ইংলিশ চ্যানেল জয়ের কীর্তি গড়লেন হাওর পাড়ের সাঁতারু হিমেল
Published: 9th, August 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা নিকলীর সন্তান নাজমুল হক হিমেল। সম্প্রতি আটলান্টিক মহাসাগরের ইংলিশ চ্যানেলে দীর্ঘ ৩৩.৪ কিলোমিটার পানিপথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ৩৭ বছর পর বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছেন সম্মান ও মযার্দা। তার এমন কীর্তিতে গর্বিত পরিবার ও দেশবাসী।
সারা বিশ্বের সাঁতারুদের কাছে ইংলিশ চ্যানেল একটি রোমাঞ্চের নাম। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া দুষ্কর। জেলিফিস, ঠান্ডা পানি ও প্রাকৃতিক বৈরিতার পাশাপাশি ব্যয়ও অনেক। বাংলাদেশির মধ্যে ব্রজেন দাস ও মোশাররফ হোসেন খান ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। ৩৭ বছর পর তাদের পথ ধরেই সে কাজটি করে দেখালেন কিশোরগঞ্জ নিকলী উপজেলার হাওর পাড়ের ছেলে নাজমুল হক হিমেল। ৩৩.
১৯৯৭ সালে বাবা আবুল হাসেমের মাধ্যমে সাঁতারে হাতেখড়ি হিমেলের। আবুল হাসেমে ছিলেন ১৯৮০-এর দশকের জাতীয় সাঁতারু। জাতীয় সুইমিং ফেডারেশনের সাবেক সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী সুইমিং ক্লাবের কোচ তিনি।
আবুল হাসেমে বলেছেন, “হিমেলের আত্মবিশ্বাস ছিল এবং সে সেটি করে দেখিয়েছে। তবে, তার জন্য হিমেলকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ইংলিশ চ্যানেল আটলান্টিক মহাসাগরে। সেখানকার তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু, হাওরের তাপমাত্রা অনেক বেশি, তাই হিমেল ড্রামের ভেতর বরফ দিয়ে সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছিল। এভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছে সে।”
নিকলী সাঁতার দলের প্রশিক্ষক জুবায়ের বলেছেন, “হিমেল ভাই আমাদের তথা এই দেশের গর্ব। তাকে দেখেই নতুন প্রজন্ম সাঁতারু হতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। আমরা ছোটবেলায় বাড়ির পেছনে হাওরের সুয়াইনজান নদীতে সাঁতার কেটে বড় হয়েছি। নিকলী সুইমিং ক্লাব থেকে আমরাও ছোট-বড় প্রায় ২০০ ছেলে-মেয়েকে সাঁতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের মধ্যে থেকেও অনেকে জাতীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছে। ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে থেকে আরো হিমেল তৈরি হবে এবং বিশ্বজয় করবে, তেমনটাই প্রত্যাশা করছি।”
হিমেলের বড় ভাই এনামুল হক রুবেল বলেন, “১৯৮৯ সালে কিশোরগঞ্জের নিকলীর মীরহাটি গ্রামে জন্ম হিমেলের। চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় হিমেল। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমাদের বেড়ে ওঠা। অনেক সংগ্রাম করে আমাদের পথচলা। হিমেলের এমন অর্জনে আমরা আবেগাপ্লুত।”
হিমেলের বন্ধুমহল ও এলাকাবাসীরা বলেছেন, নিকলী হাওরে জন্ম নিয়ে ছোট ছোট অর্জনগুলো আজ হিমেলের জন্য বড় অর্জন বয়ে এনেছে। এতে অনেক খুশি ও গর্বিত আমরা। তবে, এত এত সাতারু নিকলী থেকে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনলেও এখানে কোনো সুইমিং পুল নেই। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি এটি। প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার অনুরোধ করছি।
নাজমুল হক হিমেল লন্ডন থেকে মুঠোফোনে রাইজিংবিডি ডটকমকে জানিয়েছেন, তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাঁতার শেখা শুরু করেন মো. সোলায়মানের কাছে। তারপর জাপানি কোচ ও সর্বশেষ চীনা কোচের অধীনে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন সাঁতারু হিসেবে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সালে সাঁতারের বিভিন্ন ইভেন্টে তার ঝুঁলিতে এসেছে ২৬টি স্বর্ণ ও ২১টি রৌপ্য পদক। বয়সভিত্তিক সাঁতারেও গড়েছেন ছয়টি জাতীয় রেকর্ড। এ পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যায় নয়, এগুলো একেকটি অধ্যায়, একেকটি লড়াইয়ের গল্প।
তিনি বলেন, “ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন ছিল। যখন সেটি জয় করতে পেরেছি, তখন সকল ক্লান্তি শেষ হয়েছে। এ আনন্দ বা অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানা মজুমদার মুক্তি জানিয়েছেন, নিকলীতে কোনো সুইমিং পুল নেই। উপজেলা পরিষদের পুকুরেই এখানকার ছেলেরা সাঁতার শিখছে। হিমেলের বিজয় বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকার সম্মান ও হাওর এলাকার সুনাম বাড়িয়েছে। আমরা জানি, হিমেলের সাঁতারু হয়ে ওঠার পথ মসৃণ ছিল না। আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমে সে বিশ্ব জয় করেছে। তার পথ ধরেই হাওরে আরো খ্যাতিমান সাঁতারু তৈরি হবে, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে খুব দ্রুতই আমরা সাতারুদের সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেব। ইতোমধ্যে সুইমিং পুল নির্মাণে ৪ একর জায়গা নির্ধারণ করেছি। এটা বাস্তবায়ন হলে নিকলীতে আরো অনেক হিমেল তৈরি হবে।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক শ রগঞ জ ম ল হক আম দ র র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে