নির্বাচনের খবর দেশে-বিদেশে সব জায়গায় চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলেন। যেহেতু নির্বাচনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু দেশের উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশের বাইরের উদ্যোক্তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর ফল আজ আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি—জাপান থেকে বড় প্রতিনিধিদল এসেছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে।’

আজ বুধবার রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ফরেন ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’ বা বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলন। প্যানেল আলোচনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। বিনিয়োগকারী সম্মেলন আয়োজন করে ব্র্যাক–ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

আগামীর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। টাকা ছাপানো ও ঋণ নেওয়ার পরিবর্তে অর্থনীতিকে বিনিয়োগের পথে এগিয়ে নিতে হবে। বিনিয়োগই একমাত্র সমাধান। বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতি টেকসই করা সম্ভব নয়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ এবং মূলধন বাজারকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য মূলধন বাজারের বিকল্প নেই। এ সময় তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বিমানের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্মুক্ত করার পাশাপাশি মিউনিসিপ্যাল বন্ড কার্যকর করতে হবে। পৌরসভাগুলো লাভজনক উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে দেশ লাভবান হবে। সামাজিক খাত, অবকাঠামো বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিচালনা সম্ভব নয়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উদ্যোক্তাদের পণ্য ব্র্যান্ডিং, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও অর্থনৈতিক সমর্থন দিতে হবে। এতে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ঢাকা বা চট্টগ্রামে এসে বিক্রি করতে হবে না। ফলে বড় শহরের ওপর চাপও কমে যাবে। এভাবেই সৃজনশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল করা সম্ভব।

প্যানেল আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মো.

সাইফুদ্দিন, সিএফএ, কনটেক্সচুয়াল ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকাও হিরোসে ও এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই, সিএফএ। প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন (মডারেটর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ