প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক ফুটবলার
Published: 25th, July 2025 GMT
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ফুটবলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশের লিগে খেলা ফুটবলারদের মেলা বসেছে। বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীকে দিয়ে উত্তেজনা রীতিমতো চূড়া স্পর্শ করেছে। জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে ২০১৩ সালে শুরু হয়েছিল প্রবাসী ফুটবলারদের জাতীয় দলে ভেড়ানোর যাত্রা, হামজা যোগ দেওয়ার পর এ সময়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জামাল ভূঁইয়া ছাড়াও এর মধ্যে প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন তারিক কাজী, শমিত সোম এবং ফাহামিদুল ইসলাম। এবার আলোচনায় উঠে এসেছেন আরও এক ফুটবলার। তাঁর নাম ফারহান আলী ওয়াহিদ।
এত দিন ফুলহামের বয়সভিত্তিক দলে খেলা ফারহান গতকাল ক্লাবটির সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম পেশাদার চুক্তি সম্পন্ন করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্টও করেছেন ফারহান। এর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের আলোচনার কেন্দ্রে এই উইঙ্গার।
আরও পড়ুনহামজা-শমিত হওয়ার স্বপ্নে ট্রায়ালে ৪৯ প্রবাসী ফুটবলার২৮ জুন ২০২৫লেফট উইংয়ে খেলা ফারহানের জন্ম ইংল্যান্ড। তাঁর মা–বাবা দুজনেই বাংলাদেশি হলেও তাঁদের জন্মও ইংল্যান্ডে। ফুটবলে ফারহানের যাত্রা শুরু হয় চেলসিতে। ২০১৯ সালে চেলসি অনূর্ধ্ব–১২ দল ছেড়ে যোগ দেন ফুলহামে। এরপর খেলেছেন ফুলহামের অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-২১ দলে। গত মৌসুমে চোটে ভুগলেও ফুলহাম অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে ২০ ম্যাচে ৭ গোল এবং ৪টি গোল বানান।
গত মৌসুমে ফুলহাম অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে অভিষেক হয় ফারহানের। যেখানে প্রিমিয়ার লিগ ইন্টারন্যাশনাল কাপে পিএসভির বিপক্ষে ৪-৪ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে বদলি নেমে গোলও করেন। এই পারফরম্যান্সই মূলত ফুলহামের সঙ্গে ফারহানের পেশাদার চুক্তির দুয়ার খুলে দেয়।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ফুলহামের সঙ্গে পেশাদার চুক্তি সই করে ফারহান বলেন, ‘এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ফুটবল খেলতে শুরু করার পর থেকেই আমি এই মুহূর্তের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আর এখন আমি এই পর্যায়ে আছি, অনুভূতিটা অসাধারণ।’
আরও পড়ুনশমিত এখন বাংলাদেশের, জুনে খেলবেন হামজার সঙ্গে০৬ মে ২০২৫এ সময় ফারহান আরও যোগ করে বলেছেন, ‘আমি ফুলহামে যোগ দিই অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায়ে। আর এটা রোলারকোস্টারের মতো একটা যাত্রা ছিল। এখানে পুরো পথচলাটা আমি দারুণভাবে উপভোগ করেছি। বয়সভিত্তিক প্রতিটি ধাপে আমার পাশে ভালো এক দল সতীর্থ ছিল, যারা আমাকে শুরু থেকেই আপন করে নিয়েছে। আমার পরিবার সব সময় আমার স্বপ্নপূরণে পাশে থেকেছে। আর এ জন্য তাঁদের অনেক ত্যাগও স্বীকার করেছে। তারা সব সময় আমাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে পা যেন মাটিতে থাকে।’
মা–বাবার কারণে সামনের দিনগুলোয় নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আলোচনায় থাকবেন ফারহান। তবে ফারহান শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। শুরুতে নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলে নিজের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করবেন তিনি। ২০২০ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব–১৫ দলে ডাক পেলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ক্যারিয়ার এগিয়ে চলার সঙ্গে ফারহান নিশ্চয়ই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন র ধ ব ফ লহ ম র ফ রহ ন র ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।