ছাত্রীর শরীরে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেওয়ার প্রস্তাব খুবি শিক্ষকের
Published: 12th, August 2025 GMT
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
ব্যক্তিগত প্রশ্ন, অশালীন প্রস্তাব, একান্ত সাক্ষাতের চাপ এবং যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই ডিসিপ্লিনের এক ছাত্রী।
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন তিনি।
আরো পড়ুন:
উপাচার্যের মায়ের মৃত্যুর কারণে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
রাকসুতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণা
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি মোছা.
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার কারণে নির্ধারিত সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারায় শিক্ষক ড. রুবেল আনসারের সঙ্গে কথা বলতে যান তিনি। এ সময় ওই শিক্ষক তাকে নানা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন এবং অস্বস্তিকর মন্তব্য করেন। ওই শিক্ষক বলেন ‘তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয়, আমি ফু দিয়ে ঠিক করে দেব।’ এছাড়া খুলনায় নতুন হওয়ায় তাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেন।
ভুক্তভোগীর দাবি, ওই শিক্ষক পরবর্তীতে বারবার তাকে মেসেজ দিয়ে একসঙ্গে বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে নিরালা মোড়ে দেখা করার সময় ওই শিক্ষক তাকে বলেন, ‘আমি তোমাকে চাই… যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে চায়।’ এছাড়া তিনি প্রস্তাব দেন, একটি পরিচিত বাসায় নিয়ে যাবেন, যেখানে অন্য কেউ থাকবে না।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী জানান, প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক গাড়ির ভেতর তার হাত চেপে ধরেন এবং বলেন, ‘আজ না হোক কাল তোমার সারা শরীরে আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই।’ এছাড়া তিনি ফলাফল বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভনও দেন।
এ ঘটনার পর থেকে ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ওই শিক্ষক অতীতেও এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলে আমি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার সাহস পাই।”
অভিযুক্ত শিক্ষক ড. রুবেল আনসার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা আমাকে একবার কল দিয়েছিলেন। সব শিক্ষার্থীই আমার কাছে সমান।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, “অভিযোগ ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের মাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এর বেশি মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
তদন্ত কমিটির প্রধান মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, “গত ৭ আগস্ট অভিযোগটি ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে দাখিল করা হয় এবং সেখান থেকে ১০ আগস্ট আমাদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রে আসে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত উভয়ের বক্তব্য নেব। প্রমাণ ও সাক্ষ্য যাচাই করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষতা ও গোপনীয়তা বজায় রেখে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করব।”
ঢাকা/হাসিবুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ন হয়র ন প রস ত ব আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা
মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।
নতুন জীবন নতুন সংগ্রামউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।
মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।
সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দেরমালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।
এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।
লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।
মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।
মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা