কারবালা, আশুরা এবং সাহাবিদের দ্বিমত থেকে শিক্ষা
Published: 6th, July 2025 GMT
‘আশুরা’ শব্দের অর্থ দশম বা দশমী। মহররম মাসের দশম দিনটিকে আশুরা বলা হয়। কারও কারও মতে, এদিনে আল্লাহ ১০ জন পয়গম্বরকে তাঁর ১০টি অনুগ্রহ ও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন বলে এটিকে আশুরা বলা হয়।
হাদিসে আশুরা দিবসে রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যেন আশুরার রোজা আল্লাহর নিকট পূর্ববর্তী বছরের গুনাহের কাফফারাস্বরূপ গণ্য হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৩২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২৪; সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,২৫১: আশুরার দিনে রোজা পরিচ্ছেদে ১৮৭৪ থেকে ১৮৮১ পর্যন্ত আটটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে)।
আরও পড়ুনপরিবেশ নিয়ে নবীজি(সা.) এর ১০ শিক্ষা১৯ এপ্রিল ২০২৫
তবে আশুরার দিনটি যে কারণে আমাদের কাছে বেশি স্মরণীয়, তা হলো কারবালার যুদ্ধের পরিণতি। এদিনে এক হৃদয়বিদারক যুদ্ধের করুণ সমাপ্তি হয়। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ইন্তেকালের পর মদিনাবাসীর মতামত না নিয়েই ইয়াজিদ ইসলামি রাষ্ট্রনীতির বরখেলাপ করে দামেস্কের মসনদে আসীন হন।
যে নীতি-আদর্শ মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং খোলাফায়ে রাশেদিন যে নীতির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, ইয়াজিদের দ্বারা সে নীতি-আদর্শ পরিবর্তিত হওয়ায় হজরত হোসাইন (রা.) তা রক্ষার জন্য সোচ্চার হলেন। অবশেষে রাসুল (সা.)–এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবার শাহাদাতবরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন।
ইসলাম আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দ্বিমত, ইত্যাদিকে কীভাবে দেখে, তা বুঝতে হলে আশুরার ঘটনার পাশাপাশি সিফফিনের যুদ্ধকে রাখা যেতে পারে। ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)–এর শাসনামলে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটিকে গৃহযুদ্ধ বলা হয়।
সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার ছিল, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এ যুদ্ধে খলিফা আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। রাসুল (সা.)–এর একান্ত পরিবারভুক্ত দুজন প্রথম শ্রেণির সাহাবি পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ায় বেশ কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ইতিহাস বিচারে দেখা যায়, এ যুদ্ধের ফলে উমাইয়া শাসকদের হাতে শাসনভার ন্যস্ত হওয়ার ফলেই কারবালার আগমন ঘটে।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন১০ মে ২০২৫দ্বিমত, বহুমত কিংবা পরস্পরবিরোধিতা ইসলামে নাজায়েজ নয়। কিন্তু একে কী করে ধারণ করতে হয়, সংঘাত বেধে গেলে তার পরিণতি কেমন হওয়া উচিত; তা নিয়ে আমরা কারবালার ঘটনার সঙ্গে সিফফিনের যুদ্ধের কিছু পার্থক্য দেখতে পাই।
সিফফিনের যুদ্ধের পর আয়েশা (রা.) বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন, যদি এ যুদ্ধে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে সে কথা মনে করে। আবার আলীও (রা.) যুদ্ধের পর আয়েশা (রা.)–কে তাঁর পছন্দের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেন। অথচ কারবালায় হোসাইনকে যুদ্ধে পরাজিত করার পরও তাঁর মাথা কেটে নেওয়া হয়, তাঁর সঙ্গে থাকা তাঁর শিশুপুত্রসহ পরিবারবর্গকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। প্রবল আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ এমনই ছিল, যা আজও মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে চলেছে।
মুসলিম কখনো মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন, নবুওয়াতের মাত্র ৭০ বছরের মাথায় ঘটে যাওয়া সিফফিন ও কারবালার দুটি যুদ্ধই বেদনাদায়ক। কিন্তু এ দুইয়ের পরিণতিতে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা পক্ষগুলো অপর পক্ষের সঙ্গে যা আচরণ করে, তাতেও আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে।
লেখক: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী
[email protected]
আরও পড়ুনপবিত্র আশুরার উৎস২৮ জুলাই ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ল র আল ল হ র জন য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।