মিয়ানমারের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে গত এক বছরে নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি স্বাধীন তদন্ত দল। নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক শক, শ্বাসরোধ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়ার মতো বর্বরতা।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এই স্বাধীন তদন্ত দলের প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান দলের প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান। প্রতিবেদন গত ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য আছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই দেশটিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নের পর অনেকে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। দেশটির একটি বড় অংশজুড়ে এখনো সংঘর্ষ চলছে।

জাতিসংঘের এই তদন্ত দলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক কেন্দ্রগুলোর অভিযান পরিচালনায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি আটক যোদ্ধা ও তাঁদের সহযোগিতাকারী বেসামরিক মানুষকে যাঁরা বিচারের মুখোমুখি না করে হত্যা করেছে, সেই অপরাধীদেরও শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও তদন্তকাজ এগিয়েছে। এই অপরাধীদের মধ্যে রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়া এবং বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা।

প্রতিবেদনটিতে মিয়ানমারের বন্দিশিবিরগুলোতে হওয়া নির্যাতনের বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এর মধ্যে রয়েছে মারধর, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, শ্বাসরোধ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন অঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানা ধরনেরে যৌন সহিংসতা।

নিকোলাস কুমজিয়ান বলেন, মিয়ানমারে নারকীয় নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনা ও নির্মমতাকে প্রতিবেদনে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি দিনের জন্য কাজ করছি, যখন অপরাধীদের তাঁদের কৃতকর্মের জন্য আদালতে মুখোমুখি হতে হবে।’

নিকোলাস আরও বলেন, তাঁরা তদন্ত করতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই মিয়ানমারের আটক কেন্দ্রগুলোতে যে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা বেরিয়ে আসে।

তদন্তকারী দলটি রাখাইন রাজ্যের সম্প্রদায়গুলোর বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা নিয়ে নতুন তদন্ত শুরু করেছে। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিরোধী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে।

২০১৭ সালে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিজ দেশে নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত বছর রাখাইনে সংঘর্ষের তীব্র আকার ধারণ করলে আরও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধীন ২০১৮ সালে গঠিত মিয়ানমার–সম্পর্কিত দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। তদন্তকারী এ সংস্থা রোহিঙ্গা–সংক্রান্ত মামলায় পাওয়া তথ্যপ্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।

ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:

১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।

২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।

৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।

৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
  • খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি