যমুনায় পানি বাড়ছেই, দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
Published: 11th, July 2025 GMT
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। দ্রুত নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক, শ্রমিক ও হাট-বাজারে চলাচলকারী নিম্ন-আয়ের মানুষ।
শুক্রবার (১১ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭২ ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যান্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেতে পানি উঠে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি হাটবাজারে কাঁচা সবজির দাম প্রতিদিন বাড়ছে। নদীভাঙনের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। নদী ভাঙ্গনের উপজেলাগুলো হলো, সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর। ইতোমধ্যে এসব এলাকার বেশকিছু আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে নদীতীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার ভাটপিয়ারি ও বাহুকা, কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন, চৌহালী উপজেলার খাষকউিলিয়া ইউনিয়নের জনতার স্কুল এলাকা, উমারপুর ইউনিয়ন, স্থল ইউনিয়নের তেঘরি, কুড়াগাছা, লাঙ্গলমুড়া, ছোট চৌহালী ও ঘোড়জান ইউনিয়নের ফুলহারা ও চালুহারা গ্রামে, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের গোপালপুর, সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর, শ্রীপুর, কুরসি, মাকড়া, ভাটদিঘুলিয়া ও কৈজুরী ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া গ্রাম এবং বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
ভাঙ্গন প্রবণ এলাকার আখ, পাট, বাদাম, পটল, সবজি ক্ষেত ও কাউনসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের তাণ্ডবে কাজিপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামে অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি ও শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি যমুনা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
এছাড়া কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণিচরের বাসিন্দা মান্নান বলেন, “বৃষ্টির কারণে সবজি শহরে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বাজারে দাম অনেক বেড়ে গেছে।”
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদীতে পানি বাড়ার কারণে প্রবল স্রোত বইছে। এ কারণে নদীতীরের বেশ কিছু স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
এছাড়া নদীতীরে সার্বক্ষণিক নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে ব্যাপকভাবে বন্যার আশংকা নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আশা করছি পানি বাড়ার হার ধীরে ধীরে কমবে। কারণ উজানের দিকে পানি নেমে যাচ্ছে।”
ঢাকা/অদিত্য/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প র উপজ ল র স র জগঞ জ নদ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষের বাড়িতে লুট-আগুন দেওয়ার অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে বাদীপক্ষের তিনটি বসতবাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে—এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ৮৭ জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দেওড়া গ্রামের সোয়া শতক সরকারি জায়গার দখল নিয়ে তিন-চার বছর ধরে দানা মিয়া ও শিপন মিয়ার লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে গ্রামবাসী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর জেরে গত ১৫ ও ২৩ নভেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার দুই দিনে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হত্যার পর আসামিপক্ষের অন্তত ১০টি বাড়িতেও ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
২৩ নভেম্বরের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে দানা মিয়ার পক্ষের বৃদ্ধ আরফজ আলী (৬০) নিহত হন। এ ঘটনায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে সরাইল থানায় হত্যা মামলা করা হয়। এর আগে ১৫ নভেম্বরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করে।
গত সোমবার উচ্চ আদালত থেকে হত্যা মামলার ১৭ জন আসামি জামিন পান। তাঁদের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার রাতে বাদীপক্ষের আবদুল মন্নাফ ও তাঁর দুই ভাই আবদুল হান্নান এবং আবদুস সত্তরের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় আবদুল হান্নানের মেয়ে লাকি আক্তার বাদী হয়ে আজ ভোরে গ্রামের ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর জেলা সদর থেকে ৬০ থেকে ৭০ জনের ফোর্স নিয়ে আমরা গ্রামে অভিযান চালিয়েছি। বুধবার রাতেও অভিযান করেছি। কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’