রাজশাহীতে রিকশাচালককে প্রথমে জুতাপেটা ও পরে লাঠিপেটা করে আলোচিত সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসানের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়টিও এখন কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে তাঁকে নতুন কর্মস্থলে পদায়নের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার (২৭ জুলাই) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়ার সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। তাঁকে বুধবারের (৩০ জুলাই) মধ্যে সেখানে যোগ দিতে বলা হয়। এর আগে তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক রিকশাচালককে নির্দয়ভাবে পেটান। এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।

জাহিদ হাসানের স্ত্রী একজন বিচারক। রাজশাহীতে ঘটনাটি ঘটেছিল জাজেস কোয়ার্টারের সামনেই। ভাড়া ঠিক করে না উঠে কম টাকা দেওয়ায় রিকশাচালক তাঁকে ‘লাট সাহেব’ বলেছিলেন বলে অভিযোগ। এতেই মেজাজ হারিয়ে ওই রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। এরপর গাড়ির ব্যাকডালা থেকে লাঠি বের করে তিনি রিকশাচালককে পেটান। এ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘“আরেকবার বল” বলেই পায়ের জুতা খুলে রিকশাচালককে পেটাতে থাকেন সমাজসেবা কর্মকর্তা’ শিরোনামে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পরে ৩ মার্চ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) শাখার এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) শহীদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে শহীদুল ইসলাম সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

আরও পড়ুন‘আরেকবার বল’ বলেই পায়ের জুতা খুলে রিকশাচালককে পেটাতে থাকেন সমাজসেবা কর্মকর্তা২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

মহিউদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, জাহিদ হাসান তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাঁর দ্বারা আর হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছেন। রিকশাচালকের সঙ্গে ‘ভুল–বোঝাবুঝি সৃষ্টির কারণে’ তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।

জাহিদ হাসান তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ঘটনাটি তাঁর জীবনকে বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ শোধরানোর মধ্য দিয়ে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন। তাই তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা সমীচীন মর্মে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো এবং তাঁর সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করা হলো।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, জাহিদ হাসানের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। রিকশাওয়ালাকে জুতাপেটা করার ঘটনায় তাঁর কিছুই হলো না—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুই হলো না এটা ঠিক নয়। অনেক কিছুই হয়েছে। চাকরি বিধি অনুযায়ী সবকিছুই তার রেকর্ডে থেকে যাবে। ভবিষ্যতে তার চাকরির ওপরে এর প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে রিকশাচালককে জুতাপেটা করা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত০৪ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি কি মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ বদলে দেবে

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফ্রান্সের সাহসী সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার ধরন পাল্টে দিতে পারে। যদিও এটি গাজায় চলমান সংঘর্ষ বা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ওপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র যে সময় নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতে সামরিক শক্তির আশ্রয় নিচ্ছে, যেমন রাশিয়া ইউক্রেনে কিংবা সম্প্রতি ইরান ও তাদের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলা; সেই সময় কূটনৈতিক সমাধান এবং ‘যুদ্ধ নয়, শান্তির’ বার্তাই দিতে চাইছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

নিজের দ্বিতীয় ও শেষ মেয়াদের আর দুই বছরের কম সময় বাকি থাকা মাখোঁর জন্য এ বিষয় ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির সঙ্গেও জড়িত। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সময় কার্যকরভাবে এগিয়ে না এলে ইতিহাসের পাতায় তা কালিমা হয়ে থাকতে পারে।

পারমাণবিক শক্তিধর, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি দেশের নেতা হিসেবে মাখোঁর হাতে বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব রাখার অনেক উপায় রয়েছে।

জি-৭ গোষ্ঠীর প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া মাখোঁর জন্য নিজ দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। ইউরোপে সবচেয়ে বড় ইহুদি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস ফ্রান্সে। এমন এক দেশে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জনমতের ভারসাম্যে হাঁটছেন।

তাঁর ঘোষণায় কিছু মানুষ আনন্দিত হবেন, আবার কেউ ক্ষুব্ধ। গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া তাঁর ঘোষণার পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়ায় এর প্রতিফলন পাওয়া গেছে।

এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করার পরও এখন মাখোঁ ইঙ্গিত দিচ্ছেন—এ সমর্থনেরও একটা সীমা রয়েছে।

ফ্রান্সের এ অবস্থান বদলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।’

এটি একটি পদক্ষেপ, কিন্তু তা কোনো জাদুর কাঠি নয়

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নিজ নিজ রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা আজকের বাস্তবতায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরাশার বলেই মনে হচ্ছে। কেননা, ইসরায়েলের তাণ্ডবে ফিলিস্তিনের গাজা একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপন ক্রমেই বাড়ছে।

এ অবস্থায় শুধু মাখোঁর বক্তব্যেই বাস্তবতা বদলাবে না। তবুও তাঁর বার্তা স্পষ্ট, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে ‘দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ কূটনৈতিক পথে অর্জন করার আশা কখনো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না, তা আজ যতই অসম্ভব মনে হোক।

তথাকথিত ‘পি-৫’ রাষ্ট্রগুলো নানা ইস্যু, যেমন ইউক্রেন, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পরস্পর বিভক্ত। ফলে শুধু ফ্রান্সের অবস্থান বদলে হঠাৎই ফিলিস্তিনিদের জন্য পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে, এমন আশা করাটা ঠিক হবে না। তবে গাণিতিক অর্থে হলেও ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনায় বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়তে পারে।

মাখোঁ এক চিঠিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে লেখেন, ‘এ সমাধানই একমাত্র পথ, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার জবাব দিতে পারে। এখন যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মাখোঁ আরও লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে। আমি এটা মেনে নিতে পারি না।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

সম্পর্কিত নিবন্ধ