যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাসের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে চমৎকার ছবিটি প্রকাশ করেছে। এ ধূমকেতুটি এসেছে আমাদের সৌরজগতের বাইরের এক নক্ষত্রমণ্ডল থেকে। ৭ আগস্ট নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইসা) হাবল টেলিস্কোপের তোলা এই অভূতপূর্ব ছবিগুলো প্রকাশ করেছে।

ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা এ ধূমকেতুটি গত মাসে চিলির এক শক্তিশালী টেলিস্কোপে প্রথম ধরা পড়ে। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মাত্র তৃতীয় আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু, যা আমাদের সৌরজগৎ অতিক্রম করছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, এর বরফমণ্ডিত কেন্দ্র বা আইসি কোরের ব্যাস ১০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে। কিন্তু হাবলের নিখুঁত পর্যবেক্ষণ বলছে, এর আকার ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটারের বেশি নয়।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অক্টোবরের শেষ দিকে এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাবে। তবে চিন্তার কিছু নেই, তখন এটি পৃথিবী থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবে। অবশ্য ধূমকেতুটি কোথা থেকে এসেছে বা কী দিয়ে তৈরি, তা নিয়ে এখনো গবেষণা করে যাচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ দলের প্রধান ডেভিড জুয়িট বলেন, এখন অবধি কেউ জানে না যে ধূমকেতুটি কোথা থেকে এসেছে। এটি রাইফেল থেকে নির্গত বুলেটের গতি পর্যবেক্ষণ করার মতো। সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ের তথ্য দিয়ে ধূমকেতুটির প্রাথমিক যাত্রার ইতিহাস অনুধাবন প্রায় অসম্ভব।

সূত্র: এনডিটিভি, লাইভ সায়েন্স

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে লুকিয়ে আছে জীবনের রহস্য

নাসার ওসিরিস-রেক্স মিশন বেন্নু গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে। সেই নমুনাতে জীবনের বিল্ডিং ব্লক বা মূল উপাদান শনাক্ত করেছেন জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়োশিহিরো ফুরুকাওয়ার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বেন্নু গ্রহাণুর নমুনা বিশ্লেষণ করে রাইবোজ ও গ্লুকোজের উপাদানের পাশাপাশি নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ পলিমারের সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়া সুপারনোভা ধূলিকণার উচ্চ ঘনত্বের গঠন পরিবেশ ও আমাদের প্রাথমিক সৌরজগতের বিভিন্ন প্রিসোলার পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে গ্রহাণুটিতে, যা আদিম জীবনের রাসায়নিক উৎস সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে।

নাসার ওসিরিস-রেক্স মিশন বেন্নু গ্রহাণুর অক্ষত নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে। সেই নমুনা বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক সৌরজগৎ ও জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির নমুনা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন। বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে থাকা আণুবীক্ষণিক কণা আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশীকে রূপদানকারী প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সরবরাহ করছে। এসব উপাদান জীবনের উত্থানে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

নেচার জিওসায়েন্সেস ও নেচার অ্যাস্ট্রোনমি সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে ডিওক্সিরাইবোজ শনাক্ত করা যায়নি। এটি ইঙ্গিত করে প্রাথমিক সৌরজগতে রাইবোজ আরও বেশি প্রচলিত ছিল, যা আরএনএ ওয়ার্ল্ড ধারণাকে সমর্থন করে। ফলে জীবনের প্রথম অণু তথ্য সংরক্ষণ ও জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়া উভয়ের জন্যই আরএনএর ওপর নির্ভরশীল ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে একটি অস্বাভাবিক আঠার মতো উপাদানও শনাক্ত করা হয়েছে।

মহাকাশের কোনো শিলায় আগে কখনো এ ধরনের উপাদান দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, জৈবপদার্থটি সম্ভবত বেন্নুর মূল গ্রহাণুর প্রাথমিক উত্তাপের সময় গঠিত হয়েছিল। এই প্রাচীন স্পেস গাম নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন-সমৃদ্ধ পলিমার-সদৃশ যৌগ দিয়ে গঠিত, যা একসময় নরম ও নমনীয় ছিল কিন্তু শত শত কোটি বছর ধরে শক্ত হয়ে গেছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে লুকিয়ে আছে জীবনের রহস্য