Prothomalo:
2025-07-06@11:51:07 GMT

পবিত্র আশুরা আজ

Published: 6th, July 2025 GMT

আজ ১০ মহররম। মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ দিন। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবেও পরিচিত।

মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন।

আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। আর মহররম অর্থ সম্মানিত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে নির্মমভাবে শহীদ হন।

শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়।

শিয়া সম্প্রদায় এদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে তাজিয়া মিছিল উল্লেখযোগ্য।

বাসস জানিয়েছে, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগাবে।

পবিত্র আশুরার শোকাবহ এই দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.)–সহ কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সবার প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ

এছাড়াও পড়ুন:

কারবালা, আশুরা এবং সাহাবিদের দ্বিমত থেকে শিক্ষা

‘আশুরা’ শব্দের অর্থ দশম বা দশমী। মহররম মাসের দশম দিনটিকে আশুরা বলা হয়। কারও কারও মতে, এদিনে আল্লাহ ১০ জন পয়গম্বরকে তাঁর ১০টি অনুগ্রহ ও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন বলে এটিকে আশুরা বলা হয়।

হাদিসে আশুরা দিবসে রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যেন আশুরার রোজা আল্লাহর নিকট পূর্ববর্তী বছরের গুনাহের কাফফারাস্বরূপ গণ্য হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৩২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২৪; সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,২৫১: আশুরার দিনে রোজা পরিচ্ছেদে ১৮৭৪ থেকে ১৮৮১ পর্যন্ত আটটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে)।

তবে আশুরার দিনটি যে কারণে আমাদের কাছে বেশি স্মরণীয়, তা হলো কারবালার যুদ্ধের পরিণতি। এদিনে এক হৃদয়বিদারক যুদ্ধের করুণ সমাপ্তি হয়।আরও পড়ুনপরিবেশ নিয়ে নবীজি(সা.) এর ১০ শিক্ষা১৯ এপ্রিল ২০২৫

তবে আশুরার দিনটি যে কারণে আমাদের কাছে বেশি স্মরণীয়, তা হলো কারবালার যুদ্ধের পরিণতি। এদিনে এক হৃদয়বিদারক যুদ্ধের করুণ সমাপ্তি হয়। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ইন্তেকালের পর মদিনাবাসীর মতামত না নিয়েই ইয়াজিদ ইসলামি রাষ্ট্রনীতির বরখেলাপ করে দামেস্কের মসনদে আসীন হন।

যে নীতি-আদর্শ মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং খোলাফায়ে রাশেদিন যে নীতির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, ইয়াজিদের দ্বারা সে নীতি-আদর্শ পরিবর্তিত হওয়ায় হজরত হোসাইন (রা.) তা রক্ষার জন্য সোচ্চার হলেন। অবশেষে রাসুল (সা.)–এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবার শাহাদাতবরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন।

ইসলাম আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দ্বিমত, ইত্যাদিকে কীভাবে দেখে, তা বুঝতে হলে আশুরার ঘটনার পাশাপাশি সিফফিনের যুদ্ধকে রাখা যেতে পারে। ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)–এর শাসনামলে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটিকে গৃহযুদ্ধ বলা হয়।

সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার ছিল, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এ যুদ্ধে খলিফা আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। রাসুল (সা.)–এর একান্ত পরিবারভুক্ত দুজন প্রথম শ্রেণির সাহাবি পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ায় বেশ কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ইতিহাস বিচারে দেখা যায়, এ যুদ্ধের ফলে উমাইয়া শাসকদের হাতে শাসনভার ন্যস্ত হওয়ার ফলেই কারবালার আগমন ঘটে।

ইসলাম আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দ্বিমত, ইত্যাদিকে কীভাবে দেখে, তা বুঝতে হলে আশুরার ঘটনার পাশাপাশি সিফফিনের যুদ্ধকে রাখা যেতে পারে।আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন১০ মে ২০২৫

দ্বিমত, বহুমত কিংবা পরস্পরবিরোধিতা ইসলামে নাজায়েজ নয়। কিন্তু একে কী করে ধারণ করতে হয়, সংঘাত বেধে গেলে তার পরিণতি কেমন হওয়া উচিত; তা নিয়ে আমরা কারবালার ঘটনার সঙ্গে সিফফিনের যুদ্ধের কিছু পার্থক্য দেখতে পাই।

সিফফিনের যুদ্ধের পর আয়েশা (রা.) বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন, যদি এ যুদ্ধে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে সে কথা মনে করে। আবার আলীও (রা.) যুদ্ধের পর আয়েশা (রা.)–কে তাঁর পছন্দের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেন। অথচ কারবালায় হোসাইনকে যুদ্ধে পরাজিত করার পরও তাঁর মাথা কেটে নেওয়া হয়, তাঁর সঙ্গে থাকা তাঁর শিশুপুত্রসহ পরিবারবর্গকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। প্রবল আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ এমনই ছিল, যা আজও মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে চলেছে।

মুসলিম কখনো মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন, নবুওয়াতের মাত্র ৭০ বছরের মাথায় ঘটে যাওয়া সিফফিন ও কারবালার দুটি যুদ্ধই বেদনাদায়ক। কিন্তু এ দুইয়ের পরিণতিতে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা পক্ষগুলো অপর পক্ষের সঙ্গে যা আচরণ করে, তাতেও আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে।

লেখক: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী

[email protected]

আরও পড়ুনপবিত্র আশুরার উৎস২৮ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশুরা উপলক্ষে রাজশাহীতে তাজিয়া মিছিল
  • হোসনি দালান থেকে শোকাবহ তাজিয়া মিছিল শুরু
  • কারবালা, আশুরা এবং সাহাবিদের দ্বিমত থেকে শিক্ষা
  • অন্তরে ত্যাগের মহিমা লালন করতে হবে
  • আজ পবিত্র আশুরা
  • বাংলার সংস্কৃতিতে ফোরাতের ধারা
  • কারবালারও আগে মহররমের ঘটনা
  • আশুরার ফজিলত ও কারবালার তাৎপর্য
  • মহররম, আশুরা ও আমল