গ্রীষ্ম ও বর্ষা—এ দুই ঋতুতেই বাজারে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা মৌসুমি ফলের সমারোহ দেখা যায়। এ সময় আরও একটি মৌসুমি ফল বাজারে দেখা যায়। যদিও বাদামি রঙের ছোট আকারের এই ফলের দেখা মেলা বেশ কঠিন। অনেকে হয়তো এর নামও জানেন না। ঢাকার বিভিন্ন বাজারের ফলের দোকান কিংবা রাস্তার ধারে টুকরিতে করে এই ফল বিক্রি হয়। দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় চাহিদাও কম।

দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ফলের দেখা মিললেও ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জের প্রায় সব বাড়িতেই এই কাঠলিচু বা পিচ ফল পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ফল প্রাকৃতিক উপায়েই জন্মায়। তাই মানিকগঞ্জ সদর, দোহার, সিঙ্গাইর ও নবাবগঞ্জের রাস্তার অলিগলি থেকে শুরু করে সবখানেই কাঠলিচুর গাছ চোখে পড়বে। আগে এ ফলটির চাহিদা না থাকলেও এখন এর কদর ও দর উভয়ই বেড়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ফল। জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে এই ফল দেখা গেলেও সবচেয়ে বেশি হয় মানিকগঞ্জ সদর ও সিঙ্গাইরে। এ ফলে প্রচুর শর্করা, ভিটামিন সি, খনিজসহ অন্যান্য পুষ্টিগুণ থাকায় স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা ব্যাপক।

রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের উল্টো পাশে টুকরিতে করে আমলকী ও কাঠলিচু বিক্রি করছেন খলিল উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায়ই এ ধরনের মৌসুমি ফল এ রকম টুকরিতে নিয়ে বিক্রি করি। এই ফলের চাহিদা কম। তবে যাঁরা চেনেন, তাঁরা আমার কাছ থেকে কিনে নেন। প্রতিদিন রাস্তায় হেঁটে হেঁটে আমার দেড় থেকে দুই কেজি ফল বিক্রি হয়। দাম কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হওয়ায় কেউ বেশি পরিমাণে কেনেন না। ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম করে বেশি বিক্রি হয়।’

দোহার-নবাবগঞ্জের রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায় কিংবা পরিত্যক্ত জমিতে সর্বত্রই দেখা যায় এই ফলের গাছ। যখন এই ফল পাকতে শুরু করে, তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। মূলত বাদুড় ও অন্যান্য পাখির জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে এই ফলের বাণিজ্যিক মূল্য বাড়াতে গাছের বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ নতুন করে গাছের চারাও লাগাচ্ছেন।

প্রাকৃতিক কৃষি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী ও কৃষক দোলোয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ফলের চাহিদা গত দুই থেকে চার বছরে বেড়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের প্রাকৃতিক কৃষি বিপণনের বিক্রয়কেন্দ্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজে বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে আমরা এক মৌসুমে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কাঠলিচু বিক্রি করে থাকি। আমরা শ হিসাবে বিক্রি করি।’

বিক্রির জন্য কাঠলিচু নিয়ে বসে আছে এক বিক্রেতা। আজ সকালে রাজধানীর কারওরান বাজারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ হলেন এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলাম

শেয়ারবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় থাকা ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থের অপব্যবহারের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের আজ মঙ্গলবারের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একই ঘটনায় যোগসাজশের দায়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকেও পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এর আগে বেক্সিমকোর বন্ডের অনিয়মের দায়ে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন আরেকটি অনিয়মের ঘটনায় তাঁকে পুনরায় শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএসইসি। এ নিয়ে শেয়ারবাজারে দুই প্রতিষ্ঠানের দুই অনিয়মের ঘটনায় দুই দফায় আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ হলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। বিএসইসির সভা শেষে আজ এসব সিদ্ধান্তের কথা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।

ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থের অপব্যবহারের দায়ে উল্লিখিত এই দুই ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ছয়টি ফান্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি এই অনিয়মের ঘটনায় ছয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ৯ কোটি ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশে প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শরীফ আহসান, মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা, ওমর শোয়েব চৌধুরী ও বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় বিজিআইসিকে। আর ছয় ব্যক্তিকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই ১ কোটি টাকার বাইরে রেজাউর রহমান সোহাগকে আরও ১০ লাখ টাকা এবং শরীফ আহসানকে আরও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

বিএসইসি জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে ওটিসি বাজারে থাকা বন্ধ কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ারে বিনিয়োগের নামে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। দুই দফায় এই বিনিয়োগ করা হয়েছিল। প্রথম দফায় বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারের ৫১ শতাংশ শেয়ার চড়া মূল্যে অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এই শেয়ার অধিগ্রহণের পর কোম্পানিটির নাম বদলে করা হয় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড। নামবদলের পর কোয়েস্ট বিডিসির মূলধন বাড়াতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন শেয়ার ইস্যু করে ছয়টি ফান্ড থেকে দ্বিতীয় দফায় ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। বিএসইসি বলছে, বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার চড়া মূল্যে কিনে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এই অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলত ফান্ডগুলোর ইউনিটধারীদের অর্থেরই অপচয় করা হয়েছে। এ কারণে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটি ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। সেই সঙ্গে ছয়টি ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ–সুদসহ ৯০ কোটি টাকা ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসি জানিয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামকে এই অর্থ ফান্ডগুলোতে ফেরত আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অর্থ ফেরত আনতে না পারলে তার জন্য রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের পরিচালক জর্জ এম স্টক ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে বলেও বিএসইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় থাকা যে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে এই অনিয়ম ও অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো হলো এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেলটা মিউচুয়াল ফান্ড।

সম্পর্কিত নিবন্ধ