সরকার নির্ধারিত ১৩৫০ টাকা বস্তা ফসফেট (টিএসপি) সার ১৮০০ থেকে ২১০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা বস্তা পটাস সার কৃষকদের কাছে ১৩০০ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের বিরামপুরে সার ডিলার ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এসব সার ডিলার ও ব্যবসায়ীদের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দিশেহারা বিরামপুরের সাধারণ কৃষক। 

সার সংকট দেখিয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে ডিলার ও সরকারি গুদামে। আবার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এক টাকা সারের দাম বেশি নিলে ঐ ডিলার বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। অথচ বেশি দামেই সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের।

উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলাকে বলা হয় শস্যভাণ্ডার। দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে এই জেলায়। কিন্তু সার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার বিরামপুর উপজেলার সাধারণ কৃষক। 

সরকার ফসফেট (টিএসপি) সারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সাড়ে ১৩০০ টাকা বস্তা এবং পটাস সার ১০০০ টাকা বস্তা। অথচ অসাধু সার ডিলার এবং সার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ফসফেট সার বিক্রি করছে ১৮০০ থেকে ২১০০ টাকা। আবার পটাস সার বিক্রি করছে ১৩০০ টাকা বস্তা। প্রতিবস্তা পটাস আর ফসফেট সার কিনতে কৃষকদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। 

উপজেলার ভেলারপার গ্রামের কৃষক মখছেদুল রহমান ও খাইরুস জামান বলেন, ‘‘ধান আর কপি চাষ করতে আমাদের ফসফেট সার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু সারের দোকানদার ঠিকমতো এই সার দিচ্ছে না। আবার দিলেও সাড়ে ১৩০০ টাকার ফসফেট সারের দাম নিচ্ছে ২০০০ টাকা করে। তারপরও তারা অনেক খেড়ি (রাগ) দেখায়। বলে নিলে নেও, না নিলে চলে যাও। এভাবে যদি আমাদের ঠকানো হয়, তাহলে চলবো কী করে? সরকার কি এ্যামার (এদের) কোন ব্যবস্থা নিবে না?”

উপজেলার হরিকৃষ্ঠপুর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান, মিজানুর ও রশিদ বলেন, সরকার সারের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে সেই মূল্যে আমরা সার পাচ্ছি না। সাড়ে ১৩০০ টাকার ফসফেট সার আমরা কিনছি ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা বস্তা। সার ব্যবসায়ীরা আমাদের চিপাবাঁশের ফাঁটায় আটকে রাখছে। তাদের ইচ্ছায় আমাদের চলতে হচ্ছে।

উপজেলার রোস্তমপুর ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক মইনুল ইসলাম হিরা বলেন, “আমি এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। সার পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে, এটা ডিলার ও ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট। ফ্যাসিবাদ পালিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা এইটা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৩৫০ টাকার ফসফেট সার মেইন ডিলাররা সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সাড়ে ১৯০০ টাকা দাম ধরছে। তাহলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কি দামে বিক্রি করবে?”

তিনি আরো বলেন, “১০৫০ টাকার এক বস্তা ডেপ সার ধরছে ১৫৫০ টাকা, ১০০০ টাকার পটাস ১৩০০ টাকা। এটা কি মগের মুল্লুক? প্রশাসনের মনিটরিং দরকার। বিরামপুরের নুর-ইসলাম, দিলীপ কুমার কুন্ডুসহ বিভিন্ন জন এসব সারের ডিলার। তাদেরকে ধরতে হবে।”

সার ডিলার দিলীপ কুমার কুন্ডু বলেন, “আমাদের সেলসেন্টার থেকে দাম কখনও বেশি নেওয়া হয় না। কেউ কেউ দুই এক বস্তা আমাদের নিকট থেকে সার ক্রয় করে লাভের আশায় কৃষকদের নিকট বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। তবে আপনারা এমন কোন রিপোর্ট করবেন না যেন কোন ডিলারের ক্ষতি হয়। একটুআধটু ভুল থাকতেই পারে।”

সারের দাম আপনার ডিলাররা কেন বেশি নিচ্ছে জানতে চাইলে বিরামপুর উপজেলার সার ডিলারের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নুর-ইসলাম বলেন, “কে কোথায় সারের দাম বেশি নিচ্ছে আমি জানি না। কিন্তু আমি এবং আমার ডিলাররা কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করে না। ফসফেট সার সরকারি মূল্য সাড়ে ১৩০০ টাকা এবং পটাস ১০০০ টাকা বস্তা বিক্রি করা হয়।”

কৃষকদের নিকট সার বিক্রি করা রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে বিএনপি'র এই নেতা বলেন, “রেজিস্ট্রার খাতা দেখার কোন রাইটস আপনার নেই। আপনি তা দেখতে পারেন না। এছাড়াও ইউএনও স্যার এবং কৃষি অফিসারের নিকট থেকেও আপনি রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে পারেন না।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি নিউজ করলে আমরাও বসে থাকব না। আমরাও অনেক দূর যেতে পারি। আমরাও দেখে নিব বলে হুমকি দেন উপজেলা বিএনপি’র এই সাংগঠনিক সম্পাদক।”

বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, “টিএসপি সারসহ কোন সারের মূল্য বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কোন ডিলার বা ব্যবসায়ী সারের মূল্য বেশি নেয়, তাহলে ঐ দোকান থেকে কৃষক আমাকে অবগত করলে আমি সেখানে গিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। টিএসপি সার সরকার নির্ধারিত ১৩৫০ টাকা বস্তা। এর এক টাকা বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা।”

ঢাকা/মোসলেম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় দ র ব যবস য় র ১৩০০ ট ক ১০০০ ট ক ক ষকদ র উপজ ল র ব যবস থ আম দ র সরক র ট এসপ

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ