৭ মে মধ্যরাতের ঠিক পরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অপারেশন রুমের পর্দা লাল রঙে আলোকিত হয়ে ওঠে। রুমে থাকা কম্পিউটার স্ক্রিনে সীমান্তের ওপারে ভারতে কয়েক ডজন সক্রিয় শত্রু বিমানের অবস্থান দেখানো হচ্ছিল। ভারতীয় আক্রমণের আশঙ্কায় বিমানবাহিনী প্রধান জহির সিধু কয়েকদিন ধরে অপরাশেরন রুমের ঠিক পাশেই একটি গদিতে ঘুমাচ্ছিলেন।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও, ভারত প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ৭ মে ভোরে পাকিস্তানে বিমান হামলার মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে ভারত।

সিধু চীনা তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমানগুলোকে আক্রমণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অপারেশন রুমে উপস্থিত পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন (পিএএফ) কর্মকর্তা বলেন, সিধু তার কর্মীদের ভারতীয় রাফালকে লক্ষ্যবস্তু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফ্রান্সের তৈরি এই রাফাল ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর গর্ব।

পাকিস্তানি ওই কর্মকর্তা বিমানবাহিনী প্রধানের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তিনি রাফাল চেয়েছিলেন।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের অন্ধকারে সংঘটিত এই এক ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে প্রায় ১১০টি বিমান অংশ নিয়েছিল, যা এটিকে কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বিমান যুদ্ধে পরিণত করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মে মাসে রয়টার্স জানিয়েছিল, জে-১০ কমপক্ষে একটি রাফালে ভূপাতিত করেছে। এর ভূপাতিতকরণ সামরিক সম্প্রদায়ের অনেককে অবাক করেছে এবং অপ্রমাণিত চীনা বিকল্পগুলির বিরুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

রাফালকে গুলি করে ভূপাতিত করার খবর প্রকাশের পর এর উৎপাদনাকারী প্রতিষ্ঠান ড্যাসাল্টের শেয়ারের দরপতন ঘটেছিল। রাফাল কেনার জন্য অপেক্ষমান ছিল ইন্দোনেশিয়া। সেই ইন্দোনেশিয়া ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের পরে জানিয়েছে, তারা এখন জে-১০ কেনার কথা বিবেচনা করছে।

কিন্তু দুই ভারতীয় কর্মকর্তা এবং তাদের তিন পাকিস্তানি প্রতিপক্ষের সাথে রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, রাফালের কার্যকারিতা মূল সমস্যা ছিল না। বরং জে-১০ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা চীন-নির্মিত পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা সম্পর্কে ভারতীয় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল এর ভূপাতিতকরণের মূল কারণ। চীন এবং পাকিস্তানই একমাত্র দেশ যারা জে-১০, যা ভিগোরাস ড্রাগন নামে পরিচিত এবং পিএল-১৫ উভয়ই পরিচালনা করে।

ত্রুটিপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের কারণে রাফাল পাইলটরা পাকিস্তানের গুলিবর্ষণের দূরত্বের বাইরে থাকার মিথ্যা ধারণা পেয়েছিলেন। তাদের বিশ্বাস ছিল ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম নয় পিএল-১৫।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছি।”

ভারতীয় পাইলটদের বিভ্রান্ত করার জন্য ইসলামাবাদ দিল্লির সিস্টেমে একটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধবিমান আক্রমণ চালিয়েছে। 

লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের বিমান যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, “ভারতীয়রা গুলি চালানোর আশা করেনি।  পিএল-১৫ স্পষ্টতই দীর্ঘ পরিসরে খুব সক্ষম।”

পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মতে, রাফালে আঘাত করা পিএল-১৫টি প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে ছোঁড়া হয়েছিল। এটি রেকর্ড করা সবচেয়ে দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে হামলার মধ্যে একটি হবে।

ভারতের প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গোয়েন্দা ত্রুটি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাব দেয়নি। দিল্লি রাফাল বিমান ভূপাতিত করার বিষয়টি স্বীকার করেনি, তবে ফ্রান্সের বিমানবাহিনী প্রধান জুন মাসে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি রাফাল যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়ার তৈরি সুখোইসহ ভারতের আরো দুটি বিমানের ক্ষতির প্রমাণ দেখেছেন। 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ প ত ত কর ব ম নব হ ন কর মকর ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে ‘সম্ভাব্য অবৈধ মৃত্যুর তদন্তসংক্রান্ত মিনেসোটা নীতিমালা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর (ইউএনআরসি) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ আয়োজনে ৩০ ও ৩১ জুলাই ঢাকার সিআইডি সদর দপ্তরে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডি।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সিআইডির প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্লাহ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিআইডি এখন একটি আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠছে। মানবাধিকার রক্ষা ও বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রমাণনির্ভর নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক কর্মশালা আমাদের সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা ইচ্ছামতো মৃত্যুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিন্‌জ। তিনি বলেন, মিনেসোটা নীতিমালা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, যা সন্দেহজনক মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। উপস্থাপনায় তিনি লিবিয়া ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের উদাহরণ তুলে ধরেন।

কর্মশালার শুরুতে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন দেশের ডিএনএ ও ফরেনসিক সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, চিকিৎসক ও ফরেনসিক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি ও অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।

আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মৃতদেহ শনাক্তকরণ (দুর্যোগে নিহত ব্যক্তি শনাক্তকরণ), নিরপেক্ষ ফরেনসিক প্রতিবেদন তৈরির কৌশল, মানবাধিকার সংরক্ষণে তদন্তকারীদের নৈতিক ও পেশাগত দিকনির্দেশনা এবং বাস্তব ক্ষেত্রভিত্তিক কেস স্টাডি উপস্থাপন।

বিশেষ অধিবেশন পরিচালনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ আরা, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জান্নাতুল হাসান এবং সিআইডির ডিএনএ বিশ্লেষক আহমেদ ফেরদৌস। তাঁদের আলোচনায় জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জও উঠে আসে।

সমাপনী দিনে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের তদন্তপ্রক্রিয়াকে আরও মানবিক, কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। সিআইডির প্রধান ভবিষ্যতে ফরেনসিক সক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সমাপনী বক্তব্যে মরিস টিডবল-বিন্‌জ বলেন, আইনবহির্ভূত মৃত্যুর তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রাম্যমাণ ডিএনএ পরীক্ষাগার, ঘটনাস্থলে মরদেহ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিআইডিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালা