জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে, তাঁদের পুনর্বাসন করতে, এমনকি জুলাই ঘোষণাপত্র দিতেও অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক উপদেষ্টা যে ব্যর্থ, এটা আমরা এখন প্রকাশ্যে বলি।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘৩৬ জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের সম্মানে স্মরণসভায়’ তিনি এ কথাগুলো বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি ও ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালাইনস বাংলাদেশ।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার, বিচার এবং জুলাই সনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এবং শহীদ পরিবারের সঙ্গে বসতে হবে বলে মন্তব্য করেন সারজিস আলম। সব শহীদ পরিবারের সঙ্গে না বসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক উপদেষ্টাকে জবাবদিহি করতে হবে। শুধু চলতি দায়িত্ব পালন করার জন্য তাঁদের উপদেষ্টা পদে বসানো হয়নি। এক বছরে কী কী সংস্কার তাঁরা করেছেন, তা ঘোষণা করতে হবে।’

স্মরণসভায় জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির ওপর জোর দেন সারজিস আলম। এ সময় তিনি গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলার ঘটনার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে তাঁদের ওপর আক্রমণ শুধু একটি দলের ওপর আক্রমণ নয়। শহীদ পরিবারের সদস্যরাও সেখানে গেলে তাঁদের ওপরও একই রকমভাবে আক্রমণ হবে।

এর কারণ হিসেবে সারজিস আলম বলেন, গোপালগঞ্জে যারা আছে, তাদের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা শহীদ পরিবারের সদস্যরা। দেশে শহীদদের জন্য যতগুলো স্মৃতিফলক তৈরি হবে, প্রতিটি তাদের জন্য গলার কাঁটা হবে। এ জন্য তারা জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের এক হতে দেবে না বলে তিনি মনে করেন।

জুলাইয়ে হত্যা ও হামলার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা সুপারিশ করছেন বলে সভায় অভিযোগ করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যেভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও দলের সহযোগিতায় উন্মুক্ত চলাফেরা করছেন, তাতে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ভয় পাচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সহয গ র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

ভারত চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “তারা (ভারত) ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।” 

বুধবার (৩০ জুলাই)  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, চুক্তিতে পৌঁছালে ব্যর্থ হলে ভারত কি উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।”

ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা বর্ধিত শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।

আরো পড়ুন:

পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প

নিউ ইয়র্কে গুলিতে নিহত রতনের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া 

ভারতীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তারা গত কয়েক মাস ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসি-কে বলেন, “ভারত তাদের বাজারের কিছু অংশ খুলে দিতে চাচ্ছে, আমরা আলোচনায় আগ্রহী। তবে কতটা অগ্রসর হতে তারা প্রস্তুত- সেটি আরো আলোচনা দরকার।’

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন। তার অভিযোগ, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু, কিন্তু বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভারত মার্কিন পণ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে।

ট্রাম্প বলেন, “এখন আমি দায়িত্বে আছি, তাই ভারত তা করতে পারবে না।” তিনি ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ ও বাণিজ্য সম্পর্কের ‘বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা পরে স্থগিত করা হয়। তবে নতুন করে তিনি আবারো কড়া অবস্থান নিচ্ছেন।

উভয় পক্ষই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, কর্মকর্তারা আলোচনাকে কখনো ‘ইতিবাচক’, আবার কখনোবা ‘পরিমিত’ বলে বলে মনে করছেন।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার স্বীকার করেছেন যে- যদিও তিনি আগে বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ‘আসন্ন’, কিন্তু “এটি বোঝা উচিত যে, দিল্লির বাণিজ্য নীতি ‘অনেক দিন ধরেই সুরক্ষাবাদী’ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।”

গ্রিয়ার জানান, ট্রাম্প এমন চুক্তি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যান্য দেশের বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্মুক্ত করবে।

উভয় দেশের জন্যই কৃষি ও দুগ্ধ খাত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ভারত দুগ্ধ ও কৃষিখাতে বড় পরিসরে বাজার উন্মুক্ত করতে অনাগ্রহী। আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মোদি সরকার সংবেদনশীল কৃষি খাত রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এই খাতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয়ের জীবিকা জড়িত।

গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সিএনবিসিকে বলেন, কৃষিক্ষেত্র ভারতের জন্য সংবেদনশীল এবং সরকার কৃষকদের স্বার্থ ‘ভালোভাবে সুরক্ষিত’ নিশ্চিত করবে।

গোয়েল আরো বলেন, ভারত শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এবং মোদি এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

ভারত ইতিমধ্যেই বোর্বন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের সঙ্গে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি চালিয়ে যাচ্ছে, যা ট্রাম্প কমাতে আগ্রহী।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ