রাজশাহীতে যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা, গ্রেপ্তার ৮
Published: 26th, August 2025 GMT
রাজশাহীর আদালতে আসা এক যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অপহরণের শিকার সোহেল রানাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আটজনকে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আটক আটজন হলেন— নুর ইসলাম (২৭), মো. টিটু (৩০), সাজিদুর রহমান সাজিদ (২১), রাজন ওরফে কাওছার (২২), তারেকুল ইসলাম (৫৫), রেজা আলম (১৮), রাকিব মহসিন ওরফে রিয়াদ (২২) ও ওমর আলী (৫০)।
ভুক্তভোগী সোহেলের বাড়িও বাগমারার নরসিংপুর গ্রামে। ওমরের বাড়িও একই গ্রামে। বাকিদের বাড়ি রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সোহেল রানা মামলার বিষয়ে খোঁজ নিতে রাজশাহী আদালতে আসেন। আদালতের প্রধান ফটক থেকে তাকে অপহরণ করেন কয়েকজন ব্যক্তি। অপহরণকারীরা সোহেল রানার ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোনে কল করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ সময় সোহেলের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তার চিৎকার মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যদের শোনানো হয়। মুক্তিপণ না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।
সোহেল রানার স্ত্রী দ্রুত ঘটনাটি রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) জানান। পরে অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা আনার জন্য সোহেল রানার স্ত্রীকে রাজশাহী শহরের কোর্ট স্টেশনের জামাল চত্বরে যেতে বলেন। সোহেল রানার স্ত্রী সেই কথামতো সেখানে যান। ডিবি পুলিশও তাকে অনুসরণ করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মুক্তিপণের টাকা নিতে আসা নুর ইসলাম ও রাজন ওরফে কাওছারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ কের ডিবি জানতে পারে যে, সোহেলকে রাজশাহী শহরের মহিষবাথান উত্তর পাড়ার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে সোহেল রানাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অভিযানকালে সেখান থেকে অপহরণকারী চক্রের আরো পাঁচজন—টিটু, সাজিদুর, তারেকুল, রেজা ও রাকিবকে আটক করা হয়। তবে, ডিবির উপস্থিতি টের পেয়ে আরো কয়েকজন পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ঝাউতলা মোড় থেকে ওমর আলীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
পুলিশ কর্মকর্তা গাজিউর রহমান জানিয়েছেন, অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/কেয়া/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহরণ’, ফেনী থেকে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ
২০১৯ সালের ৭ মে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহৃত’ হয়েছিলেন কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদ (৪৬)। এরপর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের দাবি, আবদুল আহাদের মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের মুক্তিপণও দিয়েছিল তারা। তবে ফেরত পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত ছয় বছর পর গতকাল বুধবার আহাদের মরদেহ মিলেছে ফেনীতে।
পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আহাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের ধারণা ছিল, আহাদ দিনমজুরের কাজ করেন। তবে তাঁর পকেটে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আসল পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ পরিবারকে খবর দেয়।
নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার ভূইগাঁও ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো. ইমানি মিয়ার ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রথমে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
নিহত আহাদের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই চট্টগ্রামে একাই থাকতেন। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন। ২০১৯ সালের ৭ মে ভোরে তাঁর ভাবিকে মুঠোফোনে জানানো হয় ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীদের তাঁর ভাবি মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকাও দেন। তবে তাঁর ভাইকে ফেরত পাওয়া যায়নি।
নাঈমা নাসরিন দাবি করেন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবে দলীয় কোনো পদে ছিলেন না। তাঁর ভাইকে কেন অপহরণ করা হয়েছে, কেন গুম করা হয়েছে তাঁরা জানেন না। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
লাশ ফেনীতে কীভাবে এল, জানে না পুলিশ
নিহত আবদুল আহাদের ফেনীর ছাগলনাইয়া কীভাবে এসেছে, তা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এত দিন আহাদ কোথায় ছিলেন, এর কোনো ব্যাখ্যাও তাঁরা দিতে পারেনি। পুলিশের দাবি, আহাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা।
নিহত আহাদের ভাগনে মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের ঘটনার পর তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তবে তাঁর মামার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি চান।
জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম বলেন, নিহত কাস্টম কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে ছয় বছর আগে অপহরণের যে বিষয়টি জানানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।