নির্বাচনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে, উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন: আমীর খসরু
Published: 13th, August 2025 GMT
নির্বাচনের খবর দেশে-বিদেশে সব জায়গায় চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলেন। যেহেতু নির্বাচনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু দেশের উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশের বাইরের উদ্যোক্তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর ফল আজ আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি—জাপান থেকে বড় প্রতিনিধিদল এসেছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে।’
আজ বুধবার রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ফরেন ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’ বা বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলন। প্যানেল আলোচনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। বিনিয়োগকারী সম্মেলন আয়োজন করে ব্র্যাক–ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।
আগামীর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। টাকা ছাপানো ও ঋণ নেওয়ার পরিবর্তে অর্থনীতিকে বিনিয়োগের পথে এগিয়ে নিতে হবে। বিনিয়োগই একমাত্র সমাধান। বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতি টেকসই করা সম্ভব নয়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ এবং মূলধন বাজারকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য মূলধন বাজারের বিকল্প নেই। এ সময় তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বিমানের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্মুক্ত করার পাশাপাশি মিউনিসিপ্যাল বন্ড কার্যকর করতে হবে। পৌরসভাগুলো লাভজনক উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে দেশ লাভবান হবে। সামাজিক খাত, অবকাঠামো বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিচালনা সম্ভব নয়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উদ্যোক্তাদের পণ্য ব্র্যান্ডিং, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও অর্থনৈতিক সমর্থন দিতে হবে। এতে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ঢাকা বা চট্টগ্রামে এসে বিক্রি করতে হবে না। ফলে বড় শহরের ওপর চাপও কমে যাবে। এভাবেই সৃজনশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল করা সম্ভব।
প্যানেল আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা
মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।
নতুন জীবন নতুন সংগ্রামউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।
মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।
সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দেরমালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।
এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।
লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।
মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।
মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা