যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ‘সম্মত’, তবু থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা
Published: 27th, July 2025 GMT
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে আজ রোববার চতুর্থ দিনের মতো পাল্টাপাল্টি গোলা হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠা সত্ত্বেও সংঘর্ষ চলছেই। এএফপির সংবাদকর্মী ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
কম্বোডিয়ার সামরাং শহরে থাকা এএফপির সাংবাদিকেরা ভোর থেকে নিয়মিত গোলার আওয়াজ শুনেছেন। সংঘর্ষস্থল থেকে শহরটির অবস্থান প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও বলেছেন, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে দুটি বিরোধপূর্ণ মন্দিরের কাছে সংঘর্ষ শুরু হয়।
গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন।এর আগে গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন।
ট্রাম্পের এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে আজ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘাত থামাতে তাঁর দেশ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আগ্রহী।
হুন মানেত আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তাঁর দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলবেন এবং থাই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, ব্যাংকক যেন কোনো চুক্তি ভঙ্গ না করে।
গতকাল শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে দেশ দুটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এদিন স্কটল্যান্ড সফরে ছিলেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে এই মাত্র কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম।’ পরে আরেকটি পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘এই মাত্র থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। এটি খুবই ভালো একটি আলাপচারিতা ছিল। কম্বোডিয়ার মতো থাইল্যান্ডও দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায়।’
সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধ শত বছরের বেশি পুরোনো। গত মে মাসে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে দুই দেশ। শনিবার পর্যন্ত চলমান সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।ওই পোস্টে ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘আমি (থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর) এই বার্তা আবার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর যুদ্ধবিরতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে। শিগগিরই তা আমরা দেখতে পাব।’ লড়াই না থামলে দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, থাইল্যান্ড ‘নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত’ হলেও তারা ‘কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিক মনোভাব দেখতে চায়’।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ড–কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ, কী কথা হলো১১ ঘণ্টা আগেসীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধ শত বছরের বেশি পুরোনো। গত মে মাসে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে দুই দেশ। শনিবার পর্যন্ত চলমান সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সংঘাত নিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চেয়া কেও।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ১৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত হয় ছ ন কম ব ড য চলম ন স বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি।
ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’
কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”
লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”
২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।
তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।
তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।
দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।
অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।”
তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
ঢাকা/শাহেদ