‘‘আমাকে পার্টির মহাসচিব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কোনো আপত্তি নেই। আমার একটাই দুঃখ ৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৮৭ সালে উপমন্ত্রী হয়েছি, তখন থেকেই পার্টির সঙ্গে আছি। আমি যখন মন্ত্রী, তখন জিএম কাদের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি ১৯৯৬ সালে পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন।’’

জিএম কাদেরকে উদ্দেশ্য করে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একদিন আগে তাকে দল থেকে অব্যাহিত দেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

চুন্নু বলেন, ‘‘আমি এমন কি অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ পর্যন্ত রাখলেন না। দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১(ক) ধারা বদলাতে চেয়েছিলাম। যে ধারায় তাকেও (জিএম কাদের) দুই দফায় জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিশেষ ক্ষমতার এই ধারা আর কোনো রাজনৈতিক দলে নাই। তাই আমরা বললাম এই ধারা পরিবর্তন করা দরকার। কিন্তু তিনি দলের সিনিয়র কারও কথাই শুনলেন না। অবস্থা এমন দলের সবনেতা চলে গেলেও তিনি কখনও এই ধারা বাদ দেবেন না। এভাবেই দল এককভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘জিএম কাদের সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলেন কিন্তু তিনি নিজেই বড় স্বৈরাচার। তার কোনো যোগ্যতা নেই, তার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই। তারপরও তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করেছি। ২৮ জন নেতাকে প্রমোশন দিয়েছেন, আমি জানি না।’’

“উনি (জিএম কাদের) যে কী করেন নিজেই বুঝতে পারছেন না। তিনি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নিজেই যানে না। উনার মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কি না ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা দরকার। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা পার্টি করি। জনাব, কাদের সাহেব আপনি আমাদের দল ও পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন, ওকে। কিন্তু প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দিলেন, যাতে আগামী কাউন্সিলে কোনো চ্যালেঞ্জ না হয়। আপনি যাতে এক দফা ভাবে নেতা নির্বাচন হন,’’ যোগ করেন চুন্নু।  

অব্যাহতি দিলেও সিনিয়র নেতারা জাতীয় পার্টি ছাড়বে না জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘আমরা দল ছাড়বো না, জাতীয় পার্টিই করবো। আপনার যে কাউন্সিল, সেই কাউন্সিলে যাবো। সেই কাউন্সিলে আমরা অংশগ্রহণ করবো। আপনি যেতে না দিলেও আমরা যাবো। জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে আমরা দেবো না, আপনি যতই চেষ্টাই করুন। আপনার ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দলকে ভাঙার প্রক্রিয়া করবেন, এটা আমরা হইতে দেবো না। কারণ, আপনার চেয়ে এই দলে আমাদের অবদান বেশি। আমাদের দরদ বেশি।’’

এসময় সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক কো চেয়ারম্যান কাজি ফিরোজ রশীদ, সাবেক কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটি ইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ আরিফুর রহমান খান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, ‌মোঃ হারুন আর রশিদ, ভাইস-চেয়ারম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, দফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সম্পাদক- শারমিন পারভীন লিজা, ডাঃ সেলিমা খান, কেন্দ্রীয় নেতা -মিজানুর রহমান দুলাল, আব্দুস সাত্তার, জিয়া উর রহমান বিপুল, তাসলিমা আকবর রুনা, আলমগীর হোসেন, আমিনুল ইসলাম সেলিম, এস এম হাশেম, সিরাজুল আরিফিন মাসুম, চিসতী খায়রুল আবরার শিশির, হানিফ হোসেন বাবু, ফয়সাল সালমান, মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র ক উন স ল ল ইসল ম র রহম ন অব য হ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বইয়ের ভুবনের এক উজ্জ্বল আলোকশিখা

মাত্র ক’টি বই আর সীমিত পুঁজি নিয়ে শুরুটা হয়েছিল ২০০৫ সালের ১৭ জুন। চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে একটি ঘরে যাত্রা শুরু করা বাতিঘর একে একে পেরিয়ে গেছে ২০ বছর। সেই ক্ষুদ্র পরিসরের স্বপ্ন আজ একুশ বছরে পা রেখেছে। বাতিঘর এখন শুধু একটি বইয়ের দোকান নয়; এ এক মনন ও সৃজনশীলতার আলোকদ্যুতি, পাঠকের ভালোবাসার ঠিকানা।

এই দীর্ঘ পথচলার গৌরব উদযাপনে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় ‘আলাপ, আড্ডা, আবৃত্তি ও গান’-এর। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে জড়ো হতে থাকে বইপাগল মানুষ। লেখক, পাঠক, শিল্পী, সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীদের মিলনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানটি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, পণ্য হিসেবে বইয়ের বিক্রি অনেক বেশি না। তবে বইবিক্রেতা হিসেবে বাতিঘরের টিকে থাকা তো মননশীলতা-সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আশাজাগানিয়া ঘটনা। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বাংলাদেশে বইয়ের ব্যবসায় এখন দ্বিতীয় প্রজন্ম চলছে। বাতিঘর দ্বিতীয় প্রজন্মের বই ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। বইয়ের দোকানও যে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় হতে পারে, তার একটা দৃষ্টান্ত ও মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছে বাতিঘর। 

বইয়ের বিক্রি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বই কতজন পড়ল, সেটি বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, যারা বই পড়ে, তারাই দেশ-সমাজ-রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটা করতে পারে।
অনুষ্ঠানে বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর বলেন, প্রকাশক বাতিঘর অনেক ভালো বই প্রকাশ করেছে। পরেও নিশ্চয় করবে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যকে বিকশিত করার জন্য অনুবাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। অনেক আগেই করা দরকার ছিল। বাতিঘরের মতো প্রকাশকরা অনুবাদে গুরুত্ব দিলে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শুভেচ্ছাবার্তায় বলেন, বাতিঘর একটি সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বড় শহরগুলোর সুসজ্জিত বই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতেও এ সৃজনশীলতার পরিচয় মেলে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, লেখক আনিসুল হক, অধ্যাপক মনসুর মুসা, সাহিত্যিক মোহিত কামাল, বাদল সৈয়দ, আলতাফ পারভেজ, আফসানা বেগম, শিল্পী শাহীনুর রহমান, সাংবাদিক দীপ্তি চৌধুরীসহ অনেকে। সন্ধ্যার আয়োজন ছিল গান ও আবৃত্তিতে পূর্ণ। ওয়ারদা আশরাফ, দীপংকর দে, গার্গী ঘোষসহ অনেকেই পরিবেশন করেন সুরের মূর্ছনা।
বাতিঘর এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের চারটি বিভাগীয় শহরে–চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটে। শাহবাগ ও বাংলাবাজারেও রয়েছে দুটি বিক্রয়কেন্দ্র। ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চার শতাধিক বই প্রকাশ করেছে। 

একুশ বছরে পা রাখার এই গৌরব উদযাপনে প্রতিষ্ঠানটি ছয় মাসব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটের শাখাগুলোয় হবে বইমেলা, আলোচনা, পাঠ, প্রকাশনা ও নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। 

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ