গাজা যুদ্ধকে গণহত্যা বলার দাবিতে জাতিসংঘের ৫০০ কর্মীর চিঠি
Published: 28th, August 2025 GMT
গাজা যুদ্ধকে একটি ক্রমবর্ধমান গণহত্যা হিসেবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার (ওএইচসিএইচআর) ভলকার টার্ককে চিঠি দিয়েছেন তার অফিসের শত শত কর্মী।
বুধবার টার্কের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কর্মীরা মনে করেন যে গাজায় প্রায় দুই বছরের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে নথিভুক্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা, পরিধি ও প্রকৃতি গণহত্যার আইনি মানদণ্ড পূরণ হয়েছে।
৫০০ জনেরও বেশি কর্মীর পক্ষে স্টাফ কমিটির স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “গণহত্যার নিন্দা করার জন্য ওএইচসিএইচআরের একটি শক্তিশালী আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। একটি ক্রমবর্ধমান গণহত্যার নিন্দা জানাতে ব্যর্থতা জাতিসংঘ ও মানবাধিকার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করে।”
চিঠি প্রসঙ্গে ওএইচসিএইচআর এর মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, “গাজার পরিস্থিতি আমাদের সবার মূলকে নাড়িয়ে দিয়েছে।”
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইসরায়েল এর আগে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। চলতি মাসে জাতিসংঘের আওতাধীন একটি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো গাজায় দুর্ভিক্ষের উপস্থিতি ঘোষণা করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বারবার নিন্দা জানিয়েছেন ভলকার টার্ক।
চিঠির প্রতিক্রিায় টার্ক কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, “আমি জানি আমরা যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করছি তাতে আমরা সকলেই নৈতিক ক্ষোভের অনুভূতি শেয়ার করে নিচ্ছি, সেইসাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে অক্ষমতার মুখে হতাশাও প্রকাশ করছি।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)