ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে কিছু বিকল্প ভাবছে। যেমন সে দেশ থেকে পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি করা। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে হঠাৎ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তার তাৎক্ষণিক পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এখন ভারতের নেই। এমনটাই জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে যুক্ত ভারতের কয়েক কর্মকর্তা।

নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় তারা বিস্মিত ও হতাশ হয়েছেন। সরকার এখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ঠিক রাখতে আগ্রহী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য কেনার উপায় খুঁজছে।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত প্রাকৃতিক গ্যাস, যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং সোনা আমদানি বাড়ানোর কথা ভাবছে। এতে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি কিছুটা কমবে। তবে তারা বলছে, কোনো নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার পরিকল্পনা নেই।

নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির বিরুদ্ধে এখনই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না ভারত। তবে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) তাদের অধিকার সংরক্ষণ করেছে, যাতে প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও গাড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্কের জবাব দেওয়া যায়।

কয়েক দিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল গতকাল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব আমরা খতিয়ে দেখছি। রপ্তানিকারক ও শিল্পগোষ্ঠীর কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও অগ্রগতির জন্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ভারতের কারণেই বাণিজ্য আলোচনা ধীরগতিতে চলছে। সিএনবিসিকে তিনি বলেন, পুরো বাণিজ্য দল ভারত নিয়ে হতাশ। তিনি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ ভারতকেই নিতে হবে।

ভারতের এই পদক্ষেপে ট্রাম্পের মন গলবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে কথিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, ভারতের শুল্ক খুব বেশি এবং তাদের বাণিজ্য বাধাগুলো ‘কঠিন ও বিরক্তিকর’। তিনি আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনায় ভারতের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং সপ্তাহের শেষেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে; কিন্তু এর পরেই নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমি কেয়ার করি না।’ তিনি ভারত ও রাশিয়াকে ‘মৃত অর্থনীতি’ বলে উল্লেখ করেন।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি ছিল প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। বাণিজ্যঘাটতি আছে, এমন দেশের তালিকায় ভারত ১১তম। ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ১২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ট্রাম্প এ মাসের শুরুতে ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ভারতের কারণেই বাণিজ্য আলোচনা ধীরগতিতে চলছে। সিএনবিসিকে তিনি বলেন, পুরো বাণিজ্য দল ভারত নিয়ে হতাশ। তিনি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ ভারতকেই নিতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, ভারত ‘ভালো বৈশ্বিক অংশীদার নয়’।

ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধিবমান কেনায় আগ্রহী নয়। ফেব্রুয়ারিতে মোদি যখন হোয়াইট হাউস সফরে যান, তখন ট্রাম্প ওই যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দেন।

ভারত গত বুধবার জানিয়েছে, তারা এমন একটি বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী যা ‘দুই পক্ষের জন্য লাভজনক’ এবং তাদের কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করাও জরুরি।

দুই দেশই আগে জানিয়েছিল, এ বছরের শেষ নাগাদ তারা দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই ভারতে এসে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, তা বলা কঠিন। নয়াদিল্লিভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দাস বলেন, ‘ট্রাম্প তো ট্রাম্পই। তাকে নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। এটা হয়তো একটি কৌশল, যেমন তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে করেছিলেন। সেবারও তিনি প্রথমে ৩০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন, পরে সেটি ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন।

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র পদক ষ প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ