শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও তা করে নাই: আসিফ নজরুল
Published: 29th, July 2025 GMT
শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও মনে হয় এত জঘন্য অপরাধ করে নাই বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, “মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহতদের গুলি করে মেরে ফেলা, নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা.
“১৯৭১ সালে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলেছে, এরকম কোনো ফুটেজ আমি দেখি নাই। ১৯৭১ সালে একজন গুলি খেয়েছে, তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সে অবস্থায় তাকে গুলি করেছে। কোনো মুক্তিযোদ্ধার এমন কোনো বর্ণনা আমি পড়ি নাই বা ফুটেজ দেখি নাই। অন্যরকম নৃশংসতা থাকতে পারে, কিন্তু এরকম নৃশংসতা করে নাই” বলে দাবি করেন তিনি।
এত বড় গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “একটা দল ১৫ বছর শুধু মিথ্যা আর নির্যাতন করে চালিয়েছে। এখনো তাদের মিথ্যাচার বিন্দুমাত্র থামেনি। এখনো নির্যাতনের ইচ্ছা বিন্দুমাত্র থামেনি। আপনারা যখন মহাখুনি শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনতে পান, দেখবেন এখনো তার নির্যাতন করার ইচ্ছা আছে। এরা কি বিচারে কোনো রকম গাফিলতি থাকে সেটা উন্মোচন করার চেষ্টা করবে না? আমার তো অনেক দায়িত্ব। এই বিচারকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এই বিচারে আপনাদের (শহীদ পরিবার) হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি, যেই প্রক্রিয়ায় বিচার এগোচ্ছে, ইনশাআল্লাহ আমাদের সরকারের আমলেই আপনারা কাঙ্ক্ষিত মামলাগুলোর রায় পাবেন। এমনভাবে বিচারের অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা রেখে যাব, কোনো সরকার চাইলেও বিচার থেকে সরতে পারবে না।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আর আমি বিশ্বাস করি না, ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াত যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা বিচারে শৈথিল্য বা গাফেলতি দেখাবে। তারা সবাই নির্যাতিত মানুষ।”
পরে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)