‘চেয়ারম্যানের ডিকলারের পরই সবাই হামলা চালায়’, ভিডিওতে বললেন বেঁচে যাওয়া তরুণী
Published: 7th, July 2025 GMT
‘শিমুল চেয়ারম্যান ডিকলার (ঘোষণা) দিয়ে দিছে ওদের মাইরা ফালা, ২০ মামলা হলেও আমি দেখবো’ মুরাদনগরে মব সন্ত্রাস তৈরি করে ৩ জনকে হত্যার সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া রুমা আক্তারকে যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে কুমিল্লায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল তখন একটি ভিডিও রেকর্ডে তিনি এসব কথা বলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেড় মিনিটের ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার উপর ৫০ জন হামলা চালায়। এরা কড়ইবাড়ি ও পীরকাসিমপুরের লোক। অনেককেই আমি চিনি। চেয়ারম্যানের ডিকলারের পরই সবাই হামলা চালায়।’
এদিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ি গ্রামে মাসহ দুই সন্তানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা এখন অনেকটা পুরুষশূন্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বাইরে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছেন না। সোমবার পর্যন্ত এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ঘটনার ‘মূল অভিযুক্ত’ ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লালকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এদিকে গত দুইদিনে কুমিল্লা ও রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার ৮ জনকে রোববার কুমিল্লার আদালতে সোপর্দ করা হলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
স্থানীয় সূত্র ও নিহতদের পরিবারের দাবি, এ মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ৩ নম্বর আসামি ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে পুরো ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কিলিং মিশন শেষ করা হয়। ৩ জনের হত্যা নিশ্চিত করা পর্যন্ত তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় সেখানে যাওয়া থানা পুলিশও নিরুপায় হয়ে পড়ে।
এদিকে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ইউপি মেম্বার বাচ্চু মিয়া রোববার আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন বললেও প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর স্বীকারোক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। পরে আদালত তাকেসহ মোট আটজনকে কারাগারে পাঠান।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন, কড়ইবাড়ি গ্রামের বাচ্চু মিয়া (মেম্বার), রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান, মো.
আদালতের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান সমকালকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলায় গ্রেপ্তার ৮ জনের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করার আদেশ দেবেন বিচারক।
মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল পলাতক ও অন্যরা কারাগারে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে কাঁদলেন বাদী রিক্তা আক্তার
রোববার বিকেলে গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে আনার খবরে সেখানে হাজির হন হামলার সময় বেঁচে যাওয়া রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার। তিনি এ হত্যা মামলার বাদী। আসামিদের দেখে তিনি (রিক্তা আক্তার) খুনি-খুনি বলে চিৎকার করতে থাকেন।
এসময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। ঘটনার সময় সামনে পেলে ওরা আমাকেও হত্যা করতো। আমার মা-ভাই-বোন বারবার বাঁচার জন্য আকুতি জানিয়েও খুনিদের থেকে রক্ষা পায়নি।
তিনি বলেন, খুনি শিমুল বিল্লাল চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই চেয়ারম্যানই হত্যাকাণ্ডের হোতা। আমার বোন এখনও হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মুরাদনগর উপজেলাধীন বাঙ্গরাবাজার থানা এলাকার কড়ইবাড়িতে একটি মোবাইল চুরি ও মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে এলাকার লোকজন মব সন্ত্রাস তৈরি করে নিজ বাড়িতে হামলা চালিয়ে রোকসানা বেগম রুবি, তার মেয়ে জোনাকি আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় রোকসানা বেগম রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার দুইদিন পর বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান সমকালকে বলেন, পরিবারের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়ন রাখা হয়েছে। এ মামলায় সেনাবাহিনী ও র্যাবের পৃথক অভিযানে আট আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা কারাগারে আছেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত এ ব্যাপারে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত অনেকেরই নাম ও পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আস ম দ র কড়ইব ড় ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবককে গণধোলাই
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নে চাঁদা দাবির অভিযোগে আব্দুল জব্বার নামে এক যুবককে আটক করে গণধোলাই দিয়েছেন এলাকাবাসী। রবিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে ইউনিয়নের আসাদনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, আসাদনগরের একটি নির্মাণাধীন ভবনে যান জব্বার। তিনি ভবন মালিকের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। একপর্যায়ে এলাকাবাসী তাকে আটক করে গণপিটুনি দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জব্বারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় রফিকুল ও আরিফ নামে দুই ব্যক্তি জানান, জব্বার মনোহরদীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করেন। জুলাই বিপ্লবের পর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেও তার নেতৃত্বে একটি গ্যাং নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। তারা চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকেও বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ দাবি করে।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে জমিজমা বিরোধের জেরে শিশুকে বেদম প্রহার
‘উপজেলায় এখন কী কাজ’ বলেই সাবেক মেয়রের ছেলেকে মারধর
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান বলেন, “অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ