ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার (৮ আগস্ট)। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল লুটপাট হওয়া পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গত এক বছরে সরকারের সদিচ্ছা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে পুঁজিবাজার থেকে হারানো আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাজারে যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছিল, সেটা স্বস্তিকর অবস্থায় আসছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষপটে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আগ্রহের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এটি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্থিক পারফরম্যান্স, সুশাসন ও জবাদদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ। পুঁজিবাজারের সঙ্কট দীর্ঘদিনের, সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত, কার্যকরী ও যুগোপযোগী সংস্কার। বর্তমান প্রেক্ষপটে এর বাস্তবায়ন পুরোপুরি দৃম্যমান না হলেও সরকার, বিএসইসিসহ সকল অংশীজনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আর সমন্বিত এ প্রচেষ্টার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পুঁজিবাজারে।

প্রায় দুই মাসের বেশি মাস ধরে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে। এই সময়কালে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় ছিল। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাজারের এ চিত্রকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় দেশে পুঁজিবাজার কয়েক দিন বেশ উজ্জীবিত ছিল। যদিও তার কয়েক দিন পর সেই প্রত্যাশায় ছেদ ঘটেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দীর্ঘ ৯ মাস পর চলতি বছরের ১১ মে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজার নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বিএসইসি, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন কাজ করে যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগে অর্থনীতির কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়েছে এবং ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। এর মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল পুঁজিবাজার। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার।

এক বছরের পুঁজিবাজার বিশ্লেষণ
অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা, বিএসইসির বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ, সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে প্রায় তিন মাস বাজার ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি বছরের গত ৩ আগস্ট সূচকের বড় উত্থানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আবারো সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়িয়ে ৫ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। সেই সঙ্গে লেনদেনও ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা অতিক্রম করে।

গত বছরের ৭ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে। আর ড.

ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের দিন অর্থাৎ ৮ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। এর পরের দিন ৯ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৯১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৫ পয়েন্টে। পরবর্তীতে ১৯ আগস্ট পুনর্গঠিত বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের দায়িত্ব নেয়ার দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্টে। তবে ধারাবাহিক পতনের কারণে ওই সময় থেকে চলতি বছরের ২৮ মে পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক কমে অবস্থান নেয় ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে। তবে সরকারের সহযোগিতা ও বিএসইসির নানামুখী উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার। এরই ধরাবাহিকতায় চলতি বছরের ৭ আগস্ট অর্থাৎ গত আড়াই মাসের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে।

ফলে এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ২১০ পয়েন্ট। তবে গত আড়াই মাসের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৭৯৩ পয়েন্ট।

পুঁজিবাজার সংস্কারে বিএসইসির গৃহীত পদক্ষেপ
বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে মোটা দাগে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো—
পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং আস্থা ফেরাতে অনিয়ম-কারসাজি-দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে ১২টি কার্যপরিধি দেয়া হয়েছিল। বর্ধিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তারা সম্পূর্ণ প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছেন।

পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিশেষ পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সকে ১৭টি কার্যপরিধি দেয়া হয়। ইতোমধ্যে তারা ৩টি বিষয়ের উপর চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছেন।

পুঁজিবাজারে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তদন্তের ভিত্তিতে নানান অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিশেষ করে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন হিসেবে জরিমানা করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে এ কমিশন।

ইন্টারন্যাশনাল প্রাকটিস অনুযায়ী সেকেন্ডারি মার্কেটে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হয়েছে, যাতে বাজার নিজ গতিতে চলতে পারে। তবে কোনো অভিযোগ বা ম্যাল প্রাকটিস বা মিস কনডাক্ট হলে তখন তদন্ত করে দেখবে বিএসইসি।

এছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যেকোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়েছে কমিশন। পুঁজিবাজারের নানাবিধ সমস্যা দ্রুত সমাধান ও প্রণোদনা বা সহায়তা পেতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে কমিশন। পুঁজিবাজারে ভালো মানের মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি আনার লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে এবং দেশের রেগুলেটরগুলোর মধ্যে ইন্টারকানেকশন ও কো-অর্ডিনেশন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরকে মূল্যায়ন করতে হলে আমি শুরুতেই বলব, বিগত ১৬ বছরের যে ঘটনাগুলো ছিল সেটা নতুন করে এই বছরে নেই। এটা একটা বিষয় এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যে বার্তা নির্দেশনা আসছে, এর আগে কোনো রাষ্ট্র প্রধানের কাছ থেকে এ রকম সুনির্দিষ্ট বার্তা নির্দেশনা আসেনি। এবার বাজেটে আমরা পুঁজিবাজার যে ধরনের সুবিধাগুলো পেয়েছি, বিগত বছরের সুবিধাগুলো চাওয়া হতো কিন্তু পাওয়া হতো না। এটা একটা পজিটিভ দিক। আবার অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্দেশনা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আপনি খেয়াল করে দেখবেন, সম্প্রতি বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, পিডিবির চেয়ারম্যান এবং ডেসকোর চেয়ারম্যান মিলে জয়েন্ট মিটিং করেছেন সরকারি কোম্পানিগুলোকে কীভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায়। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য জরিমানা করা হয়েছে। আমি যদি বলি এগুলো সবগুলো ভালো দিক।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন বলেন, “এছাড়া তারা (বিএসইসি) এখন অনেক কিছুই ডিসক্লোজার করছে ট্রান্সপারেন্ট পদ্ধতিতে, যেটা আমি পজিটিভ বলব। এখন ওয়েবসাইটে এমনভাবে তথ্য দেয়া আছে, যে কেউ ওয়েবসাইটে গিয়ে খুব সহজেই বুঝতে পারবে কী কী ঘটেছে বা কী কী ইনফরমেশন আছে। আমি যদি বলি ডিসক্লোজার বা অন্যান্য তাদের প্রচেষ্টা সব মিলিয়ে আগানো। আমি এক বছরে মূল্যায়ন করতে গেলে ক্লিয়ারলি বলি, দুঃশাসনের চেয়ে সুশাসন এগিয়ে রয়েছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কিন্তু দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই দুর্নীতির বিপক্ষে বিচার হবে এবং জরিমানা করা হয়েছে অলরেডি। এ জরিমানাগুলো আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এর আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিস্ট আসত কিন্তু কারো পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হতো না। এই ব্যবস্থাগুলো নিলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও তাদের প্রতি আস্থাশীল হচ্ছে। নতুন করে অনৈতিক কাজে কেউ করার সাহস পাবে না।’’

এই বিশ্লেষক আরো বলেন, ‘‘আর চলতি বছরের জুন মাসে পুঁজিবাজারে লেনদেন ছিল ২৫০ কোটির ঘরে, সেখানে এখন লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। এটা নিশ্চই একটা সুফল। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার কমার কারণে এই সুবিধাটা পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার মুভ করছে। এখন ব্যক্তি কেন্দ্রে কোনো কিছু হচ্ছে না। আগে যেমন অমক ভাই, তমক ভাই ছিল, এখন বাজারে কোনো ভাই নেই। এখন বাজার সবার।’’

তিনি আরো বলেন, “খারাপ দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- তারা (বিএসইসি) যেহেতু রিফর্মের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা নতুন করে আইপিও আনার চিন্তা করেনি। সেক্ষেত্রে তারা একটি কাঠামোর মাধ্যমে নতুন আইপিও আনার কথা ভাবতে পারত। আবার বিএসইসির কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে  তাদের যে বিষয়টা ঘটেছে, সেটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়, যেটা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গেলে এই বিষয়গুলা বিবেচনা করতে হবে, ভুল-ত্রুটি যেটাই থাক; এটাকে একটা সীমাবদ্ধতার ভিতরে মিটমাট করে ফেলা উচিত ছিল।’’

আল-আমিন বলেন, ‘‘এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীলতার পথে অবশ্যই রয়েছে। এছাড়া আগে যেমন অস্বস্তিকর বাজার ছিল, এখন সেটা ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বস্তিকর রূপ নিয়েছে।”

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমার মতে, গত এক বছরে কিছু অর্জন অবশ্যই আছে। আমরা রিফর্ম চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা এখনো পুরোপুরি আসেনি। যত তাড়াতাড়ি আসবে ভেবেছিলাম, তত তাড়াতাড়ি সেটা হয়নি। এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। আর অর্জনের কথা যদি বলি, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে মার্কেটে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এটা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা যথেষ্ট পরিমাণ উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের যে একটা বাজে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। পুঁজিবাজারে আমরা আস্থা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিলাম, সেই আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন কবে হবে সে ঘোষণাটা আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি। নির্বাচন সম্পন্ন হলে আমরা আশা করি, একটা স্থিতিশীল সরকার আসবে। সেইসঙ্গে একটা দীর্ঘ মেয়াদি প্ল্যানিং ও রোড ম্যাপ দিবে, যা স্টক মার্কেটকে কীভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের আশা। বর্তমান পুঁজিবাজারের গতিবিধি দেখে ইতিবাচক প্রবণতা মনে হচ্ছে। এটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই।”

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দুটি কাজ হাতে নেয়। একটি হলো, অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন, আরেকটি হলো- টাক্সফোর্স গঠন। এর মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি তাদের দেয়া ১২টি বিষয় তদন্ত করে বিএসইসিতে জমা দিয়েছে। সেটার এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন চলমান রয়েছে। আর টাক্সফোর্সকে সংস্কারের জন্য যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা ও মার্জিন রুলসের বিষয়ে সুপারিশ জমা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কমিশন কাজ করছে এবং সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই রুলসগুলো পাবলিক অপিনিয়নের জন্য প্রকাশ করা হবে। এ সংস্কারের মূল লক্ষ্য পুঁজিবাজারের সুশাসন যথার্থ করা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যাতে মার্কেটটা সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়। মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজদের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ করা হয়েছে, সেখানে বিএসইসির অযাচিত কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আর কমিশন কোনো জায়গায় ছাড় দিচ্ছে না। যারা ফাউল প্লে করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়া সূচক বাড়া বা কমার বিষয়ে বিএসইসি কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে পুঁজিবাজারে সুশাসন ও আস্থা বাড়ায় পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।”

গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেটের সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, “অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীলতার পথে এগুচ্ছে। সবাই সম্মিলিতভাবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে ভালো কিছু হবে।”

ঢাকা/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত রক স স থ র ব যবধ ন ব এসইস র গত বছর র র লক ষ য অবস থ ন সরক র র পদক ষ প এক বছর আম দ র র জন য ল নদ ন ত কম ট ন তর ব ক জ কর তদন ত জ করছ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইর তদন্তের জালে ‘অ্যাগ্রো অর্গানিকা’

পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাটফর্মে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। 

গত ২৯ মে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানিটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা প্রসপেক্টাস ও বিধি-বিধান অনুযায়ী করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এসএমই প্লাটফর্মে প্রায় তিন বছর আগে কোম্পানিটির লেনদেন চালু হলেও এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে আরো ৯টি নির্দেশনা সাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রমে নতুন নির্দেশনার বিষয়টি অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন ওই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির পরিদর্শনের নির্দেশ
গত ২৯ মে ২০২৫ তারিখে চিঠির মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির কার্যক্রম পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। তাতে বলা হয়, এ বিষয়ে পূর্ববর্তী নির্দেশনার সঙ্গে কোম্পানিটির পরিদর্শন কার্যক্রমে আরো ৯টি শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলো। অতএব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস-২০২০ এর রুল ১৭ এর অধীনে কমিশনের পরিদর্শন, তদন্ত এবং তদন্ত বিভাগে একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এছাড়া আরো একটি চিঠিতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধির বিষয়ে বিএসইসি জানিয়েছে, অ্যাগ্রো অর্গানিকার পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আরো ৩০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে, যা ১৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে ডিএসই
কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসি যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা প্রসপেক্টাস ও বিধান অনুসারে হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

কিউআইও এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রসপেক্টাস এবং কমিশনের সম্মতিপত্র অনুসারে ব্যবহার করে সময়ে সময়ে রিপোর্ট করা হয়েছে কি না, তা আর্থিক প্রতিবেদনে যাচাই করা করতে হবে।

অল্প পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যয় ছাড়া সব লেনদেন ব্যাংকে হয়েছিল কি না ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ যাচাই করতে হবে।

সেই সঙ্গে কমিশনের সম্মতিপত্রের ২৬ নম্বর শর্ত অনুসারে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্য এবং সময় সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি নিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

কোম্পানিটি এসএমই প্ল্যাটফর্মে ৩ বছর আগে লেনদেন চালু করেছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি, যার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে।

অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকলে তা যাচাই করতে হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “লভ্যাংশের বিষয়টি উচ্চ আদালতে মামলাধীন রয়েছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা হচ্ছে না।”

পরিদর্শন কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ডিএসই ইতিমধ্যে তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। নতুন করে পরিদর্শেনর বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি।”

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কি না, সে তথ্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে নেই। একই সঙ্গে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্যর (এনএভিপিএস) তথ্যও পাওয়া যায়নি।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসিকে ২০২৩ সালের ৩১ মে পুঁজিবাজার থেকে কিউআইও এর মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কোম্পানিটির প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, যার মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এর মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩৩ লাখ। 

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৬.৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫০.৫৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১২.৭০ টাকায়।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো শেয়ারের দরপতনে কমল সূচক ও লেনদেন
  • পুঁজিবাজার আধুনিকায়নে কাজ করবে এডিবি ও বিএসইসি
  • ডিএসইর তদন্তের জালে ‘অ্যাগ্রো অর্গানিকা’
  • ডিএসইর উদ্যোগে বন্ধক রাখা শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণ কর্মশালা