বিস্ময়কর গ্রাম ‘পুনিয়ারটন’। এই গ্রামের চারপাশ ঘিরে আছে কুমিল্লার তিতাস উপজেলা। গোমতী নদীপারের এই গ্রামটি প্রশাসনিকভাবে কুমিল্লার মুরাদনগরে হলেও বাস্তব জীবনে পুনিয়ারটন যেন তিতাসের মাঝখানে এক ছিটমহল! এখানকার মানুষজনও তাই বাস করেন এক ছিটমহলীয় পরাবাস্তবতায়। তিতাস উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে লেগেছে নানা উন্নয়নের ছোঁয়া। কিন্তু পুনিয়ারটন সবকিছু বঞ্চিত। ছোট্ট এই জনপদটি পড়ে আছে সবার চোখের আড়ালে, মনোযোগের বাইরে। নেই রাস্তাঘাট, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে একটি স্কুল পর্যন্ত।
জানা গেছে, পুনিয়ারটন গ্রামটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে শত বছরের বেশি আগে। এর দক্ষিণ পাশ দিয়ে গোমতী নদী প্রবাহিত। উত্তর দিকে তিতাসের কাউনিয়ার বিল, পূর্বদিকে কলাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ মানিকনগর গ্রাম ও পশ্চিমে ঘোষকান্দি গ্রাম।
মাত্র ৭০০ মানুষের বসবাস এই প্রত্যন্ত গ্রামে। নেই কোনো পাকা রাস্তা এবং ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা। বর্ষা মৌসুম এলে গ্রামে বৃষ্টি নয়, নেমে আসে দুর্ভোগ। গ্রামের একমাত্র রাস্তা গোমতী নদীর পাশ ঘেঁষে তৈরি বেড়িবাঁধ; সেটাও কাঁচা। ফলে বৃষ্টি এলে কাদা, পানি যেন হয়ে ওঠে প্রতিদিনের বাস্তবতা। এই রাস্তা ধরেই পুটিয়ারটনের মানুষ পার্শ্ববর্তী জাহফুর বাজার, মুরাদনগরসহ বিভিন্ন জায়গায় আসা-যাওয়া করে। গ্রামের দক্ষিণ পাশের বেড়িবাঁধ দিয়ে তিতাসের আসমানিয়া বাজারেও যাওয়া যায়। এই কাঁচা রাস্তারও বড় অংশ গ্রামবাসী নির্মাণ করেছেন নিজেদের চাঁদার টাকায়।
শিশুশিক্ষার চিত্রও করুণ। নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। আড়াই কিলোমিটার হেঁটে জাহফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয় শিশুদের। মেয়েদের জন্য উচ্চ বিদ্যালয় বা কলেজ আরও দূরে। কমপক্ষে তিন কিলোমিটার যেতে হয়। ফলে এই গ্রামে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার আশপাশের গ্রামগুলো থেকে অনেক বেশি। গ্রামে নেই কোনো বাজার কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিক। এমনকি ফার্মেসি না থাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতেও যেতে হয় কয়েক কিলোমিটার দূরে জাহপুর বাজারে। ছোট-বড় অসুখে পুনিয়ারটনের মানুষের ভরসা মুরাদনগর সদর হাসপাতাল।
সরেজমিন দেখা যায়, পুনিয়ারটন গ্রামের একমাত্র বড় স্থাপনা একটি মসজিদ ও সঙ্গে মক্তব। গ্রামবাসী জানালেন, নিজেদের টাকাতেই তারা এই মসজিদ-মক্তব তৈরি করেছেন তারা। গ্রামের মানুষের জীবিকার উৎস কৃষিকাজ। যে কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে তাদের যেতে হয় জাহফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে; যার দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মতো।
পুনিয়ারটনের এই বঞ্চনার বিষয়ে কথা বলতে জাহফুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর শওকত আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জহিরুল হক বলেন, ‘আমাদের পরিষদে বরাদ্দ যে পরিমাণ আসে, তার পুরো ইউনিয়নে ভাগ করে দেওয়া হয়। আমি যে পরিমাণ বরাদ্দ পাই, সেটা থেকে আনুপাতিক হারে পুনিয়ারটন গ্রামেও দেওয়ার চেষ্টা করি। অনেকে এখন নানা ভাতা পাচ্ছে। আরও অনেকের ভাতা পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গ্রামের একমাত্র রাস্তাটি পাকা করতে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, দ্রুত তা করা যাবে।
তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, পুনিয়ারটন বেড়িবাঁধের কিছু অংশে এখনও কাঁচা রয়েছে। এই সড়কটি পাকাকরণের জন্য সম্ভবত আগেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যদি প্রস্তাব পাঠানো না হয়ে থাকে, তাহলে আবার পাঠাব। অনুমোদন পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এটা পাকাকরণের কাজ শুরু হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ন য় রটন
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট