‘হামার এ্যাকনা ব্যাটা। তাক নিয়া হামারঘরে অনেক আসা আচিল। থানাত যায়া হামার ব্যাটা পানিত পরি মরি গেল। কী দোষ করচিল? কেটা তাক মারি ফেলালো। তোমরা হামার ব্যাটাক আনি দেও। হামি এর বিচার চাই।’ আজ শনিবার দুপুরে এভাবেই আহাজারি করছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঢুকে পুলিশকে ছুরিকাঘাতের পর পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার হওয়া সিজু মিয়ার (২৫) মা রিক্তা বেগম।

আজ সকালে সিজু মিয়াকে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাগুরিয়া গ্রামে দাফন করা হয়। ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই বিলাপ করছেন রিক্তা বেগম। পাশে সিজুর বাবা দুলাল মিয়া নির্বাক বসে ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সাঘাটা থানায় অভিযোগ করতে এসে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশের এক কনস্টেবলের বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সিজু মিয়া। পুলিশের অন্য সদস্যরা বাধা দিলে এক এএসআইকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তিনি। পরে গতকাল সকালে থানার পাশে একটি পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। সন্ধ্যায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রাত একটার দিকে সিজুর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। পরে তাঁকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুনগাইবান্ধায় থানায় ঢুকে পুলিশকে ছুরিকাঘাত করা যুবকের লাশ মিলল পাশের পুকুরে২৫ জুলাই ২০২৫

এ ঘটনায় সাঘাটা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। থানায় ঢুকে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে সিজুর মা রিক্তা বেগমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।

গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে বাগুরিয়া গ্রাম। ঘাঘট নদীর তীরে সোনাইল বাঁধ ঘেঁষে সিজু মিয়ার বাড়ি। তিন শতাংশ বসতভিটায় ছোট দুটি টিনশেড ঘর। এর বাইরে তাঁদের কোনো সম্পদ নেই। সিজুর বাবা দুলাল মিয়া দিনমজুর। তাঁর দুই মেয়ে দুলি বেগম ও খুশি বেগমের বিয়ে হয়েছে। সিজু মিয়া তাদের একমাত্র ছেলে ছিলেন। সিজু কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন।

সিজুর বড় বোন খুশি বেগম বলেন, তাঁর ভাই অপরাধ করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারত। তাঁর ভাই সারা রাত পুকুরের পানিতে ছিল। পুলিশ রাতেই উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। তাঁকে উদ্ধার না করে পাহারা দিয়েছে। পুলিশের গাফিলতির কারণে তাঁর ভাই মারা গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুনপুলিশকে ছুরিকাঘাতের পর দৌড়ে পুকুরে লাফ দেন যুবক: ব্রিফিংয়ে পুলিশ২১ ঘণ্টা আগে

তবে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সিজুর বাবা দুলাল মিয়া বলেন, ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারেননি তিনি। সে নিজে কখনো রাজমিস্ত্রি, কখনো পোশাক কারখানায় চাকরি করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। সংসারও চালিয়েছে। তাঁকে নিয়ে তাঁদের কত স্বপ্ন ছিল! সব মাটি হয়ে গেল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে মন্দিরে কালীপ্রতিমা ভাঙচুর

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার খাসকান্দি এলাকার এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরটি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। এখানে কালী ও দুর্গাপূজা করা হয়। এটি কানাইপুর-রণকাইল সড়কের পাশে, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের খাসকান্দি এলাকায় অবস্থিত। পাশেই রয়েছে একটি হোমিও ফার্মেসি।

মন্দির কমিটির সভাপতি বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রাত ১০টার দিকে পূজারিরা বাড়ি চলে যান। আজ বুধবার সকাল ৬টার দিকে এলাকার ভজন শীল নামের একজন মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখেন, বিভিন্ন প্রতিমার অংশবিশেষ ভাঙা। বাসুদেব বিশ্বাস জানান, দুর্বৃত্তরা কালীর ডান হাতের কবজি, বাঘের মাথার চুলসহ চারটি দাঁত, শিবের গলায় প্যাঁচানো সাপের লেজ, যোগিনীর বাঁ হাতের অংশ, ডাকিনীর দুটি দাঁত এবং পরনের কাপড়ের নিচের অংশ কিছুটা ভেঙে ফেলেছে।
পাকা ইমারত হলেও মন্দিরটির সামনের দিক খোলা। নেই কোনো ফটক, গ্রিল বা ছাউনির ব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানতে পারেননি আশপাশের কেউ। খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মন্দির পরিদর্শন করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, আজ বিকেলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমাগুলো মেরামত করে দেওয়ার জন্য প্রতিমা নির্মাণশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর খরচ বহন করবে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ফরিদপুর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা ও সহসভাপতি সুকেশ সাহা বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মন্দিরের সামনে কোনো ফটক না থাকায় দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পেরেছে। তাঁরা সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।

কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন বলেন, আগামী শুক্রবার এলাকাবাসীকে নিয়ে ওই মন্দির প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরের নিরাপত্তা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ