড়ি আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তাঁর আগমন উপলক্ষে হাজারো মানুষ আজ বেলা ১১টার পর থেকে তাঁর বাবার বাড়ি ও আশপাশে অবস্থান নেন। এভাবে লোকজনের ভিড় হবে—সম্ভবত বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী ও তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন বাড়ি থেকে সরে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। প্রতিদিনই তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করছেন। গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে ভুক্তভোগীর পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া অনেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভিডিওতে ভুক্তভোগীর চেহারা দেখিয়ে আরও সমস্যায় ফেলছেন। এসব কারণেই ভুক্তভোগী বাড়ি থেকে সরে গেছেন। সোমবার তিনি পুলিশের কাছে সহায়তা চাইলে পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেছে।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি নির্যাতিত ওই নারী তাঁর শ্বশুরবাড়ি বা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। এটি তাঁর নিজস্ব ও ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ ভুক্তভোগীর কোনো নিরাপত্তার দরকার হলে তাঁরা অবশ্যই সেটি নিশ্চিত করবেন বলে জানান ওসি।

নতুন করে গ্রেপ্তার নেই

নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। তবে তাঁরা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন।

এদিকে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার চার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হক আগামী বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।

কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুরাদনগর থানায় হওয়া নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় কারাগারে থাকা চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আজ মঙ্গলবার আদালত থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার শুনানি হবে।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ওই চার আসামি হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক।

নতুন করে কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তবে তাঁদের সবাই এলাকা থেকে পালিয়েছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে আশা করছি তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’

ওসি বলেন, ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছে থাকা মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলো সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হবে ভিডিওটি কোথা থেকে প্রথম ছড়ানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করবে ‘কুইক রেসপন্স টিম’: শারমীন এস মুরশিদ
  • মুরাদনগরের সেই নারীকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস উপদেষ্টার
  • মুরাদনগরের সেই ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাইলেন সাবেক এমপি কায়কোবাদ
  • মুরাদনগরে ধর্ষণ: নির্যাতনকারী আরও ১২ জনকে খুঁজছে পুলিশ
  • লোকজনের ভিড়, সাক্ষাৎকারের ‘চাপ’—বাড়ি ছাড়লেন মুরাদনগরের নির্যাতিত সেই নারী
  • মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় ৩৮ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা, বিচার দাবি
  • মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণের নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়ে ৩৮ নাগরিকের বিবৃতি
  • প্রধান আসামির দলীয় পরিচয় নিয়ে ঠেলাঠেলি, ‘নোংরা রাজনীতি’ বলছেন সুধীজনেরা
  • কুমিল্লায় ধর্ষণকাণ্ড: নির্যাতনের আরও একটি ভিডিও ভাইরাল