হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্যযাত্রা
Published: 28th, July 2025 GMT
মোহাম্মদ আসাদ :
আপনি তো চারুকলায় পড়াশোনা করেছেন ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে। দক্ষ ছিলেন জলরং ও রেখাচিত্রে। সেখান থেকে ভাস্কর্যে এলেন কীভাবে?
হামিদুজ্জামান খান : আমি গ্রামে বড় হয়েছি। সেখান থেকে ঢাকায় এসে চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়েছি ১৯৬২ সালে। তখন চারুকলা কলেজে বিভাগ ছিল পাঁচটি। ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওরিয়েন্টাল ও মৃৎশিল্প বিভাগ। আমি ভর্তি হয়েছি ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে। গ্রামে থাকতে বা ঢাকায় এসে ভাস্কর্য সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। চারুকলায়ও তখন ভাস্কর্য বিভাগ খোলা হয়নি। এই বিভাগটি রাজ্জাক স্যার (শিল্পী আবদুর রাজ্জাক) শুরু করেন ১৯৬৪ সালে।
ইংল্যান্ড, প্যারিস, ইতালি দেখে আমি দেশে ফিরলাম ১৯৬৮ সালে। সেখানে ছিলাম ছয়-সাত মাস। এই কয় মাসের বিদেশভ্রমণে নিজের পরিবর্তনটা টের পাচ্ছি। পৃথিবীটা দেখেছি, পৃথিবীর উন্নতিটা দেখেছি। আমি একটা অন্য মানুষ হয়ে গেছি। আবেদিন স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যারকে সব বললাম, তিনি বললেন, ভালো করেছ, ইউরোপ ঘুরে সব দেখে এসেছ। বললাম, স্যার আমি ভাস্কর্য করতে চাই। তিনি বললেন, রাজ্জাকের কাছে যাও, আমি বলে দিচ্ছি। রাজ্জাক স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, আমি ভাস্কর্য করতে চাই। স্যার খুশি হলেন। তখন ভাস্কর্য কোর্স শুরু হয়নি। সাবসিডিয়ারি হিসেবে পড়ায়। জাহান ভাই (আনোয়ার জাহান) শুধু কাঠ কাটে। কাঠ নিয়ে এসে ধাম ধাম কাঠ কেটে ভাস্কর্য তৈরি করে। পিয়ারু (আনোয়ারুল হক পিয়ারু) ভাইও মাটি দিয়ে মডেলিং করত। পরে জাহান ভাইয়ের চাকরি হলো আমেরিকান স্কুলের আর্ট টিচার হিসেবে। বেতন আড়াই হাজার টাকা। চারুকলায় বেতন ছিল ১৭৫ টাকা। চাকরির পাশাপাশি আবার গুলশানে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের পেইন্টিং শেখাত। সেখানে তার অনেক টাকা। আমি রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে ৯ মাস কাজ করলাম। মাটি দিয়ে রিয়েলিস্টিক কাজ করি। পরে ঢালাই করি সিমেন্টে। সেই সময়ে আমি অনেক অবয়ব করেছি। তখনকার আমার করা একটা অবয়ব জাতীয় জাদুঘরে আছে। খুব সুন্দর হয়েছিল কাজটা। একজন মালির অবয়ব।
একদিন আবেদিন স্যার আমাকে বাসায় ডাকলেন। বললেন, ‘তুমি একটা দরখাস্ত লেখো ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হওয়ার জন্য। আমি সাইন করে দিলে তোমার হয়ে যাবে।’ আবেদিন স্যার সাইন দিলে আর কিছু লাগে না। আমি বললাম, স্যার আমি তো ভাস্কর্য সেভাবে পারি না। স্যার বললেন, তোমার ড্রয়িংটা ভালো আছে। ভাস্কর্যে ভালো করবে। তোমার হবে। দরখাস্ত লিখে স্যারের সাইন নিয়ে জমা দিলাম। ডিপিআই অফিস থেকে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়ে গেল। শিক্ষক হিসেবে ভাস্কর্য বিভাগে যোগ দিলাম ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে।
সাউথ কোরিয়ায় হামিদুজ্জামানের ভাস্কর্য ‘স্টেপ’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ স কর য প ইন ট চ র কল বলল ন বলল ম
এছাড়াও পড়ুন:
হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্যযাত্রা
মোহাম্মদ আসাদ :
আপনি তো চারুকলায় পড়াশোনা করেছেন ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে। দক্ষ ছিলেন জলরং ও রেখাচিত্রে। সেখান থেকে ভাস্কর্যে এলেন কীভাবে?
হামিদুজ্জামান খান : আমি গ্রামে বড় হয়েছি। সেখান থেকে ঢাকায় এসে চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়েছি ১৯৬২ সালে। তখন চারুকলা কলেজে বিভাগ ছিল পাঁচটি। ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওরিয়েন্টাল ও মৃৎশিল্প বিভাগ। আমি ভর্তি হয়েছি ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে। গ্রামে থাকতে বা ঢাকায় এসে ভাস্কর্য সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। চারুকলায়ও তখন ভাস্কর্য বিভাগ খোলা হয়নি। এই বিভাগটি রাজ্জাক স্যার (শিল্পী আবদুর রাজ্জাক) শুরু করেন ১৯৬৪ সালে।
ইংল্যান্ড, প্যারিস, ইতালি দেখে আমি দেশে ফিরলাম ১৯৬৮ সালে। সেখানে ছিলাম ছয়-সাত মাস। এই কয় মাসের বিদেশভ্রমণে নিজের পরিবর্তনটা টের পাচ্ছি। পৃথিবীটা দেখেছি, পৃথিবীর উন্নতিটা দেখেছি। আমি একটা অন্য মানুষ হয়ে গেছি। আবেদিন স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যারকে সব বললাম, তিনি বললেন, ভালো করেছ, ইউরোপ ঘুরে সব দেখে এসেছ। বললাম, স্যার আমি ভাস্কর্য করতে চাই। তিনি বললেন, রাজ্জাকের কাছে যাও, আমি বলে দিচ্ছি। রাজ্জাক স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, আমি ভাস্কর্য করতে চাই। স্যার খুশি হলেন। তখন ভাস্কর্য কোর্স শুরু হয়নি। সাবসিডিয়ারি হিসেবে পড়ায়। জাহান ভাই (আনোয়ার জাহান) শুধু কাঠ কাটে। কাঠ নিয়ে এসে ধাম ধাম কাঠ কেটে ভাস্কর্য তৈরি করে। পিয়ারু (আনোয়ারুল হক পিয়ারু) ভাইও মাটি দিয়ে মডেলিং করত। পরে জাহান ভাইয়ের চাকরি হলো আমেরিকান স্কুলের আর্ট টিচার হিসেবে। বেতন আড়াই হাজার টাকা। চারুকলায় বেতন ছিল ১৭৫ টাকা। চাকরির পাশাপাশি আবার গুলশানে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের পেইন্টিং শেখাত। সেখানে তার অনেক টাকা। আমি রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে ৯ মাস কাজ করলাম। মাটি দিয়ে রিয়েলিস্টিক কাজ করি। পরে ঢালাই করি সিমেন্টে। সেই সময়ে আমি অনেক অবয়ব করেছি। তখনকার আমার করা একটা অবয়ব জাতীয় জাদুঘরে আছে। খুব সুন্দর হয়েছিল কাজটা। একজন মালির অবয়ব।
একদিন আবেদিন স্যার আমাকে বাসায় ডাকলেন। বললেন, ‘তুমি একটা দরখাস্ত লেখো ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হওয়ার জন্য। আমি সাইন করে দিলে তোমার হয়ে যাবে।’ আবেদিন স্যার সাইন দিলে আর কিছু লাগে না। আমি বললাম, স্যার আমি তো ভাস্কর্য সেভাবে পারি না। স্যার বললেন, তোমার ড্রয়িংটা ভালো আছে। ভাস্কর্যে ভালো করবে। তোমার হবে। দরখাস্ত লিখে স্যারের সাইন নিয়ে জমা দিলাম। ডিপিআই অফিস থেকে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়ে গেল। শিক্ষক হিসেবে ভাস্কর্য বিভাগে যোগ দিলাম ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে।
সাউথ কোরিয়ায় হামিদুজ্জামানের ভাস্কর্য ‘স্টেপ’