আশুলিয়ায় সাংবাদিককে মারধর-অপহরণের চেষ্টায় আটক ২
Published: 12th, August 2025 GMT
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টেলিভিশনের আশুলিয়া প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম অনিককে (২৯) মারধর ও অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে, গতকাল সোমবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ ঘটনায় আটক দুজন ও আশুলিয়ার বাইপাইল মন্ডলবাড়ী এলাকার মো.
আটকরা হলেন- নওগাঁর বদলগাছী থানার খাদাইল মিঠাপুর এলাকার মরহুম ওয়াহেদের ছেলে ইমন (৩২) এবং অন্যজন তার ভাই জাহিদ হাসান (২৬)।
ভুক্তভোগী মো. জাহিদুল ইসলাম অনিক (২৯) সাভারের রাজফুলবাড়ীয়ার জোড়পুল এলাকার বাসিন্দা। তিনি বেসরকারি সংবাদমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনের আশুলিয়া প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পেশাগত কাজ শেষে পল্লীবিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসায় ফিরছিলেন অনিক। পথে আশুলিয়ার পলাশবাড়ীর নবীনগর-চন্দ্রা মহাড়কের ডিভাইডারের কাছে পৌঁছলে ২ নম্বর অভিযুক্ত অজ্ঞাত একজনকে সঙ্গে নিয়ে দেশিয় অস্ত্রসহ ভুক্তভোগীর গতিরোধ করে তাকে গালিগালাজ করে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে ভুক্তভোগী ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি পার্শ্ববর্তী বাইপাইল ফল মার্কেটের কাছে পৌঁছালে ১ থেকে ৩ নম্বর অভিযুক্তসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন দুটি মোটরসাইকেল ও সাদা রংয়ের অজ্ঞাত একটি প্রাইভেটকারসহ এসে তাদের কাছে থাকা রামদা, হকিস্টিক ও কাঠের লাঠিসহ দেশিয় অস্ত্র দিয়ে ভুক্তভোগীর ওপর হামলা করে। এসময় তাকে এলোপাতাড়িভাবে কিল, ঘুষি, লাথি দিতে থাকে।
২ নম্বর বিবাদি তাকে রামদা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আঘাত ঠেকাতে গিয়ে তার দুটি আঙুল জখম হয়। এছাড়াও মাথার ডান পাশে ও চোখের নিচে আঘাত করে জখম করে। ভুক্তভোগীর পকেট থেকে চৌদ্দ হাজার দুইশ টাকাসহ মানিব্যাগে থাকা প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তাকে টেনে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়।
অপহরণের বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ডাকচিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে এবং হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেলসহ ২ নম্বর ও ৩ নম্বর অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) সফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সেইসাথে গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।’’
ঢাকা/সাব্বির/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ যত অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার আলমগীরের বিরুদ্ধে
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন জেলার তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ আলমগীর হোসেন (৪০)। আজ সোমবার ভোরে চন্দ্রগঞ্জ থানার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ইমাম উদ্দিন মিজি বাড়ির কাছ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আলমগীর হোসেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জিহাদীর সেকেন্ড ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুল আজীম নোমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় চারটি অস্ত্র মামলা, একটি হত্যা ও দুটি মাদক মামলা এবং চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অপহরণসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন।
আলমগীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানায়, নোমান ও রাকিব খুনের মামলায় অন্যতম আসামি আলমগীর হোসেন। ওই মামলায় তিনি ২০২৩ সালের ৯ মে গ্রেপ্তার হন। পরে উচ্চ আদালত থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আর আদালতে হাজিরা দেননি।
আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জিহাদীর বাহিনীতে যোগ দেন। কাশেম জিহাদী চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। নোমান ও রাকিব হত্যার ২৩ দিন পর জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আলমগীরের বিরুদ্ধে আজাদ হোসেন ওরফে বাবলু (২৫) নামের একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গত ২ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আজাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মাদক বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার বশিকপুর, চাটখিল ও আশপাশের এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বহুবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবিচাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোরশেদ আলম ভূঁইয়া আলমগীরের লোকজনের হাতে অপহরণের শিকার হন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ৩১ জুলাই তিনি ও তাঁর সহযোগী তারেক রহমানকে আলমগীর হোসেনের লোকজন অপহরণ করেন। রাত ১০টার দিকে শামসুল হুদা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছ থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরবর্তী সময় ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করা হয়।
মোরশেদ আলম আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পর পরদিন বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপহরণের সময় তাঁদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও তাঁরা তাঁর দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নয়তো জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করবেন, এই আশঙ্কা তাঁদের।