মোহাম্মদ আসাদ :

আপনি তো চারুকলায় পড়াশোনা করেছেন ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে। দক্ষ ছিলেন জলরং ও রেখাচিত্রে। সেখান থেকে ভাস্কর্যে এলেন কীভাবে?

হামিদুজ্জামান খান : আমি গ্রামে বড় হয়েছি। সেখান থেকে ঢাকায় এসে চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়েছি ১৯৬২ সালে। তখন চারুকলা কলেজে বিভাগ ছিল পাঁচটি। ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওরিয়েন্টাল ও মৃৎশিল্প বিভাগ। আমি ভর্তি হয়েছি ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে। গ্রামে থাকতে বা ঢাকায় এসে ভাস্কর্য সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। চারুকলায়ও তখন ভাস্কর্য বিভাগ খোলা হয়নি। এই বিভাগটি রাজ্জাক স্যার (শিল্পী আবদুর রাজ্জাক) শুরু করেন ১৯৬৪ সালে। 

ইংল্যান্ড, প্যারিস, ইতালি দেখে আমি দেশে ফিরলাম ১৯৬৮ সালে। সেখানে ছিলাম ছয়-সাত মাস। এই কয় মাসের বিদেশভ্রমণে নিজের পরিবর্তনটা টের পাচ্ছি। পৃথিবীটা দেখেছি, পৃথিবীর উন্নতিটা দেখেছি। আমি একটা অন্য মানুষ হয়ে গেছি। আবেদিন স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যারকে সব বললাম, তিনি বললেন, ভালো করেছ, ইউরোপ ঘুরে সব দেখে এসেছ। বললাম, স্যার আমি ভাস্কর্য করতে চাই। তিনি বললেন, রাজ্জাকের কাছে যাও, আমি বলে দিচ্ছি। রাজ্জাক স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, আমি ভাস্কর্য করতে চাই। স্যার খুশি হলেন। তখন ভাস্কর্য কোর্স শুরু হয়নি। সাবসিডিয়ারি হিসেবে পড়ায়। জাহান ভাই (আনোয়ার জাহান) শুধু কাঠ কাটে। কাঠ নিয়ে এসে ধাম ধাম কাঠ কেটে ভাস্কর্য তৈরি করে। পিয়ারু (আনোয়ারুল হক পিয়ারু) ভাইও মাটি দিয়ে মডেলিং করত। পরে জাহান ভাইয়ের চাকরি হলো আমেরিকান স্কুলের আর্ট টিচার হিসেবে। বেতন আড়াই হাজার টাকা। চারুকলায় বেতন ছিল ১৭৫ টাকা। চাকরির পাশাপাশি আবার গুলশানে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের পেইন্টিং শেখাত। সেখানে তার অনেক টাকা। আমি রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে ৯ মাস কাজ করলাম। মাটি দিয়ে রিয়েলিস্টিক কাজ করি। পরে ঢালাই করি সিমেন্টে। সেই সময়ে আমি অনেক অবয়ব করেছি। তখনকার আমার করা একটা অবয়ব জাতীয় জাদুঘরে আছে। খুব সুন্দর হয়েছিল কাজটা। একজন মালির অবয়ব। 

একদিন আবেদিন স্যার আমাকে বাসায় ডাকলেন। বললেন, ‘তুমি একটা দরখাস্ত লেখো ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হওয়ার জন্য। আমি সাইন করে দিলে তোমার হয়ে যাবে।’ আবেদিন স্যার সাইন দিলে আর কিছু লাগে না। আমি বললাম, স্যার আমি তো ভাস্কর্য সেভাবে পারি না। স্যার বললেন, তোমার ড্রয়িংটা ভালো আছে। ভাস্কর্যে ভালো করবে। তোমার হবে। দরখাস্ত লিখে স্যারের সাইন নিয়ে জমা দিলাম। ডিপিআই অফিস থেকে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়ে গেল। শিক্ষক হিসেবে ভাস্কর্য বিভাগে যোগ দিলাম ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে।

সাউথ কোরিয়ায় হামিদুজ্জামানের ভাস্কর্য ‘স্টেপ’.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ স কর য প ইন ট চ র কল বলল ন বলল ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ