যেভাবে গড়ল ইসলামি জ্ঞানচর্চার অর্থনৈতিক ভিত্তি
Published: 10th, August 2025 GMT
বাগদাদের দজলা নদীর তীরে, একটি মাদরাসার চত্বরে বসে আছে শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে কলম আর কাগজ, অপলক তাকিয়ে আছে সামনে শিক্ষকের মুখের দিকে। শিক্ষক, একজন প্রখ্যাত ফকিহ, কোরআনের তাফসির ব্যাখ্যা করছেন। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন—কেউ নিশাপুর থেকে, কেউ দামেস্ক থেকে। তাদের থাকার জায়গা, খাবার, এমনকি কাগজ-কলমের খরচও বহন করছে একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান, যা একজন ধনী বণিক বা শাসক দান করেছেন। এই দৃশ্য ইসলামি সভ্যতায় শিক্ষাবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিক রূপের একটি প্রতিচ্ছবি।
এই পর্বে আমরা শিক্ষাবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ, ওয়াকফের ভূমিকা এবং এর বিভিন্ন রূপ নিয়ে আলোচনা করব। নিজামিয়া মাদরাসার মতো প্রতিষ্ঠান কীভাবে শিক্ষাবৃত্তিকে একটি সংগঠিত রূপ দেয়, তাও আমরা দেখব।
বাগদাদের মুস্তানসিরিয়া মাদরাসার ওয়াকফের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০০,০০০ স্বর্ণ দিনার, যা আজকের হিসেবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।শিক্ষাবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ: মাদরাসা ও মসজিদইসলামের প্রথম শতাব্দীতে শিক্ষা মূলত মসজিদকেন্দ্রিক ছিল। মদিনার মসজিদে নববী, মক্কার মসজিদুল হারাম এবং দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ ছিল জ্ঞানচর্চার প্রধান কেন্দ্র। তবে সভ্যতার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার চাহিদা বাড়ে এবং মাদরাসা নামে স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই মাদরাসাগুলো শুধু ধর্মীয় শিক্ষাই নয়, ফলিত বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতো বিষয়ও শেখাত।
বাগদাদের মুস্তানসিরিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয় ১২৩৩ খ্রিষ্টাব্দে। এই মাদরাসা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবৃত্তির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই মাদরাসার জন্য বিপুল ওয়াকফ বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা শিক্ষকদের বেতন, শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া এবং শিক্ষা সামগ্রীর খরচ মেটাত।
ইমাম আয-যাহাবি (মৃ.
নিজামিয়া মাদরাসা, যা ১০৬৮ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত হয়, শিক্ষাবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিক রূপের আরেকটি মাইলফলক। সেলজুক মন্ত্রী নিজামুল মুলক (মৃ. ১০৯২ খ্রি.) এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যার শাখা বাগদাদ, নিশাপুর, ইসফাহান, মার্ভ ও বলখের মতো শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
এই মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, থাকার ব্যবস্থা এবং নিয়মিত ভাতা প্রদান করত। ইমাম আল-গাযালি (মৃ. ১১১১ খ্রি.) এই মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে এখানে শিক্ষকতাও করেন, যা তার জ্ঞানভিত্তিক অবদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। (আল-সুবকি, তাবাকাত আশ-শাফিইয়্যা, খণ্ড ৪, পৃ. ১০১, কায়রো: দারুল মা’আরিফ, ১৯৬৪)
নিজামিয়া মাদরাসা শিক্ষাকে একটি সংগঠিত, রাষ্ট্রপৃষ্ঠপোষিত ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করে, যা ইসলামি সভ্যতার জ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির জন্য মেরুদণ্ড হয়ে ওঠে।
ওয়াকফ থেকে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া, শিক্ষকদের বেতন এবং শিক্ষা সামগ্রীর খরচ মেটানো হতো। ওয়াকফের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি শুধু ধনীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারতেন।ওয়াকফ: শিক্ষাবৃত্তির অর্থনৈতিক ভিত্তিইসলামি শিক্ষাবৃত্তির সাফল্যের পেছনে ছিল ওয়াকফ বা ধর্মীয় উইল। ওয়াকফ ছিল এমন সম্পত্তি বা আয়, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বা দরিদ্রদের কল্যাণে চিরস্থায়ীভাবে দান করা হতো। এই ওয়াকফ থেকে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া, শিক্ষকদের বেতন এবং শিক্ষা সামগ্রীর খরচ মেটানো হতো। দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের ‘কুব্বাত আয়েশা’ নামে একটি বিশেষ কক্ষ ছিল, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য বই ও অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী সংরক্ষণ করা হতো। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খণ্ড ৮, পৃ. ২৩৪, বৈরুত: দারুল ফিকর, ১৯৮৮)
ওয়াকফের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি শুধু ধনীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারতেন। বাগদাদের হানবালি ফকিহ মাজদুদ্দিন উবায়দুল্লাহ ইবনে আলি (মৃ. ১২০৩ খ্রি.) ‘দারুল ইলম’ নামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং এটি শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াকফ করেন। (ইবনে আল-নাজ্জার, তাতিম্মা যাইল তারিখ বাগদাদ, খণ্ড ৩, পৃ. ১৫৬, বাগদাদ: দারুল কুতুব, ১৯৩৫)
এই ওয়াকফগুলো শিক্ষাকে একটি সর্বজনীন অধিকারে পরিণত করে।
ওয়াকফের আরেকটি উদাহরণ হলো ফিরোজাবাদের (বর্তমান ইরান) দারুল কুতুব, যা বুয়াইদ মন্ত্রী বাহরাম ইবনে মাফিন্না (মৃ. ১০৪৩ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রন্থাগারে ১০,০০০ পাণ্ডুলিপি ছিল, যার মধ্যে ৪,০০০ ছিল বিখ্যাত খাত্তাত ইবনে মুকলা (মৃ. ৯৩৯ খ্রি.)-এর হস্তলিপিতে তৈরি। (সিবত ইবনে আল-জাওযি, মিরআত আয-যামান, খণ্ড ৮, পৃ. ৪৫৬, দামেস্ক: দারুল মুস্তফা, ১৯৮৪)
এই গ্রন্থাগার শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল, ফলে জ্ঞানচর্চা সেখানে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়।
শিক্ষাবৃত্তির বিভিন্ন রূপইসলামি শিক্ষাবৃত্তি শুধু ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে, যেমন:
১. একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পুরস্কার: শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আর্থিক পুরস্কার পেতেন। আইয়ুবি শাসক মুআযযাম ঈসা ইবনে আল-আদিল (মৃ. ১২২৭ খ্রি.) দামেস্কে শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। যারা যামাখশারি (মৃ. ১১৪৩ খ্রি.)-এর আল-মুফাসসাল ফি ইলম আল-আরাবিয়্যা পড়ে শেষ করতেন, তারা ১০০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) পেতেন এবং মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ-শাইবানি (মৃ. ৮০৫ খ্রি.)-এর আল-জামি আল-কাবির পড়লে পেতেন ২০০ দিনার। (আল-যাহাবি, সিয়ার আলাম আল-নুবালা, খণ্ড ১২, পৃ. ৫৬৭, বৈরুত: মুআসসাসাত আল-রিসালা, ১৯৮৫)
আরও পড়ুনইমাম গাজালি ও তাঁর শিক্ষাদর্শন০৭ জুন ২০২১সতেরো শতকের তিলিয়া কোরি মাদরাসা, সমরকন্দ, উজবেকিস্তানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র জন য ম দর স র র জন য ব মসজ দ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
নিশোর সঙ্গী নাবিলা!
জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো ও নির্মাতা ভিকি জাহেদ আবারো ফিরছেন নতুন গল্প নিয়ে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-তে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাদের নতুন সিরিজ ‘আকা’। এই সিরিজে যুক্ত হয়েছেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। ওটিটিতে এটাই তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাজ।
গত কয়েক মাস ধরে গুঞ্জন উড়ছে, বড় পর্দায় অভিষেকের পর নিশো আবারো ফিরছেন ওটিটিতে। অবশেষে সেই খবর সত্যি হলো। প্রায় তিন বছর পর ওটিটির জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন ‘সুড়ঙ্গ’ তারকা।
‘আকা’ নিয়ে নিশো বলেন, “আমি সিরিজটি নিয়ে আশাবাদী। দর্শক নিশ্চয়ই ভিন্ন স্বাদের কিছু পাবেন।”
আরো পড়ুন:
শাকিবের ‘তাণ্ডব’-এ বাজিমাৎ করলেন নিশো-সিয়াম!
কাঁধে কাঁধ মেলালেন শাকিব-নিশো, যা বললেন জয়
পরিচালক ভিকি জাহেদ বলেন, “আকা’ নির্মাণ আমার কাছে এক আবেগের যাত্রা। এটি আমার প্রথম সামাজিক থ্রিলার। দর্শকদের সঙ্গে এক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করেছি, প্রতিক্রিয়াই জানিয়ে দেবে সেটা কতটা সফল হয়েছে। নিশো ভাইয়ের সঙ্গে বহু কাজ করলেও সিরিজে এটাই প্রথম। নাবিলা আপুও দারুণ সহযোগী ছিলেন।”
প্রথম সিরিজ নিয়ে আশা ব্যক্ত করে নাবিলা বলেন, “আকা’ আমার জন্য বিশেষ একটি কাজ। প্রথম সিরিজ হিসেবে আমি খুব আনন্দিত। আশা করি, দর্শকরা শুধু আমার চরিত্র নয়, পুরো গল্পকেই আপন করে নেবেন।”
ন্যায়–অন্যায়, শোধ–প্রতিশোধ, সাসপেন্স ও রহস্যের মিশ্রণে নির্মিত হয়েছে ‘আকা’। ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে দৃশ্যধারনের কাজ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে হইচইয়ে সিরিজটি মুক্তি পাবে।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত