রিকশাচালককে পিটিয়েও পার পেয়ে গেলেন সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা
Published: 30th, July 2025 GMT
রিকশাচালককে পেটানোর পরও পার পেয়ে গেলেন আলোচিত সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেল। সমাজসেবা মন্ত্রণালয় তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ।
শুধু তাই-ই নয়, বরখাস্ত থাকার সময়টি কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে তাকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: রিকশাচালককে জুতাপেটা করলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা
আরো পড়ুন:
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই
রবিবার (২৭ জুলাই) সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়ার সই করা এক প্রজ্ঞাপনে জাহিদ হাসান রাসেলকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। তাকে বুধবারের (৩০ জুলাই) মধ্যে সেখানে যোগ দিতেও বলা হয়।
জাহিদ হাসান রাসেল রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক রিকশাচালককে নির্দয়ভাবে পেটান। এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
আরো পড়ুন: রিকশাচালককে জুতাপেটা করা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরখাস্ত
জাহিদ হাসান রাসেলের স্ত্রী একজন বিচারক। রাজশাহীতে ঘটনাটি ঘটেছিল জাজেস কোয়ার্টারের সামনেই। ভাড়া ঠিক করে না উঠে কম টাকা দেওয়ায় রিকশাচালক তাকে ‘লাট সাহেব’ বলেছিলেন। এতেই মেজাজ হারিয়ে ওই রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। এতেও তার মনের ক্ষোভ মেটেনি। গাড়ির ব্যাকডালা থেকে লাঠি বের করে তিনি রিকশাচালককে পেটান। ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) শাখার এক প্রজ্ঞাপনে জাহিদ হাসান রাসেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) শহীদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে শহীদুল ইসলাম সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.
জাহিদ হাসান রাসেল তার লিখিত বক্তব্যে জানান, ঘটনাটি তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ শোধরানোর মধ্য দিয়ে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন। তাই তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা সমীচীন মর্মে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো এবং তার সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করা হলো।
জাহিদ হাসান রাসেল পবায় থাকাকালে নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের ৩১ মার্চ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।
শিমুল জানান, জাহিদ প্রায়ই অশোভন আচরণ করতেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনি সবার সামনে অকথ্য ও অশালীন আচরণ করেন।
এর আগে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে পবা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে জাহিদ হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।
জাহিদ হাসান রাসেলের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শরীফবাড়ি গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি নিয়ম ভেঙে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা থেকে সরকারি ডাস্টবিন নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার ওই ডাস্টবিন বিতরণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ হাসান রাসেল।
জাহিদ হাসান রাসেলের বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় যোগদানের কথা ছিল আজ। যোগ দিয়েছেন কি না জানতে দুপুরে ফোন করা হয় তাকে। সাংবাদিক পরিচয় দিলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান জানান, জাহিদ হাসানের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। তিনি দুপচাচিয়ায় যোগ দিয়েছেন কি না তা জানেন না।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ কর মকর ত উপজ ল তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী